অচেনা যাত্রী~৭ বাংলা সাহিত্যের প্রথম শ্রেণির বৈদ্যুতিন মাসিক ফেব্রুয়ারি ৫,২০১৪



সূচিপত্র
সম্পাদকীয়
প্রিয় পাঠঃ
নষ্ট আত্মার টেলিভিসন ।। ফালগুনী রায়
কবিতাঃ
টুথব্রাশে লেগে থাকা কবিতা~মলয় রায়চৌধুরী
মাসুদনামা~সুবীর সকার
বাঘ সংস্করণ *সিনেমা~ মাসুদার রহমান
জলে টলমল চাঁদ~ অমিতাভ দাশ
যাপন*জীবনী*গরিমা~সজল সমুদ্র
টব~বাপি গাইন
আমি নেই~ অরূপম মাইতি
গুঁড়ো গুঁড়ো অপূর্ণারমান * রাইসঙ্গ~সুমন মল্লিক
ভোর বেলা পাখি ডাকে~রেবা সরকার
ছোটগল্পঃ
লুনাটিক~শবরী রায়
সমুদ্র দর্শন ~অরবিন্দ দত্ত
ঠোঁটকাটাঃ
গুরুচন্ডালি~কুমারেশ পাত্র
তবু লালনমনঃ
একবার বাজাও তোমার দোতারাঃকুমারেশ পাত্র
উড়োচিঠিঃ
সেথা কেবলই এক বাড়ির কঙ্কাল~ কুমারেশ পাত্র
নাটকের খবরঃ
বনগাঁ নাট্যচর্চার নবম বার্ষিক নাট্যোৎসব~মৌলী রায়
বই রিভিউঃ
 'গণমাধ্যমে  শিশু-কিশোরেরা' (সম্পাদনা- মশিউর রহমান শান্ত)~নাফিজ আহসান
--------------------------------------------------------------------------------------
সম্পাদকঃআমিত কুমার বিশ্বাস
প্রচ্ছদঃবাবলু রায়
--------------------------------------------------------------------------------------

                                                সম্পাদকীয়ঃ
চারিদিকে কবিতার ছড়াছড়ি ।ফেসবুক  বিপ্লবে নব্য-কবিকুল বেশ উৎসাহিত ।লাইকের পর লাইক ।কমেন্টের পর কমেন্ট ।এখানেও দলবাজি । গলাবাজি ।যিনি লেখক তিনিই বা তেনারাই পাঠক ।বেশ !এখানে প্রকৃত পাঠক শঙ্কিত ।কমেন্টে হাটবে ?লাইকে হাঁটবে?ভালো কবিতা পড়ার জন্য ব্লগজিন-ওয়েবজিনে হাঁটবে,না হার্ড কপিই আজও শ্রেয় ?প্রযুক্তিকে তো আর বুড়ো আঙুল দেখানো যায়না ।অগত্যা কবিতা-অকবিতার বোমাবাজিতে পাঠককুলকে সঠিক পথ দেখানোর  প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করিনা,কারণ যিনি পাঠক তিনি পাঠকই ।নিজের যোগ্যতায় তিনি পাঠক ।কেবল তাদের কাছে  সঠিক সময়ে পৌঁছে যাওয়াটাই আমাদের দায় ।
        আমরা 'অচেনা যাত্রী'র ৬ টি সংখ্যাতে দারুন সাড়া পেয়েছি ।এবার আমাদের লিটিল ম্যাগাজিন  'দ্বৈপায়ন'-এর ('কারক' এর পরিবর্তিত নাম)বইমেলা সংখ্যা প্রকাশ করার চাপ থাকায় সঠিক সময়ে 'অচেনা যাত্রী~৭' প্রকাশ করতে পারিনি ,এ জন্য আমরা লেখক-পাঠককুলের কাছে  ক্ষমাপ্রার্থী ।'অচেনা যাত্রী~৭' এ  যুক্ত হল 'প্রিয় পাঠ' ,'ঠোঁটকাটা','তবু লালনমন' ও 'উড়োচিঠি'  নামক নিয়মিত বিভাগগুলি । এই বিভাগগুলির উপর  আপনাদের মতামত আশা করি ।
---------------------------------------------------------------------------------------------------------------

                                                              প্রিয় পাঠঃ
                          নষ্ট আত্মার টেলিভিসন ।। ফালগুনী রায়
......ঐ তার সঙ্গে আমার প্রথম ও শেষ দেখা ।তারপর কতজনের কাব্যগ্রন্থ বেরোল,হারিয়ে গেল ও পুরস্কৃত হল (এবং হল না),এডিশন হল (এবং হল না),কত কুয়াশাচ্ছন্ন প্রকাশক হাত নেড়ে বলে গেলেন,না না ,কবিতার বইয়ের সেল-টেল কিছু নেই !
            কিন্তু সবকিছুর উপরে আমাদের  এই লেন-দেন,দেওয়া-থোওয়া,পাওনা-গন্ডার সমাজ সাহিত্যের উপর ফালগুনী রায়ের  এই ভয়ঙ্কর বই আততায়ীর হাসির মতো আজও অম্লান ।কেউটের চোখের মতো নিষ্পলক তার নেশাতুর চাউনি..........
                  --------উৎপল কুমার বসু(প্রসঙ্গঃনষ্ট আত্মার টেলিভিসন)


নষ্ট আত্মার টেলিভিসন ।। ফালগুনী রায়
প্রথম প্রকাশ: ১৫ই আগষ্ট, ১৯৭৩
হাংরি জেনারেশন
প্রকাশক: বাসুদেব দাশগুপ্ত
(  মলয় রায়চৌধুরীর অনুমতিতে 'অচেনা যাত্রী'তে প্রকাশিত )


এইখানে
এইখানে সমুদ্র ঢুকে যায় নদীতে নক্ষত্র মেশে রৌদ্রে
এইখানে ট্রামের ঘন্টীতে বাজে চলা ও থামার নির্দেশ
এইখানে দাঁড়িয়ে চার্মিনার ঠোঁটে আমি রক্তের হিম ও ঊষ্ণতা
ছুঁয়ে উঠে আসা কবিতার রহস্যময় পদধ্বনি শুনি-শুনি
কবিতার পাশে আত্মার খিস্তি ও চীৎকার এইখানে
অস্পষ্ট কু-আশার চাঁদ এইখানে ঝরে পড়ে গনিকার ঋতুস্রাবে


এইখানে ৩২৩ খ্রীষ্টপূর্বাব্দের কোন গ্রীকবীর রমন বা ধর্ষণের
সাধ ভুলে ইতিহাসে গেঁথে দ্যায় শৌর্য ও বীর্য এইখানে
বিষ্ণুপ্রিয়ার শরীরের নরম স্বাদ ভুলে একটি মানবী থেকে মানবজাতির দিকে
চলে যায় চৈতন্যের উর্ধ্ববাহু প্রেম-সর্বোপরি
ইতিহাস ধর্মচেতনার ওপর জেগে থাকে মানুষের উত্থিত পুরুষাঙ্গ এইখানে


এইখানে কবর থেকে উঠে আসা অতৃপ্ত প্রেমিকের কামদগ্ধ
কয়েকলক্ষ উপহাসের মুখোমুখি বেড়ে ওঠে আমার উচ্চাশা এইখানে
প্রকৃত প্রশ্নিল চোখে চোখ পড়লে কুঁকড়ে যায় আমার হৃদপিণ্ড এইখানে
এইখানে সশ্রদ্ধ দৃষ্টির আড়ালে যাবার জন্য পা বাড়াতে হয়


আমি নারী মুখ দ্যাখার ইচ্ছায় মাইলের পর মাইল হেঁটে দেখি
শুধু মাগীদের ভিড়
সাতাশ বছর-একা একা সাতাশ বছর বেক্তিগত বিছানায় শুয়ে দেখি
মেধাহীন ভবিষ্যৎ জরাগ্রস্ত স্নায়ুমণ্ডলীর পাশে কবিদের কবির কবিতা
চারিধারে ঢিবি দেওয়ালের নীরেট নিঃশক্ত অন্ধকার।

আমার রাইফেল আমার বাইবেল
আমার রাইফেল আমার বাইবেল এই নামের দুটো কবিতা পকেটে নিয়ে আমি গল্প কবিতার পথে
হাঁটি-এই পথে একজন অগ্নিযুগের বিপ্লবীর নামে রাস্তা ও বাজার এবং একজন সত্তর দশকের
শহীদের নামে রয়েছে একটি শহীদ-বেদী রয়েছে কলেজ স্কোয়ারের জলে পুরনো বিশ্ববিদ্যালয়ের
নতুন গ্রন্থাগারের ছায়া রয়েছে কিছু দূরে মেডিকেল কলেজের মর্গ আর তার উল্টো দিকে দেবালয় ও
গ্রন্থালয়ের মধ্যবতী পথ চলে গ্যাছে ষ্ট্রেট গণিকালয়ের দিকে এই পথ দিয়ে আমি হাঁটি গল্প কবিতার
দিকে-বুক পকেটে কাগজী নোটের বদলে দুটো কবিতা-বুক পকেটের তলায় গেঞ্জি গেঞ্জির
তলায় চামড়া চামড়ার তলায় হৃদয় হৃদয়ের হাড় ভাববাচ্যে কাটা গ্যাছে আমার তবু আমি হাড় কাটায়
যাইনি এখনো কয়েকটা লেখা নিয়ে গল্পকবিতার দিকে হেঁটে গেছি-পাঠের ক্ষুধা নিয়ে ছুটে গেছি
গ্রন্থের কাছে প্রেম ও পুরুষাঙ্গর ক্ষুধা নিয়ে ছুটে গেছি প্রেমিকার কাছে কিন্তু গ্রন্থ ফিরিয়ে দ্যায়নি
আমাকে-মানবী দিয়েছে-তারপর থেকে আমি লালনীল মাছের অ্যাকোয়ারিআমের পাশে বসে
মাছ ভাজা খেয়েছি বেশ্যার উঁচু বুকে যৌন আকর্ষণের বদলে আমি লক্ষ করেছি মাংসর
ঢিবি-আমার প্রাক্তন প্রেমিকার বর্তমান স্বামীর দাঁতের উজ্জ্বলতায় আমি টুথপেষ্টের বিজ্ঞাপন
দেখেছিলুম-হাসি দেখিনি


রামকৃষ্ণ শ্মশানে জলন্ত শবদেহের ঝলসানো মাংস মহাপ্রসাদ মনে করে খেয়ে ফেলে নিমাই সাধু
এবং এমনকি সে খিদে পেলে গঙ্গামাটি বা স্রেফ নিজের পাইখানা খেয়ে ফেলে ও গাঁজা খায় এবং
হরিনাম করে-নিমাই সাধুকে অনেকেই মুক্ত পুরুষ ভাবে আমিও মুক্তি চাই কিন্তু সে মুক্তি মানে
পোড়া মড়ার ঝলসানো মাংস ছিঁড়ে খাওয়া কিংবা মাটি বা নিজের গু খাওয়া নয়-চে গুয়েভারাও
মুক্তি চেয়েছেন এবং পরাধীন ভারতের কবি লিখেছিলেন যেথায় মাটি ভেঙ্গে করছে চাষা চাষ কাটছে
পথ খাটছে বারোমাস সেখানেই দেবতা আছেন দেবতা নাই ঘরে-এই ধরণের মুক্তি প্রসঙ্গ লেখা
হয়েছিল স্বাধীনতার আগে-আমি আজ স্বাধীন ভারতের কবি দারিদ্রতার হাতে বন্দী অগনন
শিশুদের নির্ভেজাল হাসি দেখে তাদের মুক্তির পথের কথা ভাবি-পেটোর বদলে দুটো কবিতা
পকেটে নিয়ে গল্প কবিতার দিকে হাঁটি এই পথে একজন অগ্নিযুগের বিপ্লবীর নামে রাস্তা ও বাজার
আছে আছে সত্তর দশকের একজন শহীদের জন্যে একটি শহীদবেদী এই পথে


কালো দিব্যতা
তোমাদের পৃথিবীর পাশে আমার এই স্বমারনোৎসব
আমার স্বেচ্ছামৃত্যুর এই গান
আমায় দিয়েছে এনে নির্বানের মহাসম্মান

এখানে জিভ নিরপেক্ষ শব্দ দিয়েই করতে হয় সবকিছু
পুরুষাঙ্গ জেগে উঠে হয়ে উঠে বীন
তখনি এক কালোদিব্যতা করে আক্রমণ
তার তীক্ষ্ণপ্রতিভা খরশান ফেটে পড়ে অট্টহাস্যে
উপহাসের গমকে গমকে ঝলসে ওঠে তার শব্দার্থ
শব্দ কি পরমব্রহ্ম-সব শব্দ?
গনিকাকবিতাপ্রেমযোনি কিম্বা ঈশ্বর অথবা নভোচারী
শ্লীল শব্দ অশ্লীল শব্দ শব্দ কি পরমব্রহ্ম?

জানি না জানি না কিছু তবু স্মৃতিদেহী শয়তান বলে চলে
শব্দ কথা বাক্য শব্দ বাক্য কথা কে কোথায় কোন উন্মাদ
আছ পাগল উদাসী উদঘাটন কর এই অনৈতিহাসিক
আত্মলিপি হিচিং ফিচিং এন্তার টনাকটিং নেশাহীন
মাথার ভেতর কি সব হচ্ছে এসব শুধু স্মৃতি এসে
করে গ্রাস উন্মাদ এই বর্ণমালা তখনি সহসা
ছুরি হয়ে উঠে তাবৎ অতীত আর ধারালো ছুরির
ওপর দিয়ে জীবনের হাঁটা দেখে থ মেরে যায় হঠযোগী

আমি থমথমে আকাশের তলায় দেখি জলের দিকে নেবে গ্যাছে সব সিঁড়ি কিছু দেখি না দেখি পাহাড়ি জলের মিঠে স্বাদে নদিগামী সামুদ্রিক ইলিশ মানুষের ইষ্টবেঙ্গল মোহনবাগানের সংগে জড়িয়ে ফেলছে তার রূপালী অস্তিত্ব আর যৌনতার টানে সন্দেহপ্রবণ পুরুষও নিজেকে জড়িয়ে ফেলছে ভালোবাসার সংগে

আর দেখি
নাগরিক নিয়নের আলোয়
আমার একক ছায়ার পাশে
তোমার একাকী ছায়ার বদলে
আমার শরীরে এক ল্যাজ

ডারউইন থিওরি বা ফ্রয়েডের নামের বানান ভুলে আমি রাস্তা হাঁটি আমার প্রাগৈতিহাসিক পুরুষের ছায়া হাঁটে আমার পাশে তখন আর আমার মনে থাকে না অন্যকিছু মনে থাকে না আমি কাকে চিট করেছি কে মেরেছে আমার দশ টাকা দুঃখ-কষ্টের রোজনামচা দিয়ে সাহিত্যের কথা মনে থাকে না এমনকি খোদ ভিয়েৎনাম দিবসে ভুলে যাই ভিয়েৎনাম সমস্যা

সে সময় মনে থাকে ঠিক বেলা পাঁচটার পর কলেজফেরৎ
তুমি ঘুরে বেড়াও তোমার পুরুষবন্ধু নিয়ে একা হাঁটি আমি
আর অইসব যুবকদের স্বাস্থল পাছা দেখে জাগে আফশোষ
ইস্ আমি কেন হলুম না সমকামী?
তোমাদের পৃথিবীর পাশে আমার এই স্বমারনোৎসব
আমার স্বেচ্ছামৃত্যুর এই গান
আমায় দিয়েছে এনে নির্বানের মহাসম্মান

সম্মানিত আমি তবু পথ চলি
হাঁটতে হাঁটতে খুলে পড়ে হাঁটু হতে মালাইচাকী
হাঁটুগেড়ে পড়ে যাই তবু নতজানু আর হতে পারি না কারো কাছে
প্রেমের কথা ভাবলে কনকনিয়ে ওঠে দাঁতের গোড়া

অবশ্য এসব অসুখ আমি সারিয়ে ফেলতে পারবো
কেননা আগেও মানে শরীরে ল্যাজগজানো বা সমকামী
হতে না পারার আফশোষ জাগার আগেও আমি রাস্তা
হাঁটতুম একা এবং মারাত্মক আমি আসলে
মাতৃজঠর থেকে চিতা ওব্দি হেঁটে যাবার পরেও জীবনের প্রত্যাশী

আমি হাঁটতুম-হাঁটব-হেঁটে যাবো আমি হাঁটতুম
আমার মাথার ওপরে কবি ও বিজ্ঞানীর নভোমণ্ডল
আমার শির ও শরীরের পাশে ট্রাফিকের তিন আলো
আমি মাতাল কবিদের সাথে গণিকাপল্লীর ভেতর
দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে ভেবেছি সাবিত্রীসত্যবানের কথা
আমার মাথা ফুঁড়ে জ্বলে উঠত জ্বলন্ত মোমবাতি সে সময়
ব্রহ্মতালুর ঘি জ্বলে যেত দাউদাউ চটাচট পুড়ে যেত সব চুল

অবশ্যই আমি সম্মোহিত করে রাখতুম অন্যদের তারা শুধু আমার অপরিচ্ছন্ন জামাকাপড় ও গাঁজাটানার পর দাড়িগোফময় মুখের রবীন্দ্রসঙ্গীত দেখতে ও শুনতে পেত তারা দেখত না চার্লি চ্যাপলিনের চেয়ে দক্ষ কৌতুক অভিনেতা হয়ে আমি কি রকম নিজেকে ভুলিয়ে রাখছি অহেতুক

কৌতুকে কিন্তু আমি দেখতুম পুরানো গল্পের মতন আমার নিজস্ব কৌতুকের ভেতরে দুঃখ-সেই দুঃখ দেখে আমি হেসে উঠেছি হো হো শব্দে সেই শব্দে ভেঙ্গে গিয়েছিল বুঝি জীবনানন্দীয় ভাড়েদের কবিতার আসর এমনকি যেসব প্রথম পোয়াতী মৃতবৎসা হবার বেদনায় হয়েছিল মূক যেসব ব্যর্থপ্রেমিক ঠিক করেছিল তাদের হারানো প্রিয়ার যোনি চিতা হতে করে নেবে লুঠ তারাও জেগে উঠেছিল-জীবনের ভাঙাসুর তাদের হয়েছিল সহসা প্রাণবাণ

কিন্তু আমি হাসি থামিয়ে দিতুম
তখনি অল কোআইট ইন দি ফিউরিয়াস ফ্রণ্ট
র্যা বোর প্যারিস কিমবা মিলারের আমেরিকা
অনায়াসে নেমে আসে তখন খালাসীটোলায়
ওকি গংগা না জর্ডন কিমবা কলোরাডো
সব কিছু মিলে মিশে হ’ত একাকার
জানা অজানার মধ্যবর্তী এলাকা থেকে কালোদিব্যতা এসে
জানাত আমায় উইমেন্স কলেজের অনার্সছাত্রী আর
হাড়কাটার বেশ্যার ঋতুরক্তের রঙ এক
ঘুম ও জাগরণের মধ্যবর্তী এলাকা থেকে কালোদিব্যতা এসে
জানাত আমায় সাম্যবাদীরও প্রিয়ার
দরকার হাংরীদের মত
স্মৃতি ও বিস্মৃতির মধ্যবর্তী এলাকা থেকে কালোদিব্যতা এসে
জানাত আমায় যৌনতার কাছে গেলে নারীও হয়ে ওঠে
অমৃত ধর্ম ও অধর্মের মধ্যবর্তী এলাকা থেকে কালোদিব্যতা এসে
জানাত আমায় তুমি অনন্ত তুমি আনন্দ

আজ তোমাদের পৃথিবীর পাশে আমার এই স্বমারনোৎসব
আমার স্বেচ্ছামৃত্যুর এই গান
আমায় দিয়েছে এনে নির্বানের মহাসম্মান

ক্রিয়াপদের কাছে ফিরে আসছি
আমি নেশাগ্রস্থ তাই সংসারী সাত্বিক বন্ধুরা দূরত্ব বজায় রাখে ঠিক
ট্রামে ট্রেনে বাসে ফুটপাথে-আমি আন্দাজ মেপে কথা বলতে
পারিনা কিছুতেই একজন ঘরের বউ দেখলুম বহুগামিতায়
বেশ্যাদের ছাড়িয়ে গেল
পয়সা ছাড়াই-আমার হাহাকার ছুঁড়ে দিয়ে লুফে নিলুম অট্টহাসি

প্রেমিকার চোখে চোখ রাখতে গিয়ে দৃষ্টিফেটে একশো বিষাক্ত সাপ
চলে গ্যালো তার দিকে-আমি পুরোহিতের মন্ত্রপুত টিকিতে
গোমাংস ঝুলিয়ে পরীক্ষা করতে চেয়েছিলুম ধর্মসংস্কারের সহ্যক্ষমতা

শুক্র শনি রবি বাদে রোজ ঠিক সাড়ে বারোটায় রোদ্দুরে
আমি রবীন্দ্রনাথের গান শুনতে চেষ্টা করি পানের দোকানে
আমি সোনার তরীর সব ধান লুট করে বিলিয়ে দেবো
শান্তিনিকেতনের ভিখিরীদের ভেতর
তারপর খালি নৌকায় চেপে গান গাইবো বাইশে শ্রাবণের
জল ভর্তি কর্পোরেশনের কলকাতায়-কে যাবি পারে ওগো তোরা কে

আমি খ্রীষ্টমূর্তির গায়ে লটকে দিয়েছি কৃত্রিম সাপ
আমি বাবামার ভালোবাসার আড়ালে যৌন বনিয়াদ
আমি ক্রিয়াপদ পরিহার করতে চেয়েও ফিরে আসছি
ক্রিয়াপদের কাছে-

মানুষের সঙ্গে কোন বিরোধ নেই
না, মানুষের সঙ্গে আমার আর বিরোধ নেই কোনো-
এখন পাওনাদার দুর্ঘটনায় পড়লে তাকে নিয়ে যেতে পারি হাসপাতাল
প্রাক্তন প্রেমিকার স্বামীর কাছ থেকে অনায়াসে চাইতে পারি চার্মিনার
দাড়ি গজানোর মত অনায়াসে এ জীবনে আমি
রামকৃষ্ণের কালীপ্রেমে দেখি সার্বভৌম যৌনশান্তি
বাবলিদের স্বামীপ্রেমে দেখি সার্বজনীন যৌনসুখ
একটা চটী হারিয়ে গেলে আমি কিনে ফেলি একজোড়া নতুন চপ্পল
না, মানুষের সংগে আমার আর বিরোধ নেই কোন

বোনের বুকের থেকে সরে যায় আমার অস্বস্তিময় চোখ
আমি ভাইফোঁটার দিন হেঁটে বেড়াই বেশ্যা পাড়ায়
আমি মরে গেলে দেখতে পাবো জন্মান্তরের করিডোর
আমি জন্মাবার আগের মুহূর্তে আমি জানতে পারিনি আমি জন্মাচ্ছি
আমি এক পরিত্রাণহীন নিয়তিলিপ্ত মানুষ
আমি এক নিয়তিহীন সন্ত্রাসলিপ্ত মানুষ
আমি দেখেছি আমার ভিতর এক কুকুর কেঁদে চলে অবিরাম
তার কুকুরীর জন্যে এক সন্ন্যাসী তার সন্ন্যাসিনীর স্বেচ্ছাকৌমার্য
নষ্ট করতে হয়ে ওঠে তৎপর লম্পট আর সেই লাম্পট্যের কাছে
গুঁড়ো হয়ে যায় এমনকি স্বর্গীয় প্রেম-শেষ পর্যন্ত আমি
কবিতার ভেতর ছন্দের বদলে জীবনের আনন্দ খোঁজার পক্ষপাতী
তাই জীবনের সঙ্গে আমার কোন বিরোধ নেই-মানুষের সঙ্গে
আমার কোন বিরোধ নেই

ফ্রেশ ইনফরমেশন
ভাদ্রের রৌদ্র আমায় কুকুরের কামোত্তেজনা জানানোর বদলে জানাল শরৎ এসে গ্যাছে-আমি নক্ষত্র ও নৌকার নিহিত সম্পর্কের কথা জানলুম নদীর নিকটবর্তী জেলেদের কাছ থেকে-মেরিন ইঞ্জিনিয়ার পাশ করা আমার এক বন্ধু কম্পাসের সাহায্যে সমুদ্রের দিক নির্ণয়ের কথা জানিয়েছিল আমি মরে গেলে আমার চারধারে আর চারদিক থাকবে কি?
ভাদ্রের রৌদ্রে শরতের আভাষ তখন পাবে অন্য কেউ যেরকম আমার বাবা যে কাঁচামিঠে গাছের আম খেয়েছিলেন তিনি মারা যাবার পর আমি সেই কাঁচামিঠে গাছের আম খাচ্ছি-এ ভাবেই আমি মরে যাবো কাঁচামিঠে গাছের আম তখন খাবে আমার উত্তর পুরুষ অর্থাৎ আইনষ্টাইন ও রবীন্দ্রনাথের সেই বিখ্যাত কথোপকথনের মতন ব্যাপারটা অর্থাৎ মানুষ না থাকলে সুন্দর অ্যাপোলো মূর্তির সৌন্দর্যের কোনো তাৎপর্য থাকবে না কিন্তু মানুষ না থাকলেও পৃথিবী সূর্য ব্রহ্মাণ্ড থেকে যাবে ঠিকঠাক

মানে আমি বলতে চাইছি মানুষ না থাকলে আমটী কাঁচা অবস্থাতেও মিঠে থাকবে কিন্তু সেটা বলার কেউ থাকবে না-সুতরাং সূর্যকে সূর্য মোমবাতিকে মোমবাতি মানুষই বলেছে-মানুষই বলেছে নরের পূর্বপুরুষ বানর বা নরগণ ঘোষণা করেছে এরূপ বিদ্যা ফোনেটীকস অইরূপ বিদ্যা ফিললজি সেইরূপ অসুখ ফাইলেরিয়া এইরূপ প্রত্যংগ ফ্যালাস ইত্যাদি ইত্যাদি

এমতঅবস্থায় আপন কণ্ঠস্বর খুঁজতে গিয়ে যদি কোনো কবি খাবি খায় তবে আমরা আর কিইবা করতে পারি-আমার প্রপিতামহ যাকে বলেছিলেন জল আমিও তাকে বলছি জল-আমার প্রপিতামহ যাকে বলেছিলেন আগুন আমিও তাকে বলছি আগুন-মানে বাবারা যা বলে গ্যাছেন ছেলেরাও তাই বলছে নাতিরাও তাই বলবে অর্থাৎ বস্তুর বস্তুগত নামটি একই থাকবে কেবল পাল্টাবে তার ধারণা যেমন আদিকালে পুরুষাঙ্গকে প্রজনন প্রত্যংগ হিসেবেই দ্যাখা হ’ত-বর্তমানে পুরুষাঙ্গকে টেলিপ্যাথিক কম্যুনিকেশনের রাডার হিসেবেও দ্যাখা হচ্ছে-অনেকেই আপেল-কে গাছ থেকে পড়তে দ্যাখে কিন্তু নিউটন কেবল আপেলের পড়াটাই দ্যাখেননি দেখেছিলেন তার সঙ্গে মাধ্যাকর্ষণ-ভাস্করাচার্য অবশ্য ল অফ গ্রাভিটেশন-কে অন্যভাবে আবিষ্কার করেছিলেন এবং কোপার্নিকাসের অনেক আগেই আর্যভট্ট আবিষ্কার করেছিলেন পৃথিবীর সূর্যকেন্দ্রিক আবর্তন-এইসব ঘটনার দ্বারাই প্রমাণিত হয় একই সত্য-কে বিভিন্ন আবিষ্কারক ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতিতে মত আবিষ্কার করেন অনেকটা রামকৃষ্ণের বিখ্যাত উক্তির মত যত মত তত পথ নিয়ে মানুষ-মানুষের ঐক্যের ভেতর এ ভাবেই বৈচিত্র্য ও বৈচিত্র্যের ভেতর ঐক্য খেলা করে-শুধু জ্ঞানান্ধ সমালোচকরা সত্যের গুহায় বসে বলে দ্যান-
অমুক তমুকের চর্বিতচর্বন ছাড়া কিছু নয়-হায় হায়-বিদ্যাসাগর অ আ ক খ শিখেছিলেন অন্যের কাছ থেকে তারপর নিজেই প্রণয়ন করেন বর্ণপরিচয়-হে মহান সমালোচকগণ জানান আমায় বিদ্যাসাগর কার চর্বিতচর্বন ছিলেন-জানান-জানান-ভাদ্রের রৌদ্র আমায় কুকুরের কামোত্তেজনার খবর জানাবার বদলে জানিয়েছে শরৎ এসে গ্যাছে-আপনিও অইরকম কিছু ফ্রেশ ইনফরমেশন দিন-নাকি মাও কোট পরে আপনি কোট করবেন টাওইষ্ট মতবাদ-গলায় ক্রুশ ঝুলিয়ে আপনি একহাতে রামকৃষ্ণ লীলাপ্রসঙ্গ অন্যহাতে হ্যাভলক এলিস রেখে বলে উঠবেন- লেনিন বলেছেন না-সন্ন্যাসী না-ডনজুয়ান এর মাঝামাঝি জায়গায় আমাদের থেকে যেতে
কোনটা স্যার ?

নির্বিকার চার্মিনার
মা,আমি আর তোমাদের অভিজাত সমাজের মাজাঘষা বাঁকাহাসি হাসতে পারবো না করুণাঘন ঈশ্বরের ক্যালানেকেষ্ট সাদাদাঁত নিয়ে শয়তানের মেধাবী চোখ নিয়ে আমি আর পারবো না রামকৃষ্ণীয় ভংগীতে স্ত্রীকে ব্যবহার করতে মাতৃতান্ত্রিক প্রথায়

চিনির বদলে স্যাকারিন খেয়ে ডায়বেটিসকে ভয় করতে পারবো না আমি পারবো না অসুখী লিঙ্গ নিয়ে প্রাক্তন প্রেমিকার গায়েহলুদের দিন দেবদাস হতে খালাসীটোলায়
আমার লিভার ক্রমশঃ পচে আসছে আমার পিতামহর সিরোসিস হয়েছিল হেরিডিটী বুঝিনা আমি মদ খেয়ে কবিতা পড়ি আমার বাবা পূজোআচ্চার জন্যে করতেন উপবাস পাড়ার দাদারা ধর্মের দোহাই দিয়ে দোলের দিন টিপে দ্যান পাড়াতুতো বোনদের মাই

মা বিদেশ ভ্রমণের দিন তোমাদের অভিজাত সমাজের অনেকেই ভদকা গিলেছেন আমি নির্বিকার তোমার চিতা থেকে ধরাবো চার্মিনার-তোমার মৃত্যুর কথা ভাবলে আমার চোখে জল আসে তখন আমি ভূমির ভূমিকম্প কিম্বা জলের জলোচ্ছ্বাসের কথা ভাবিনা কুমারী প্রেমিকার শায়ার দড়িতে হাত রেখে আমি বৈষ্ণব পদাবলীর কথা ভাবিনি মা আমিও মরে যাবো একদিন

বেলুড় মন্দিরে প্রণামরতা এক বিদেশীনির স্কার্ট ঢাকা আন্তর্জাতিক পাইথনপাছা দেখে জেগেছিল আমার সীমাহীন যৌনতা মা তোমার যৌনতা আমৃত্যু বাবার চিতার সঙ্গে লেপ্টে থাকবে বলে আমি তোমায় ঈর্ষা করছি নিরহংকার নোংরামি নিয়ে লিঙ্গের দিকে তাকিয়ে নিজেকে অন্যগ্রহের জীব মনে হচ্ছে এখন আমার মুখের ওপর এসে পড়ছে ডুবন্ত সূর্যের আঁচ আর সূর্যাস্তের রং পাখায় মেখে পরিবার পরিকল্পনাহীন পাখির দল ফিরে যাচ্ছে বনলতা সেনের চোখের শান্তিময় নীড়ের দিকে-ডিমে তা দেবার সময় এসেছে তাদের

ভ্রমর বিহীন কিছু ফুল
ভ্রমর বিহীন কিছু ফুল এখানেই ঝরেছিল রক্তের ভেতর
আমার রাজহাঁস স্বর্ণডিম্বপ্রসূ রাজহাঁস এখানেই
কাটা হয়েছিল-সুস্বাদু মাংসের গন্ধে পরিতৃপ্ত জ্বলন্ত উনুন
দেখেছিল আকাশের অন্তহীন উনুনের তাপে শীতের কার্ডিগান
খুলে এক বালিকা দুই বুকে তার রেখেছে উত্তাপ
তার পিকনিক গার্ডেনের কাছেই কাটা হয়েছিল রাজহাঁস আমার
রক্তের ফুলগুলি ভ্রমর বিহীন ঝরে পড়েছিল সেদিন

রাজহাঁস ও ফুল বিষয়ক কবিতাগুলি আমি
মাংস রাঁধার জন্যেই দিয়েছিলুম উনুনে
সাধ ছিল সে বালিকা পাবে বটে মাংসের সুঘ্রাণ
কারণ অনেক মাংস ঘেঁটেছি আমি
আমি দেখেছি মাংসের ভিতর বায়ু পিত্ত কফ দেখেছি
এমনকি সত্ত্ব তম রজ এই তিনপ্রকার গুণও থাকে মাংসাশী শরীরে

তবুও আমি এক জরায়ু থেকে বেরিয়ে আরেক জঠরে
খুঁজেছিলাম আমার সন্তানের মুখ-
আমার মৃত পিতার শরীর দেখে আমি বুঝেছিলুম
বেঁচে থাকা জরুরী আমার মা-র হতাশা দেখে
বুঝেছিলুম মৃত্যুও দরকারী হতে পারে জীবনের

তবু সকল জ্ঞানের পর কাঁটা ও কমপাস বিহীন-আমি
আমি এক বালিকার জন্যে কেটে ফেলি আমার রাজহাঁস
কবিতার খাতা ঠেলে দিয়েছিলুম উনুনে এক বালিকার
জন্যে আমার চৈতন্যের ক্রন্দন আমি দেখে ফেলি
বীর্যরসে-তৎক্ষণাৎ আর দেরী নয় বলে
আমি জড়িয়ে ধরি অশোক-ষষ্ঠীর দিন সেই বালিকার শরীর
রক্তের ভেতর ভ্রমর বিহীন ফুলগুলি ফুটে ওঠে সেদিন

আমি মানুষ একজন
আমি মানুষ একজন প্রেম-পেচ্ছাপ দুটোই করতে পারি
দুঃস্বপ্নের পিঁচুটি পরিষ্কার আর তৃষ্ণা মেটাবার জন্যে
ব্যবহার করতে পারি জল দুরকমভাবে-শোক ও শান্তিতে
ব্যবহার করতে পারি মদ দুরকমভাবে-আমি
মানুষ একজন জরায়ু থেকে চিতা ওব্দি হাঁটতে হাঁটতে
নিসর্গের রেফ্রিজেটার থেকে আমি তুলে আনি
আমার নিজস্ব আত্মা-

না পচন করে না গ্রাস তাকে-সে
গনিকালয়ের পথে অহেতুক হেঁটে মনে রাখে প্রেমিকার প্রতিমার স্মৃতি-
মনে রাখে যে শরীরে তার আশ্রয় এখন সে
শরীরের মেধাময় মাথার ওপর কখনো ফাঁসীকাঠ কখনো কড়িকাঠ
কানের পাশে কখনো রবীন্দ্রনাথের গান কখনো ব্রেন কিম্বা মেশিনগান
আর কখনো
কেবলি আকাশ আর রৌদ্র আর সূর্যাস্তের নদী
আর অন্ধকার
অন্ধকার আকাশে সে দ্যাখে প্রেমিকার নক্ষত্রচোখ আর চোখের
গনিকাদৃষ্টির রাধিকারূপ আমি মানুষ একজন গালাগাল খাওয়া আর
দেওয়া দুটোই করতে পারি
আমি মানুষ একজন
এখন যে শরীরে থাকি সে শরীর ছিল তার
বাবামার শরীরে এবং কি আশ্চর্য তার
বাবামার শরীর ছিল তাদের
বাবামার শরীরে-আরো আশ্চর্য তাদের
বাবামার শরীর ছিল তাহাদের
বাবামার শরীরে-আহা-কে বলবে আজ আর
প্রথম ভ্রুণের দিন ছিল আমার মত কতজন মানুষ
তার মত মানুষী
আমি আর কবিতা লিখতে পারি না আজকাল কিন্তু
দ্যাখো নারী-তোমার সান্নিধ্যে এলে আমি পাই
আমার ঈশ্বরী-তোমার নিকটে গেলে আমিই কবিতা হয়ে যাই মনে হয় লম্পটেরও ভালবাসা থাকে আর আমি এখন যে শরীরে থাকি সে কুঁচকে গ্যাছে কর্কশ ভীষণ থ্যাঁৎলানো
কিন্তু তার মাথায় গিঁথে থাকা জ্বলন্ত মোমের আলোয় সে দেখেছে শোকগ্রস্থ
শরীরেও থেকে যায় অ্যামিবার প্রাণবন্ত প্রাণ
না বাপু-আমি ঈশ্বর কিমবা শূয়ারের সন্তান নই
স্রেফ মানুষের বাচ্চা-আপনিতুমিসেতাহারা রয়ে গ্যাছে
আমার ভেতর-আমার ভেতরে আছে স্মৃতির কবর
শব্দের অন্তহীন খনি আর পরমব্রহ্মের অণ্ডকোষ
ধরে ঝুলে থাকা আস্তিক সম্প্রদায়ের বিশ্বাসভূমিতে
আমি একা উদোম ন্যাংটা ঘুরে বেড়াই বিশ্বাসবিহীন
খুব সহজ নিশ্বাসে-
কিন্তু দীর্ঘনিশ্বাস যখন লোকচক্ষুর আড়ালে ছাড়ি
তখন তুমি নারী
তুমি দেখো না সেই কামুক জন্তুটার চোখে কি রকম জল থাকে যার অপর নাম অশ্র“
শেষ পর্যন্ত আমি দেখলুম যে গঙ্গার জলে আমি করছি পেচ্ছাব সে গঙ্গার জলেই আমি
সেরে নিচ্ছি স্নান
যে মেয়েটিকে বলছি বেশ্যা-তার ভেতরই
খুঁজে পাচ্ছি জায়া ও জননী-
আমার চ্যাংড়া আত্মা কিন্তু নীলকণ্ঠকে পুঁক দ্যায় আর শ্রীকৃষ্ণের
গোপিনীপ্রেমের চেয়ে ঢের বেশি ভালোলাগে
কৃষ্ণের সেই চোখ-যার দৃষ্টিতে প্রকৃতি
ছাড়াও কৃষ্ণ নিজের ভেতরে খুঁজে পেতেন রাধাকে
নারী-তুমি শ্রীরাধার চেয়ে রমণীয়া-আমি তাই কৃষ্ণের বিশ্বগ্রাসে
পাই জীবনের অন্তিম কুহক রূপক
এখানেই পৃথিবীর শুরু
চার্মিনার স্বাদ তামাকের খামার ছাড়িয়ে
এইখানে পাওয়া যায় ধোঁয়ার ভেতর
এইখানে পৃথিবীর শুরু
এইখানে গর্ভপাতকামী মানুষের মনে জাগে সন্তান প্রেম
এইখানে পৃথিবীর শুরু
নিদ্রায় নেমে আসে স্বপ্নিল জাগরণ-ঘুমের ভেতর জাগে দুঃস্বপ্নের ভূত
বিস্মৃতির জরায়ুতে সহসা ককিয়ে ওঠে ক্ষতদুষ্ট স্মৃতি
পরমাপ্রকৃতি এইখানে পুরুষাঙ্গর বন্দনায় জেগে ওঠে নারীর হৃদয়ে
এইখানে চেতনার শুরু-

নষ্ট আত্মার টেলিভিসন
আমার হাত আমি দেখি রোজ আমার হাতে ডবল ব্রেনলাইন শোনা যায় যা হস্তরেখাবিদ কিরোর হাতে ছিল আমি বিশ্বাস করি না হাত দ্যাখা আমি বাসের হাতলে ঝুলে শুনে ফেলেছি কবিতা ও মৃত্যুর ধ্বনি আমার করোটীতে বিধিলিপির বদলে হাড়ের কাঠামো বোমার শব্দে বা গুলির শব্দে আমার জেগে ওঠে মৃত্যু ভয় আমি বিপ্লবকামী মানুষ একজন কামের আবেগে চুমু খেয়ে পাই স্বর্গাতীত আনন্দ অন্য অনেক সময় ইত্যকার অনুষ্ঠানে অনীহা নিহিত থাকে দেহের ভিতরের বিস্ময়ের দেবতা মনের মধ্যে কবিতা লেখার জন্যে নেশা করে কাব্য ভাবনায় অনিচ্ছা জন্মায়-

বিপ্লবীদের পাইপগানের ছিটকিনি পরিস্কার করে দেবার পরেও অনিচ্ছা জন্মায় গুলি চালাতে আমি শ্রীচৈতন্যের প্রেমধর্ম অনুযায়ী একযোগে নকশাল ও মিলিটারী প্রতি আমার ভালোবাসা বিলোবার ফলে আমি দু’পক্ষের শত্র“ হয়ে গেলাম আমি দেখেছি আমার ক্ষিধে পেয়েছে আমায় রুটি দাও বা আমার চাক্রীর দরকার আমায় একটা চাক্রী দাও বললে কেউই একটা রুটী কিমবা চাক্রী পায় না তার কাছে পিকাসোসার্ত্রসত্যজিতের থেকে তখন একটা রুটী চাক্রীর কামনা বেশী আসলে মানুষ দেখে ফেলে যৌনতা ও অর্থনীতি দিয়ে তৈরি বাবামাভাইবোন নিজের বউ পরের বউময় সমাজ আমি হাতের করতলে দেখি ডবল ব্রেনলাইন-যা কিরোর হাতে ছিল-আমি বিশ্বাস করি না হাত দ্যাখ্যা তবে হাত্মেরে আমার আত্মা লক্ষ করেছে অনেক নারী রয়ে যাচ্ছেন অনায়াত্তা আমার অর্থনৈতিক নিরাপত্তার অভবে এই ব্যাপারটা আমায় রাষ্ট্রবিপ্লবের পথে ঠেলে দ্যায় অর্থাৎ সুকান্তের ভাষায় প্রিয়াকে আমার কেড়েছিস তোরা ভেঙেছিস ঘরবাড়ি সে কথা আমি কি সহজে ভুলিতে পারি এই লাইনগুলোকে আমি ব্যবহার করি একপ্রকার মানসিক সংগ্রামের হাতিয়ার হিসেবে কিন্তু আমার প্রিয়ার ভূমিকাটি যে মেয়েটি পালন করত সে নিজেই নিরাপত্তার ফ্রিজসভ্যতার দিকে চলে যায় এবং তারপর থেকে আমি হ্যাভলক এলিসের যৌন মনস্তত্ব আর জগদীশবাবুর গীতা জুড়ে আমি বানিয়ে ফেলেছি আমার যোগাসন ফ্রয়েড পড়বার অনেক আগেই আমি বুঝে গেছিলুম কাকে বলে অয়দিপাউস কমপ্লেক্স কিন্তু নিজের মার সঙ্গে করতে ভালোলাগে না আমার কিন্তু অনেক সময় মায়ের বয়সী মহিলার শরীরের স্বাদ নেবার প্রবণতা আমার থেকে গেছিল কিশোরকালের দুরন্ত দুপুরে আমি আত্মহত্যা করবার জন্যে একবার বেরিয়েছিলুম পথে কিন্তু পেটোর উপর্যুপরি শব্দে ফিরে আসি প্রাণভয়ে আমি দাস ক্যাপিটাল না পড়েই বুঝেছিলুম কাকে বলে হিংসাত্মক বিপ্লব-

হিংসা ভালোলাগে না আমার বিপ্লব ভালোলাগে জোতদার ও কৃষকের যুদ্ধময় ধান ক্ষেতে আমিও খেয়েছি খুব ধানশীষের দুধ-ধান সেদ্ধ মদের দোকানে ধানসিঁড়ি নদীর কিনারের কবির জন্মদিন পালন করে খুঁজেছি জীবনের আনন্দ অনেক সময় আমার কাছে চার্মিনার থাকে
দেশলাই থাকে না
দেশলাই থাকে
থাকে না চার্মিনার
যৌনতা থাকে কিন্তু প্রয়োগ করবার জন্যে আধার বা রাধা বা রমনী মানে মেয়েছেলে থাকে না মেয়েছেলে থাকে যৌনতা থাকে না-প্রত্যুৎপন্নমতি থাকে অবিমৃষ্যকারী থাকে না অবিমৃষ্যকারী থাকে প্রত্যুৎপন্নমতি থাকে না এভাবেই দিন যায় রাত যায় একটু অন্যভাবে দিনরাত কাটিয়ে আমার বাঙালী বাবা মা জন্ম দিয়েছেন আমায় সময়ের ভেতর অর্থাৎ বাবার শরীর মায়ের শরীরে দুই শরীরের মিলনে আমার একটি শরীর অর্থাৎ দ্বৈত থেকে অদ্বৈত হওয়া এভাবেই পিতা হবার ইচ্ছাকে আমরা লক্ষ করি স্বয়ংরতির ভেতর তরল বীর্যস্রোতে দুশো ছয় হাড়ের কাঠামো ও কাঠামোর সংলগ্ন মাংসল স্নায়ুর চিন্তাবাহন শব্দের স্মৃতি ধারণের বীজ তরল বীর্যের ভেতর কি আশ্চর্য মিষ্টার খান্না-হিন্দীভাষী কিন্তু কিমাশ্চর্য তার স্ত্রী বাঙালী হওয়ায় মিষ্টার খান্নার পাঁচ বছরের ছেলে বাঙলা হিন্দী দুটোই বলতে পারে জিভ দাঁত তালু কণ্ঠ ওষ্ঠের সম্যক ব্যবহারে আচ্ছা সেকি তার ভ্রুণকোষের নাইট্রিক অ্যাসিডগুলির ভেতর নিয়ে এসেছিল তার কথা বলা ও বোঝার ক্ষমতা প্রিয় হেরিডিটী ভাষা জিনিষটা কি হেরিডিটী-পরিবেশ না প্রয়োজন কার দরকার ভাষা গঠনে-ভালোবাসার ভাষা আছে কিনা জানিনা তো হেরিডিটী অনুভূতির ভাষা শুধু দেখি একই কায়াবিশিষ্ট মানুষ কেউ হতে চাইছে জেমসজয়েস কেউ আলামোহন দাস অথচ কাউর জন্মের ওপর তার নিজের কোন হাত নেই কোন সুজুকির জন্মের পেছনে বুদ্ধের কোন হাত ছিল কি?

আমার সাহেব মেম বন্ধু বান্ধবীরা তোমরাও বাঙলা জানোনা জন্মসূত্রে যেমন অনেক বাঙালী জন্মসূত্রে জানে না ইংরেজি তোমাদেরও খিদে পায় বাড়ি খোঁজার সময় তোমরাও দ্যাখো পাইখানা বাথরুম আমাদের মত ভিয়েতনাম যুদ্ধের প্রতিবাদ করো তোমরা আমাদেরই মত অ্যালেন গীন্সবার্গ স্বপ্ন ও দুঃস্বপ্নের ভেতর দিয়ে দেখতে পান তাঁর কবিতার নদী তবু শালা আমি বাঙালি ম্যাক্সমূলার পড়ে জানবো শতপথ ব্রাহ্মণের ভগবান তাই সোম ও সুরা মানে সিদ্ধি ও মদ পান করবো একযোগে প্রায়শ সন্ধ্যায় আর বুদ্ধদেব বসু হাংরিদের নিরক্ষর বলে বীটবংশের ওপর লিখবেন ধীমান প্রবন্ধ-হায় আমার চিন্তার ভাষা কেন ইংরেজি হোলনা কেন আমার বাবা মা বাঙালী-হায় বাঙালী কেন বল তুই কবি হলি-
মধ্যনিশীথের নীল অন্ধকার নেমে আসে তোমার চোখের তারায় না আমি এখন তোমায় নগ্ন করবো না-তোমার জননেন্দ্রিয়ে রাখবনা আমি আর আমার শব্দের ইন্দ্রিয়-এখন রাসবেহারীর মোড়ে তুমি কিনতে পারো বেলফুল কিংবা পাতিরাম থেকে হাংরি-গ্রন্থ-কিন্তু না-তোমায় এখন আমি আর নগ্ন করবো না-
চারপাশে কেবলি গ্রন্থ-জ্ঞান-অক্ষররূপ ব্রহ্মের অস্তিত্ব এখন চারপাশে আভাঁগার্দ ফ্রেঞ্চফিল্মে দেখেছিলুম পুড়ে যাচ্ছে গ্রন্থ-কাফকা তাঁর পান্ডুলিপি পোড়াতে চেয়েছিলেন আমি আমার আত্মজীবনী পুড়িয়ে ফেলেছি আমি সীননদীর ধারে যাইনি কখনো আবসাঁৎ খেয়ে ঘুরিনি প্যারিসে আমি গঙ্গার ধারের ছেলে কালবৈশাখীর রাতে বিদ্যুৎ-কে ডেকে বলেছিলুম বিদ্যুৎ তুমি ঝলসে ওঠ আমি তোমার নীলাভা দেখবো গঙ্গার বুকে-আমি খ্রীষ্টের ক্রুশ আর র্যাঁবোর চোরাই চালান বন্দুক দিয়ে গান্ধি শতবার্ষিকীর দিন হেঁটে গেছি সশস্ত্র বিপ্লবীদের মিছিলে গোমাংস খেতে খেতে করেছি হরিনাম-এখন মাথায় নেশা নেই স্বপ্ন দিবাস্বপ্ন বা দুঃস্বপ্ন নেই দাঁড়িয়ে আছি চার্মিনার টানার উৎসাহ নেই-কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে বসে আছি আমি এক নিগ্রন্থ মানুষ-তুমি এখন যাও কিনে নাও বেলফুল বা কবিতার বই এমনকি তুমি এখন আমার বন্ধুর দ্বারা গর্ভবতী হতে পারো এখন আমি হব না প্রতিহিংসা পরায়ণ-তুমি যাও আমায় দেখতে দাও এখন মানুষের জন্ম তার পিতামাতার যৌনকামনার ফল ছাড়া আর কিছু না?

আমি এক সৌন্দর্য রাক্ষস
প্রজাপতির চিত্রল ডানা দেখে বিরহ হতে বিবাহের দিকে
চলে যায় মানবসম্প্রদায়-আমি এক সৌন্দর্য রাক্ষস
ভেঙে দিয়েছি প্রজাপতির গন্ধসন্ধানী শুঁড়

আমার নিজের কোনো বিশ্বাস নেই কাউর ওপর
অলস বদ্মাস আমি মাঝে মাঝে বেশ্যার নাঙ হয়ে
জীবন যাপনের কথা ভাবি যখন মদের নেশা কেটে আসে
আর বন্ধুদের উল্লাস ইআর্কির ভেতর বসে টের পাই ব্যর্থ প্রেম
চেয়ে দেখি পূর্ণিমা চাঁদের ভেতর জ্বলন্ত চিতা

এখন আমি মর্গের ড্রয়ারে শুয়ে আছি-এক মৃতদেহ
আমার জ্যান্ত শরীর নিয়ে চলে গ্যাছে তার
শাখাভাঙ্গা বিধবার ঋতুরক্ত ন্যাকড়ার কাছে
মর্গের ড্রয়ারে শুয়ে আছি-চিতাকাঠ শুয়ে আছে বৃক্ষের ভেতর
প্রেম নেই প্রসূতিসদনে নেই আসন্ন প্রসবা স্ত্রী

মর্গের ড্রয়ারে শুয়ে আছি
এ ভাবেই রয়ে গেছি কেটে যায় দিনরাত বজ্রপাত অনাবৃষ্টি
কত বালিকার মসৃণ বুকে গড়িয়ে উঠল মাংস ঢিবি
কত কুমারীর গর্ভসঞ্চার গর্ভপাত-সত্যজিতের দেশ থেকে
লাভ ইন টোকিও চলে গ্যাল পূর্ব আফরিকায়-মার্কস স্কোয়ারে
বঙ্গ সংস্কৃতি ভারত সার্কাস-রবীন্দ্রসদনে কবিসম্মেলন আর
বৈজয়ন্তীমালার নাচ হ’ল-আমার ত হ’ল না কিছু
কোনো উত্তরণ-অবনতি কোনো-

গণিকার বাথরুম থেকে প্রেমিকার বিছানার দিকে
আমার অনায়াসে গতায়াত শেষ হয় নাই-আকাশ গর্ভ
থেকে তাই আজো ঝরে পড়ে নক্ষত্রের ছাই পৃথিবীর বুকের ওপর
তবু মর্গের ড্রয়ারে শুয়ে আছি এবং মৃতদেহ আমার জ্যান্ত শরীর নিয়ে
চলে গ্যাছে তার শাখাভাঙা বিধবার ঋতুরক্ত ন্যাকড়ার কাছে
প্রজাপতির চিত্রল ডানা দেখে বিরহ থেকে বিবাহের দিকে চলে যায় মানুষেরা
আমি এক সৌন্দর্য রাক্ষস ভেঙে দিয়েছি প্রজাপতির গন্ধসন্ধানী শুঁড়

বেক্তিগত বিছানা

বেক্তিগত বিছানা

১। শুধুই রাধিকা নয়-গণিকাও ঋতুমতী হয়
তিন সন্তানের পিতা-পরিবার পরিকল্পনার আদর্শপুরুষ
কৈশোরে করে থাকে আত্মমৈথুন-করে না কি

২। আমি রবীন্দ্রনাথ হতে চাই না-হতে চাই না রঘু ডাকাত
আমি ফালগুনী রায় হতে চাই-শুধুই ফালগুনী রায়

৩। আমি যে রাস্তায় থাকি তার একপ্রান্তে প্রসূতিসদন অন্যপ্রান্তে শ্মশানঘাট
বিশ্বাস না হয় দেখে যেতে পারেন-বাস রুট ৪, ৩২, ৩৪, ৪৩

৪। ম্যাগাজিন শব্দটি আমি লক্ষ্য করেছি রাইফেল ও কবিতার সঙ্গে যুক্ত

আমরাই রেনেসাঁ ও রেজারেকশন ?
শরীর বিনষ্ট হ’লে ব্যাধির প্রকোপ কি ভাবে সম্ভব
সাড়ে বারোটার রোদ্দুরে ভোঁ বাজলে কারো টিফিন হয়-হয় কারো
রবীন্দ্রসঙ্গীত শোনার সময়-কালাদের রবীন্দ্রসঙ্গীত শোনার
দরকার পড়ে না-অন্ধদের দরকার পড়ে না ব্রাকপিকাসোর ছবি দ্যাখার
কাকমত না মর্কটক্রম-পূর্বজন্মের সুকৃতি না বর্তমানের কর্ম-কোন
ফলে আমি সিদ্ধ হব-কে বলে দেবে-হঠ ভক্তি জ্ঞান রাজ
কোন যোগী রয়েছে কোথায় মন্বন্তর শেষে আবির্ভূত মনু
যাঁর জামাতা মহামুনি কর্দম নিজের স্ত্রীর বক্ষোদেশ দেখে পেতেন
যৌন আকর্ষণ এবং তিনি রেচক পুরক কুম্ভক করে কুণ্ডলিনী শক্তিকে
করতেন জাগ্রত-বীর্যমোক্ষণের পর আমার জাগ্রত লিঙ্গ নেতিয়ে পড়ে খুব
তখন ভাবাই যায় না এটা অই ‘ভাবে’ দাঁড়াতে পারে-মেরুদণ্ডের
ভেতর দাঁড়িয়ে থাকে মানুষের আত্মপ্রত্যয়-তবু মানুষ কুঁজো হয়ে যায়
শ্রীমদ্ভাগবৎ পড়ে কেউ পুণ্য সঞ্চয় করে-কেউ ভাইবোনের
যৌন সংগমের সংবাদ পায় অই ধর্মগ্রন্থ পড়ে-পোয়াতীর পেট থেকে
বেরিয়ে মেয়েরা ফের পোয়াতী-লিঙ্গদ্বারে প্রকাশোন্মুখ
মানুষের ভ্রুণ-ভ্রুণ তুমি কি কথা বলতে পারো-চিন্তা ক্ষমতা
আছে কি তোমার-হায় আমি আর পাবো না ফিরে আমার
ভ্রুণের জীবন হায় আমি আর পাবো না ফিরে আমার
হারানো জীবন হায় আমি আর পাবো না ফিরে আমার
শহীদ ভায়ের জীবন হায় আমি জীবনকে ভালোবেসে ভুলে যাই
মৃতদের-মৃতদের কথা ভাবতে ভাবতে জীবিতদের ভুলে যাই
একটি মেয়ের প্রেম পেয়ে ভুলে যাই আরেকটি মেয়ের প্রত্যাখান
এ ভাবেই বড় হই আমি বেড়ে উঠি-আমার আঁতুড় ঘরের আয়তন
বাড়ে না একটুও-এ
                                                                          
-----------------------------------------------------------------
কবিতাঃ~
মলয় রায়চৌধুরী
টুথব্রাশে লেগে থাকা কবিতা
এ তো হে বিশাল অট্টালিকা, একেবারে ফাঁকা আলো
ভাড়াভাষাহীন পড়ে ; ফেলে-দেয়া টুথব্রাশগুলো
নানান উচ্ছ্বাস নিয়ে কোণে-কুলুঙ্গিতে ঠেস দিয়ে
কত কন্ঠস্বর নিয়ে ওরা কেন যে নিস্পৃহ বেজার
ফোকলা বা দেঁতো মাতালের কিংবা সাঁই-বিরাগিনী
বেহেড রবীন্দ্রগান দলবাজ মস্তানের খিস্তি-স্লোগানসহ
ক্ষুণ্ণ মহিলাদের সাংসারিক খুনসুটি-মাখা রুখাশুখা
পড়ে আছে টুথব্রাশগুলো প্রতিটি বরাদ্দ টয়লেটে
কেবল একটি টুথব্রাশে আর ব্রাশের অংশ নেই, তার
কবিতার স্মৃতি ঝরে গেছে  অট্টালিকাবাসিনীর সাথে ।
--------------------------------------------------------------


সু বী র স র কা র
মা সু দ না মা
১।
গাছের ডাল কেটে যাত্রা শুরু
নদী থেকে তুলে আনা ভেজা
                 বালি
শস্যদানা ছড়িয়ে দেওয়া হয়
হা-মুখ।জলে ডুবছে নাচগান।
বিরাট গর্ত পেরিয়ে কলাইখেত
ডুগডুগি বাজাতে থাকা হাট ঘুরে
তুলে আনা ঢেকিকচুবন
২।
মাজারে মাজারে ঘুরি,মোনাজাত করি
আইলে আইলে আইল কাশিয়া
ওসমানপুর থেকে বাঘ ডাকলে
বারকান্দির ধানমাঠ তা শোনে
ফসলের ঢেউ গুনি বাঁশের মাচায়
                শুয়ে
৩।
যে রাস্তায় কাশফুল তুই কি সে
                 রাস্তায়
ছোট যমুনায় সালতি ভাসে
সেতু থেকে নামতেই ভূট্টার
               থোপ
মাটিলেপা উঠোন,নিসর্গের বদলে
বিকৃত আয়না নিয়ে সেলুনটি
              জাগে
৪।
ইলিশভাজার গন্ধে আলোকিত উঠোন
জায়নামাজ গুছিয়ে রাখা
             জুম্মাঘর
পাখিরা অধিগ্রহন করে বকফুলগাছ
জিরেহলুদমাখা
         তিন বউ
হাঁসেরা পদযাত্রী হয়ে শীতলতা মাখে
সোনাপাড়ার দিকে অধিকাংশ বেড়াল
সাপে কাঁটা রুগীর মতো
            বিপন্নতা
তুমি কি বিষন্ন হতে জানো!

করতোয়া পেরোচ্ছেন জাদুকর
কাঠের পুতুল,বাদামভাজার
               গল্প
৫।
অথচ বাচ্চাটি জলে ডুবে যাচ্ছিল
সমস্ত মেঘের স্তূপে শোক
শান্ত বাড়িটি জুড়ে আহাজারি
কি ভাবে ফিরতাম আমি
বৃষ্টিপরিখায় চন্দনটিপ ফেলে!
শ্লোকে ভাসে স্নানঘর,আন্ধারনামা
৬।
কোথায় লালদীঘি,কোথায় পাচবিবি
হারাবতী কোলে আঞ্চলিক টুপি
ফেরাতে পারো পান্ডুলিপি,টি-শার্ট
পীরগঞ্জের ঘোড়া কেশর ফুলিয়ে
                 রাজশাহী
৭।
পার্শ্ববর্তী ফড়িঙেরা মাইল মাইল এভাবেই
অধুনা প্রশ্ন উঠছে মজ্জাগত ঘুমে
মুড়িঘণ্টে মাছের
          কাঁটা
অন্যমনস্কতায় ভাসিয়ে রাখছো সীমান্ত
জয়পুরহাট থেকে টেলিফোন আসে
নদীপ্রসঙ্গে পোস্তদানার
             ভর্তা
পিনকোড ভুলে গেছি
             আমরা
৮।
আঙুলে ব্যাথা পাওয়াটাও বিদায়দৃশ্যের
                     অংশ
বন্ধুর সানগ্লাস আমার দু’চোখে
শূণ্যমাঠে গড়িয়ে যাওয়া
              রাত
জাঁকিয়ে বসেছিল বেতারতরঙ্গ
দেওয়ালে চিত্রকলা।
বিস্তারিত হবার অবকাশ নেই
বিবৃতিধর্মী এক জীবন,যেমত উড়ে আসা
                     ছাই
৯।
বাজনার ভিতর বিবরণ বাজছে
বিলাসিতার জন্য কত আয়োজন
খোলা পিঠে ভায়োলিন রাখা
বিকেলবাজারে তোর গুচ্ছ চুল
অসামান্য তিল নিয়ে ঘোড়াঘাট
১০।
কাদাপানিতে হাঁটু ডুবে যেতে চায়
লিখে রাখিস অতিক্রমের
              ইতিহাস
চাঁদের আলোয় বেতারসংবাদ
হাঁস ও হাসি জায়গাবদল
              করলে
সাধারণ দূশ্যে ঘাটের সিঁড়ি
১১।
মেঘের ভেলায় দাঁড়িয়ে শ্বাসকষ্টের খবর শুনি
সুদূর ঢেকিঘর।চিকন ধানের
                চিড়া।
মৃদু ধাক্কায় রুমাল নড়ে
সাবেকীয়ানা ভাঙছে পেঁয়াজের
                 ঝাঁঝ
যারা ভ্রু কুঁচকে গল্প চালিয়ে যায়
যারা মুখ ঘুরিয়ে দেখে গা-ডোবানো
                   মহিষ
ইটপাথরের বাড়ি।সুরা
            ও
            সূর্যোদয়
তালসুপুরির সারি,উঠোনের
              হাঁস
ঠোঁটে গান,একাকী
          হরিনশিকারীর
১২।
শুধু দৃশ্যের ওপারে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়
কুয়াশায় কেউ পেতে রাখছে চেয়ার
জীবনটা মেঘের মতো কেন?
ধ্বনি কমে আসে।শূণ্য
             সিঁথি।
আসমান জমিনের কথকতা
সীমান্ত পেরোবার পর পুনশ্চ
সোনাপাড়া,বেদনারহিত-
১৩।
রহস্য ঝুলেই থাকে।চাঁদের
প্রপাতে ফটোকপি মেশিন
জটিল জঙ্গল,কাঠবাংলো
হাসির মধ্যে মেঘ
অগুন্তি ইঁদুর আসে
        ডুগডুগি হাটে
১৪।
যাদুঝোলা নিয়ে সটান বারান্দা
                 বৈঠক
রিলিফ খুঁজছি সাওতাল পাড়ায়
ইথারে ভেসে আসা হাঁকডাক
ঘুরপথে ঘোড়াঘাট।করতোয়া
              সেতু।
১৫।
দ্রুতগতিতে ঝাঁপিয়ে পড়লো তারা
হাড়ের গায়ে বিচিত্র গল্প
পরকীয়া বাজা রে মাসুদার
বর্ষা ঢুকছে।নির্লিপ্ত
         শ্লোক
১৬।
সুমাত্রার এলোখোঁপায় তুই দিলি চিরুনী!
মেঘশিকারের দিন,ধানকল
বারান্দা নির্জন মানে ঠোঁটে কামড়

টুপি নেমে আসছে কপালে।
১৭।
কমা ও ফুলস্টপ এমন বিরতিহীন দিনে
হাইফেনের দু’পাশে একটানা
               জনাদেশ
পাঁক ঘেটে আনা কইমাগুর
যাচ্ছি নিকড়দীঘি।
আড়ালে লোক হাসানো
            অপেরা
১৮।
তোর অসুখ না থাকলে গান
গোড়ালির ব্যথায় হাঁটতে পারি
                 না
প্রচুর ঘাস হবে নদীখাতে
হলুদবর্ণ দিনকাল
শালিক হারাচ্ছে শোলকচুর
              ভুঁই
১৯।
প্রায় শেষ হচ্ছে শীতকাল
কুয়াশা নেই,চালতাছায়ায়
উরুতে ঘাঁ নিয়েই হেঁটে
             আসে
কাঁকড়া,কাছিম ও
         বনবিড়াল
২০।
ভাঙন ও ভুমিক্ষয়
মাঝখানে হিলি সীমান্ত
মরচেধরা রেললাইন
হেডলাইটের আলোয়
দেখি মিঠু ও
       লালনভাই

টুপি নেমে আসে কপালে

২১।
বাঘ ডাকের দেশে আগুন জ্বলে
কষ্ট দিতে শুরু করলি আবার
কিনার কিনার হাঁটি
নতুন করে জেগে ওঠা শোক
হাত বন্দুক।পাখি পুড়িয়ে
             খাওয়া
২২।
গভীর ফাটল থেকে উঠে আসা
বন্ধু তুই।অনতিদূরেই মোলান
বাজার।হেলথসেন্টার।দুপুরআলোয়
তুলি কাশফুলের ছবি।তবে তো
পালাতে হবে হাসপাতাল থেকে!
বিষয় খুঁজছি।আর তোর হাতে
                 নরম
পালক।
-------------------------------------------------

জলে টলমল চাঁদ
 অমিতাভ দাশ
জলে টলমল চাঁদ আহত আহত
আমি হেঁটে যাই টানা, দৃষ্টিহীন নিহত...
পাতা-ছলছল শেষ-শীত ফাল্গুনী রাতে --

 আচ্ছন্ন গোধূলি যৌবন-রূপে জ্যোৎস্নায়
মরালীর ডানাচোঁয়া আলো মেখে রাত
 অশরীর প্রেত যেন !
তারায় তারায় খুঁজে যায় দেখা, আর জনমের...

নিশ্বাস নিতে ভুলেছে হাওয়া, পদ্ম ঘুমে,
 স্বপ্ন এখনো আশ্চর্য সম্ভাবনায়!
 চন্দনের বনে মড়মড় মড়মড়...
পাতার ডানা-ঘষা আক্ষেপে আক্ষেপে
 প্রলেপ শিশিরের, -- তাও উচাটন মন !

 তাই, জলে টলমল চাঁদ আহত আহত
হলেও -- কাঁপে চোখ থরথর প্রত্যাশায় নিয়ত!
 মুখ তার দেখব...একবার...অন্তত একবার!
অনেকবার না হলেও...

একবারই সই!
একবারই সই!
 একবারই সই!
--------------------------------------------
মাসুদার রহমান
বাঘ সংস্করণ

বাঘ ডেকে উঠতো কায়মদ্দিন নানার গল্পে । ধানখেত ও কুয়াশা পেরিয়ে
শুকনো বাঁশপাতার জঙ্গলে বাঘ এসে দাঁড়িয়েছে
                                                  বাতাসের শব্দে তাই বুঝতাম
 পৌষের শীত; লেপের গুহায় ভয়ে কুঁকড়ে গেছি।
                                                    মাছধরা জাল দিয়ে 
বস্ত্রহীন মানুষের শীতকাল  কি করে যাপিত হয় তখনই জেনেছি

পৃথিবীতে শীতকাল এখনো আসে
                                 হাতে ধরা কমলালেবু কাশ্মিরি শাল

হোণ্ডা হাঁকিয়ে আসে কৃষকের ঘরে ও গোয়ালে
                                               বাঘ নয় গরুচোর

সিনেমা

ডাকবাংলোর পাশে ফিল্ম-মেকারের তাবু; বিশাল ট্রাকের চাকা মুখভারি
এবং ঝিমানো
ক্যামেরা ও ছড়ানো শুটিং সামগ্রী...নায়কের হেঁটে আসা...
নায়িকার খোলা চুল হাওয়ায় উড়ছে...

এতোসব দৃশ্যের মাথায় সূর্য ঝুলিয়ে দিয়ে দুপুর রাখলাম
তাহলে দুপুর এবং রোদ...শুটিং চলছে...
তাহলে ডিরেক্টর সাহেবের মাথার উপর একজন আবদারি ছাতা ধরতেই হবে
কেন না দৃশ্যটি বরাবরই চিত্রায়িত

বাংলোর বন্ধ ঘরে এক ছায়ামূর্তি গবাক্ষের ফাঁক গলে দেখছে এইসব

যাকে কেউ দেখছে না সেই তো ঈশ্বর
-----------------------------------------------
সজল সমুদ্র

যাপন

পোশাকের নীচে বাঁচি, এখন হাঁটতে পারি সুতোর উপরে;
মুঠোভর্তি নিঃশ্বাস থেকে তুলে রাখছি দু-একটি শ্বাস
আঙুলের ফাঁক গলে যা কিছু পড়ে যেতে পারে;

নিজেরই আঁকানো নদী, তবু গুছিয়ে নিচ্ছি হাঁটুজল
                        ঢেউ ও সাঁতার;
বিশ্বাসের অটুট তীর লোকে বলে অলক্ষ্যে খসে যায়

একটা জীবন, কত-না কাঠের ক্রন্দন মিশে যাচ্ছে
                                                       আলকাতরায়...



জীবনী

সম্পূর্ণ সরিষার ক্ষেতে একা যে বাদামগাছ, তারই কথা ভাবি।
তোমাদের কোনো গ্রন্থেই যার জীবনী কোনদিন স্থান পাবে না।
বনভোজনের নামে যত ছবি, উন্মাদনা- তার সব সরিষাফুলের।
তোমাদের আফসোস, তোমাদের স্মৃতি-বিস্মৃতিজুড়ে তার কোনো চিহ্ন থাকবে না ।
তবু উপলক্ষ্যহীন, শুশ্রূষাহীন সে দাঁড়িয়ে থাকলো, নির্ভার ।
অপমৃত্যু যতদিন না-খোলে তার দ্বার...

অনর্থ সমস্ত গল্পের একদিন জীবনী বেরুবে...


গরিমা

বর্ম নাই, মন্ত্র নাই- একটা জীবন গেল গোখরা সাপের পিছে ছুটে ।
নানান ফুলের ছদ্মবেশে, বহু বৃক্ষের আগ্রহে দাঁড়িয়ে পড়ার
কত যে ইশারা ছিল, উৎসাহ ছিল !
বুঝি নি, আধপোড়া মোম গন্ধই ছড়ায় বেশি আলো ও উজ্জ্বলতার চেয়ে;
দুপুরের বৃষ্টি রাতের মত অতটা উপভোগ্য নয়, স্মৃতিকাতর নয়...

মাছরাঙা হলে, নিশ্চিত এতদিনে ভেঙে যেত ঠোঁটের গরিমা...
---------------------------------------------------
বাপি গাইন
টব
কতটুকু পারি দিতে
বড়জোর পোষাক শ্যাম্পু সাবান
বাসস্থান পর্যন্ত ঠিকঠাক

তোমাকে সম্ভব হয়।

 এর বেশি কোনো আবিষ্কার পারিনা ।
দারিদ্রসীমার নীচে
অনুরোধ করা ছাড়া আর কোনো
ব্যর্থতা ফোটাতে পারিনা প্রদর্শনীতে ।

 শুধু লোকগুলো ফিরে গেলে
 ঈর্ষা ফিরে গেলে সব
 আলো নিভিয়ে হলঘরে
 একা বসে থাকে ভাঙাচোরা টব ।
--------------------------------
অরূপম মাইতি
আমি নেই
নিঝুম দুপুর, সেদিন ছিল সপ্তমী
 পূবের গরাদে আমি দাঁড়িয়ে
চোখ জোড়া পথের দিকে ।
কাঁচা সবুজ কাপড় গায়ে
সিঁদুরে রাঙিয়ে সিঁথি
সেই প্রথম তোমাকে দেখা ।

 সে জানলা এখন আর নেই
 আমার দোতলা উধাও হয়ে গেছে।
 সেখানে এখন বহুতল দাঁড়িয়ে
অনেক গরাদে অনেক চোখ
তারা বুঝি তোমাকে দেখে
সেই পথ, সেই তুমি
সবই রয়েছে ।
 নেই শুধু আমি ।
-----------------------------------------------
সুমন মল্লিক
গুঁড়ো গুঁড়ো অপূর্ণারমান

 ঘনপলাতীতে জহরব্রত হচ্ছি সাদামাটাভাবে ;
দুঃখের তম্বুর খুঁজে পাচ্ছি না...শুধু পুড়ছি...শুধু পুড়ছি...!


আমার স্বপ্নের ধর্ষক আমিই ;
ঈশ্বরের নেকনজর পড়ুক না পড়ুক, আমি অশুদ্ধই থাকতে চাই !

 বরাঙ্গনা শরীরে বিভোর থেকেছি পল্ পল্ ;
খুঁজে পাইনি কোন বরয়িত্রী !

 নষ্টপ্রেমের বিষদুষ্ট আশ্লেষে ঘেরাও থাকি ;
তবুও বহুচেষ্টাতেও ফাটাতে পারছি না বিষণ্ণচিত্তবোমা !


ইচ্ছের ভ্রূণসেনা মার্চ করছে ঘরে ;
কিন্তু অস্ত্রের খোঁজে আমার ছদ্মবেশ যাত্রা শেষ হচ্ছে না !


প্রাচীনপ্রেমিকা আর অর্ধাঙ্গিনীর রাইভাল চলে রোজ ;
আমি রমনে ডুবি আর খুঁজি নিস্তার...!


কবে থেকে বসে আছি কোরাকাগজ নিয়ে ;
অগ্ন্যুৎপাত-কলমে এখনও এলো না স্ফুলিঙ্গ কবিতারা !



রাইসঙ্গ

মুগ্ধাবেশে জারিত হয়ে চলেছি প্রতিদিন
আর ঋণরক্ত বয়ে চলেছে ফকির মনে

আমার আস্তিত্বের জানান
আমার কোষে কোষে কবিতার রুহুমন্থন
আমার ছদ্মবেশ কলমখেলা
আমার একাকীত্ব, আমার পাগলামী
আমার বেঁচে থাকার রসদ
সবই তো সেই রাইসঙ্গের দেন

আমার ঘুম না আসা রাত
আমার ভবঘুরে দিনযাপন
আমার স্বপ্নের খোলস ছাড়া
আমার বেশুমার আবেগোল্লাস
আমার ক্ষুধাতুর চোখের প্রলয়
সবই তো ঋণগ্রস্ত

আমার নষ্ট প্রাণের ওমযজ্ঞ
আমার গাঢ় বিশ্বাসের অধিকার
আমার ফোঁটা ফোঁটা অনুরাগ
আমার ধ্বংস হবার মহড়া
আমার গোপন গোধূলির ফরমান
এসবও তো খুঁজছে মুক্তি

এক আকাশ সূর্য মেখে জড়িয়ে আছি রাইসঙ্গে
সমুদ্রের সহস্র ঢেউয়ের মতো যেন ভাসছি আর ভাসছি
অনন্তকাল                                                 

----------------------------------------------------------------
 রেবা সরকার
ভোর বেলা পাখি ডাকে

খুব কাছাকাছি এসেও আসা হয়না
নীলের দেশে হারিয়ে যেতে যেতে--ক্লান্ত
ফিরে চায় যৌবনের ঘর--
ফেলে আসা সুখ-দুখের সময়
কখনো আমি .....
রাত জেগে বসে থাকি
ঘড়িতে চেয়ে.....
ভোর বেলা পাখি ডাকে
বাঁধাধরা নিয়মে স্বরলিপি
দিনের আলোয় স্বপ্নেরা মাথা নিচু
কখনো বা পাগলামির পাগলা হাওয়ায় মেতে উঠি
সেবিকার জীবন পুঞ্জি -- সেবিকার আরোগ্য নিকেতন
এক মুহূর্তের টুকরো ঘূ্র্নিবাতাসের মৃত্যুদন্ড--
মেনে নিতে নিতে-- জীবনের স্রোত
কুয়াশা নদীতে আগুন কুয়াশা...

দাঁড়িয়ে দেখেছি .. গ্রামের নদীটা....
ওপারের ভিটেমাটি গ্রাস করে
বছরান্তে এখনো চৈত্র বাতাসের স্নান
ভিড় ঠেলে ডুব দেয় পানকৌড়ি মাছ..

আমি দেখেছি... সংক্রান্তি শীতল নদী...
মাভই শীতের গন্ধ...
তিরতিরে বয়ে চলা কিশোরীর দল...
সর্ষে হলুদ ফুল....

বাবা বলতো-- যাবিনা ওপারে...
পায়ে কাঁটা ফুটবে
গম পাতার আঁচরে ছিড়ে যাবে গা

বাবার ঘুম, কাঁঠাল তলার খাটিয়া বিছানা
নদীটা খেয়েছিল
হাত ছানিতে-- এখনো অঙ্ক কষি--যখন,
শীত কালে শুনতে পাই পলাশ রঙবাহার
মেঘলা কুয়াশায় মেতে উঠে.... মনের জানালা
চোখ বন্ধ করে থাকি....
খুঁজি চোখ -- ঘুমের চোখে......
---------------------------------------------------------------------
  ছোটগল্পঃ                                      শবরী রায়
                                               লুনাটিক

উফফ্ ...।চোখের ওপর আবার সেই মুখ ।অনেক চেষ্টায় ঘুম এসেছিল,ঘুমিয়েও পড়েছিল,আবার জেগে ধড়মড় করে উঠে বসল ।পুরো ঘেমে গেছে ,গরম নেই--ঠান্ডা পড়তে চলেছে। চোখে মুখে জল দিয়ে এল লুনা ।মুখ ধুতে গিয়ে আবার বমি পেয়ে গেল,ওয়াক্ ওয়াক্ করল,একটুও বমি এল না ।মুখ ধুয়ে আবার বিছানায় এল । জেগে ,ঘুমিয়ে সেই মুখটা সরাতে পারছেনা সে ।শুধু মুখ নয়,রোমশ একটা হৃষ্টপুষ্ট শরীর,ঝুঁকে আছে মুখের ওপর,বুকের ওপর।চোখে সরে যাওয়া অন্ধকারে সে দেখল পাশ ফিয়ে শুয়ে আছে অতনু ।ঐ মুখটার হাত থেকে নিষ্কৃতি পেতে অতনুকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে ওর পিঠে মুখ গুঁজল ।চোখ বন্ধ করেও নিষ্কৃতি নেই ।
          অন্য কথা ভাবার চেষ্টা করল ।একেবারে সাধারণ মেয়ে লুনা,বরাবর অঙ্কে কাঁচা,কখনো টোটালে ফিফটি পার্সেন্টের  ওপর পায়নি সে ।অঙ্কে কাঁচা হলেও কখনো কখনো কেউ কেউ অন্যান্য সাবজেক্টে ভালো হয়,হিস্ট্রি ,জিওগ্রাফি বা সোসাল স্টাডিজ,সে তাও নয় ।হিস্ট্রি পড়তে যেমন খারাপ লাগত,ভূগোলের জ্ঞানও তেমন সীমিত ।এমনকি 'ডান-বাঁ জ্ঞান নেই',পিসিমনি বলেন ।'থোবড়ার জিওগ্রাফিটাও যদি তোর আর একটু ভালো হত',পিসতুতো দাদা রন্টুদা বলেছিল একবার ।'মেয়েদের আবার কি,বুক আর মুখটা ভালো হলেই বাজারে কেটে যাবে ,তোদের আর কি চাই !' দু'বছরের বড় রন্টুদার একথাতেও রাগ করেনি লুনা । পিসিমনি তো বলেন ,'ছেলেরা সোনার আংটি,বাঁকা হলেও চলে '।পিসিমনির ছেলে এমন বলতেই পারে ।লুনা হাসে,রন্টুদা ওকে 'লুনাটিক' বলে ডাকতো ।লুনার মা ছিলনা,পিসিমনির  কাছেই মানুষ ।বাবা আর একটা বিয়ে করে নিয়েছিলেন।পিসেমশাই ,ঐ একজন  বড়ো ভালোবাসতেন,ভাবতেই চোখের কোনে জল এল তার ।এজন্যই তো লুনাকে রন্টুদা 'লুনাটিক' বলত,'যেসব কথায়  লোকে ধেই ধেই করে নাচে, সে কথায় গুম মেরে গেলি ? থুম্বা মেরে রইলি তিন দিন ধরে ।রাগ হলে আবার ফ্যাঁচ ফ্যাঁচ করে কাঁদিস মাঝে মাঝে,সত্যিই তুই লুনাটিক -এবার ঠোঁটের ফাঁকে  হাসি ফুটল,এই হাসি-এই কান্না' -রন্টুদা বলত ।
            অতনুর মতো বর পাওয়া লুনার মতো মেয়ের ভাগ্য ।আড়ালে আবডালে এ নিয়ে সবাই কিছু না কিছু বলতো,লুনা তা জানে ।লুনাকে যে কেন বিয়ে করেছিল লুনাও কি ভাবেনি প্রথমে !হঠাৎ করে ঠিক হয়ে যাওয়া বিয়ে,অভাবিত সৌভাগ্যে নিজেও কি দুলে ওঠেনিট!'জন্ম ,মৃত্যু ,বিয়ে- এই তিনটে বিধির নির্বন্ধ' ,যতরাজ্যের প্রাচীন উক্তির স্টক পিসিমনির একেবারে পরিপূর্ণ,যখনই সুযোগ পায়,একটা ছেড়ে দিলেই হল ।লেখা -পড়ায় খারাপ হতে পারে লুনা,কিন্তু কোন অন্ধসংস্কার ওর মধ্যে একেবারেই নেই,পিসেমশাই -এর কারণেই এটা সম্ভব হয়েছিল,ভাবে সে ।বিয়ের দু-তিনদিনের মধ্যেই বুঝে গিয়েছিল অতনু তাকে মোটেই পছন্দ-টছন্দ করে বিয়ে করেনি ।অতনুর মন জুড়ে তৃষা । কোন কারণে মারাত্মক ভুলবোঝাবুঝি ।দুজনেই বাড়ির দেওয়া বিয়ে করে নিয়েছে ঝটপট করে,এইসব ভুলবোঝাবুঝি কি থাকে?ওদের মিটমাট হয়ে যাওয়ায় দুটো সংসারই দুলছে তখন থেকে ।ভালো না বাসলেও প্রথম প্রথম অতনু হাতের কাছের শরীরটা যখন-তখন ব্যবহার করছে,আর পাশ ফিরে ঘুমিয়ে পড়েছে তৎক্ষণাৎ ।লুনার শরীর জেগেছে । মনও ।
            ঐ প্রথম মন খারাপের শুরু লুনার ।কেন যে তার মা নেই , কেন যে বাবা থেকেও নেই ।এই পুরনো না পাওয়া গুলোর বোধ এতদিনে কেন যে জাগে সে বোঝেনা ।বুকের মধ্যে গুমরে গুমরে মেঘ ডাকে তার ।রাত বালিশে মুখ গোঁজে ।শাশুড়ি লুনাকে খুব ভালোবাসেন । তাঁর যত ভালো ভালো গয়না লুনাকে পরিয়ে পরিয়ে দেখেন । সত্যি আজব কথা । শাশুড়িরা আবার বৌ-দের ভালোবাসেন নাকি । আদর যত্নে লুনার ফর্সা ত্বকে জৌলুস এসেছে ,লুনার হাসিটা ভারি মিষ্টি ।সুন্ধর শাড়ি গয়নায় বেশ ভালো দেখায় তাকে আজকাল ।সবাই বলে ,কী সৌভাগ্য লুনার !শাশুড়ির মনে কি কোন অপরাধ রয়েছে ?লুনা এসব ভাবনাকে প্রশ্রয় দ্যায় না ,মন থেকেই মা বলে ডাকে  তাকে ।দুজনে মিলে নতুন কোন ভালো মুভি এলে দেখতে যায় ।অতনুর সময় নেই,এমনি চাকরী,প্রতি সপ্তাহেই ট্যুর ।শনি-রবিতে ছুটি থাকেনা কখনো কখনো ।বিয়ের প্রথম দুমাসের মধ্যেই কনসিভ করে গিয়েছিল ।মেয়ের জন্মের তিনমাসের মধ্যেই শাশুড়িও চলে গেলেন হঠাৎ করে। ছোট মেয়ে, সংসার নিয়ে হিমসিম লুনা ।শাশুড়ির অভাব খুব বেশি অনুভব করে সে,মাঝে মাঝে মনে হয় অতনুও তত অনুভব করে না ,প্রয়োজন আর ভালোবাসা মিলেমিশে থাকে?এতসব জানে না সে ।
                     অতনু এখন  তৃষার সঙ্গে মেলামেশার ব্যাপারটা বিন্দুমাত্র লুকোয় না ।লুনার সামনেই নির্দ্বিধায় ফোনে কথা বলে ।ঘরে-বাইরে যেভাবে ওরা  সম্পর্ক বজায় রেখেছে,লুনার তাতে  বলার কিছুই নেই ।লুনা কাকেই বা বলবে,আর যাবেই বা কোথায় । মেয়ে ধীরে ধীরে বড় হচ্ছে,মাকে সে তেমন পছন্দ করে না ।সময় দিতে পারেনা বলে তার বাবা রাশি রাশি  জিনিসে ভরিয়ে দেয় মেয়েকে সবসময় ।বাবা-ই তৃণার সব ।এই তৃণা নামটাও তৃষা রেখেছে,লুনার একদমই পছন্দ ছিলনা,যদিও তার নামের সাথেই মিলিয়ে ,তবু নামটা যেন কেমন খোঁচা খোঁচা ঘাসের মতো তার বুকের  মধ্যে বেঁধে ।
                 স্কুল থেকে ফিরতে আজকাল মেয়েটার সাড়ে তিনটে বেজে যায় ।বেশ খানিকটা সময় পায় লুনা ।সময় কাটাতে সবার মতো সোশ্যাল নেট-ওয়ার্কিং সাইটে টাইমপাস করে ।ঘরের কাজ করে অবসর সময় টিভি আর ল্যাপটপই তার সঙ্গী ।অতনু তার বাতিল করা একটা মোটামুটি ভালো ল্যাপটপ তার আটবছরের মেয়েকে দিয়েছে ।তৃণা থাকলে ওতে হাত দেওয়ার সাহস লুনার নেই ।ঐ ল্যাপটপেই প্রসেনজিতের সঙ্গে বন্ধুত্ব হয় লুনার ।খানিক দ্বিধা থাকলেও ফোন নম্বরটা দিয়েই দিয়েছিল ।কি অসাধারণ গমগমে গলার স্বর !গায়ে কাঁটা দিয়েছিল ।মনে হল এই প্রথম প্রেমে পড়েছে জীবনে ।অতনুর উদাসীন উপেক্ষা,তৃণার তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য কোনটাই আর গায়ে লাগেনা ,বরং লুনা ওদের সঙ্গে আরও  অনেক বেশি ভালো ব্যবহার করতে পারছে ।প্রসেনজিৎ-ও বিবাহিত ।মাসখানেকের মধ্যেই ওরা দুজন দুজনের সব কথা জেনে ফেলেছে গল্পে গল্পে ।শরীরের গল্পও করে ওরা ।বত্রিশ বছর বয়স লুনার,আরো অনেক কম দ্যাখায় বয়সের তুলনায় ।শরীর তো আছে,শরীরের আকাঙ্ক্ষাও টের পায় ।সপ্তাহ খানেক ভাবল লুনা ,তারপর ঠিক করল প্রসেনজিতের সাথে দ্যাখা করা যাক ,সে তো প্রথম থেকেই পুরুষের আগ্রহ দ্যাখাচ্ছে ।সুযোগ পেলেই শরীর ছোঁয়া-ছানার কথা।
               একদিন সকালে তৃণা আর অতনু বেরিয়ে যাবার পর ধড়াস ধড়াস বুক নিয়ে,সুন্দর করে তৈরি হয়ে লুনাও বেরিয়ে গেল ।প্রসেনজিৎ গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করছিল কিছুটা দূরে ।গাড়িতে বসে প্রসেনজিতের দিকে তাকিয়েই দমবন্ধ হয়ে এল তার ।এই ভীষণ নাদুস নুদুস লোকটার এই রকমক অসাধারণ গলার  আওয়াজ!গলা শোনার পর বুঝতে পারল কি ভীষণ ভুল হল তার ।ঐ ফ্রেঞ্চকাট নিখুঁত দাড়ি,ডাবল চিন আর মাংসের ভেতর প্রায় হারিয়ে যাওয়া চোখ দুটোর দিকে তাকাতে পারছিল না সে,অথচ প্রোফাইল পিকচারে একজন বছর ত্রিশের হালকাপাতলা পুরুষের ছবি ছিল ,ঐ মাংসের নীচে কি ঐ চেহারাটাই ঢাকা পড়ে আছে?ভাবার চেষ্টা করল,চোখে পড়ল শার্টের ফাঁকে মোটা সোনার চেন,নাকে এসে ঝাপটা মারল মাস্ক-এর তীব্র গন্ধ,গা গুলিয়ে উঠল লুনার ।একটু যেতে না যেতেই বলল,'আজ একটু কফি খেয়ে বাড়ি ফিরবো কেমন?'
     'কি যে বলো,বাইরে রেস্তোরাঁয় কফি খেলে যদি কেউ দেখে ফেলে?তার চাইতে চলো হোটেলে গিয়ে বসি ।রুমেই আমরা আর্লি লাঞ্চ করে নেবো । একটু ওয়াইন খাবো এক সঙ্গে ।মেয়ে বাড়ি ফিরে আসার আগেই বাড়ি পৌঁছে দেবো তোমাকে ।' লুনা বারবার বলতে লাগল,'আজ থাক,আজ প্রথমদিন,পরে আর একদিন আসা যাবে' । অন্যদিকে তাকিয়ে গলার স্বর শুনলে যেমন ভালো লাগছিল,তাকালে তেমনি বুকের মধ্যে ঢিপ্ ঢিপ্ করছিল,এ আবার কে !
                শার্টের ফাঁকে আবার চোখে পড়ল চকচকে সোনার চেন,যতটুকু  দেখা যায় রোমশ শরীর,রোমময় হাত ।দু-হাতের আঙুলে কমপক্ষে ছ-সাতটা আংটি,আড়চোখে দেখল সে ।এ কোথায় এসে পড়ল ।পরিত্রাণের কথা ভাবছিল,ঝগড়াঝাঁটি না করে কী করে ব্যাপারটা  বোঝানো যায় । এসব ভাবতে ভাবতে পাঁচতারা হোটেলের চত্বরে ঢুকে গেল গাড়ি,যন্ত্রচালিতের মতো নামল ঘাড় নীচু করে ,দরজা খুলে ধরা উর্দি পরা লোকটির দিকেও যাতে চোখে চোখ না পড়ে সতর্ক হল সে ।তার 'ওয়েলকাম ম্যাম'টা ব্যঙ্গের মতো শোনাল ।চোখ নীচে,শূন্য দৃষ্টি,মন তোলপাড় ।মনে হয় দৌড়য় উলটো দিকে ।বাধ্য মেয়ের মতো প্রসেনজিৎ কে অনুসরণ করল ।স্বচ্ছন্দ ব্যবহার প্রসেনজিতের ।ঘরে ঢুকেই রুম সার্ভিসে ওয়াইন আর খাবার অর্ডার করল ।সোফার এককোনে সিঁটিয়ে বসল লুনা ।পরদাগুলো ভালোকরে টেনে দিচ্ছিল প্রসেনজিৎ ।'একি একি -থাক না,কী সুন্দর বাইরের আলো আসছে।' সামনে দাঁড়িয়ে রোমশ দুহাত বাড়িয়ে প্রসেনজিৎ বলল,'এসো,কী সুন্দর তুমি,আমি ভাবতেই পারিনি তুমি এতো সুন্দর !' দুহাত টেনে নিল তাকে চুমু খেতে শুরু করল আচমকা ।দু-এক সেকেন্ডের মধ্যে লুনার বমি আসতে লাগল ।ঝটাপটি করে নিজেকে ছাড়াতে চাইল লুনা । কামার্ত পুরুষের এমন আচরণ এর আগে কখনো দেখেনি সে ।ঘাড়,মুখ,কান,চুল কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে প্রসেনজিতের চুমুতে লালায় ভরে যেতে লাগল ।লুনা বলল,'আজ থাক।আজ না ,আজ আমার ভালো লাগছে না ।' 'দেখবে ভালো লাগবে',বলল সে ।'আমি দারুন আদর করতে পারি ।'বলেই লুনার বুকের আঁচল সরাতে চেষ্টা করল সে ,লুনা যথাসম্ভব প্রতিবাদ করতে করতে কেঁদে ফেলল ।থমকাল প্রসেনজিৎ। 'আমি তোমাকে ভালোবাসি' ,বলল সে ।'না দেখেই ভালোবাসলে ?'  'তোমায় ফোটোয় দেখেছি যে,তখন থেকেই বউকে আদর করার সময় তোমার মুখ মনে পড়ে,প্রমিস।'কুতকুতে চোখে জলের আভাস । 'আমি তোমার প্রেমে পড়িনি,এখন বুঝতে পারছি',বলল লুনা ।
 'ঠিক আছে,প্রেমে পড়ে যাবে একদিন,শরীরের ভালোবাসা হলেই ।এখন কাছে এসো ।'বলতে বলতে নিজেই শার্ট-প্যান্ট খুলতে লাগল সে । পাগলের মতো জড়িয়ে ধরে আঁচড়াতে কামড়াতে লাগল,এমন সময় দরজায় নক হল ,রুম সার্ভিস --ঝটিতি পোশাক গলিয়ে দরজা খুলে দিল প্রসেনজিৎ ।চোখে জল নিয়ে সোফায় বসে রইল লুনা ।ভাবল এই ফাঁকে পালিয়ে যাবে ।ওয়াইনের বটল খুলছিল অয়েটার,লুনা উঠে দাঁড়াল ।'এনজয় ইওর ফুড' বলে বাইরে বেরিয়ে গেল ওয়েটার ।দুটো গ্লাসে ওয়াইন ঢেলে ,একটা গ্লাস লুনার মুখের কাছে ধরল প্রসেনজিৎ ।'নাও!'  লুনা যে কখনো ওয়াইন খায়নি এমন নয়,এই বেলা এগারোটায় এটা খেতে  হবে ভাবতেই কেমন যেন গা গুলোতে লাগল ।তার উপর সমস্থ মুখে চুলে প্রসেনজিতের লালা মাখানো । জোরাজুরিতে এক ঢোক খেল সে ।প্রতিবাদ করা যে কেন শেখেনি-এই মুহূর্তে মনে হল লুনার। আশ্চর্য এও মনে হল, প্রতিবাদ করে কি কোন লাভ হয় ?প্রসেনজিৎ আবার জাপটে  ধরল লুনাকে ।শেষ দেখেই ছাড়বে ।ঝপ ঝপ নিজেকে নগ্ন করতে লাগল সেই পুরুষ,ব্লাউজের প্রথম হুক খুলে ফেলে হাত ঢুকিয়ে দেবার চেষ্টা করল,পাখির মতো হালকা লুনাকে বুকে তুলে বিছানায় ফেলল অনায়াসে,শাড়ি হাঁটুর ওপর তুলতে তুলতে গোঙাতে লাগল সে ।কামড়ে ধরল লুনার ঠোঁট ।দুহাত লুনার শরীরে ঘুরে বেড়াচ্ছে ।হঠাৎ সত্যি সত্যি ওয়াক্ উঠল লুনার ,প্রসেনজিৎ নিজেকে একটু আলগা করতেই ছিটকে নিজেকে সরিয়ে বাথরুমের দিকে দৌড়াল লুনা ।দরজা বন্ধ করে 'ওয়াক্ ওয়াক্' করতে লাগল ।বমি নয়,জল উঠল । ওয়াইনের গন্ধ ।কেঁদে ফেলল সে ।কয়েক মিনিট পর ভালোকরে চোখ মুখ ধুয়ে বাইয়ে এল ।প্রসেনজিৎ তখনো জামাকাপড় পরেনি,শক্ত চিবুকে লুনা বলল,'এখন আমি যাব' ।
 'খাবেনা?'
'না আমার বমি হল ' ,মিথ্যে বলল সে ।
'ঠিক আছে ,আমার খিদে পেয়েছে,আমি খেয়ে নি,সারভ করে দাও আমায়।'
লুনা যান্ত্রিক নিপুন হাতে খাবার সারভ করল । একটু করে চিকেন ফর্কে  তুলে লুনার মুখে গুঁজে দিল ।অনিচ্ছা সত্ত্বেও মুখ থেকে খাবারটা ফেলতে পারল না লুনা ।ঢক্ ঢক্ করে দু'ঢোক ওয়াইন খেয়ে নিল সে ।কচর-মচর করে প্রসেনজিৎ কাঁচা স্যালাড খাচ্ছিল।এ সময় তার ফোন বারবার বাজছিল।ফোনটা নেওয়ার পর মুখটা অন্যরকম দ্যাখাল তার ,বোঝা গেল অন্যপ্রান্তের খবরটা ভালো নয় ।খাওয়া শেষ না করেই উঠে দাঁড়াল সে ,চুল আঁচড়ে,তৈরি হয়ে বলল,'চলো আজ যাওয়া যাক ।আবার ,আর একদিন হবে।' মনে মনে বাঁচল লুনা,'হ্যাঁ হ্যাঁ চলো ।'
       বাড়ি ফিরে এসে খুব ভালো করে স্নান করল সে ।শাড়ি ব্লাউজ ড্রাই ক্লিন করতে দেওয়ার জন্য প্যাকেটে ভরল ।বাকি সব কাঁচতে দিয়ে দিল ।কেবলই মনে হতে লাগল ঘাড়ে গলায় মাথার চুলে লোকটার লালা থুতু লেগে আছে,ভিজে ভিজে ।বমি পেতে লাগল তার । অত সোজা নাকি প্রেম করা,এত সহজ শরীরের সুখ ?তার চাইতে অতনুর উপেক্ষা ,ফিরে তাকানও যেন ভালো ।সহজ স্বচ্ছন্দ ভঙ্গিতে ফ্রিজ খুলে চিংড়ি ও পারশেমাছ বের করল ।আজ ,এখনই রাঁধবে,অতনুর খুব প্রিয় ।ক্যারামেল পুডিং বানাবে তৃণার জন্য ।মাছের আঁশটে গন্ধে আবার গা-টা গুলিয়ে উঠল। না না আর এসব ভাববে বা । একবারও মনে পড়তে দেবে না ঐ মুখ ।              
           সেলফোন্টা বেজে উঠল--সেই নাম ।একই সঙ্গে ডোরবেল,ফোনটা সুইচড্ অফ্ করে দরজাটা খুলতে গেল । তৃণাই হবে । এত তাড়াতাড়ি ?তৃণাই তো ...........? ধক্ করে উঠল বুকটা ।
------------------------------------------------------------------------------
ছোটগল্পঃ
                           অরবিন্দ দত্ত
                                   সমুদ্র দর্শন

সকালবেলায় সবে পেপারটা খুলে চোখের সামনে ধরেছি, শুনতে পেলাম রান্নাঘরে  আমার গৃহিণী গলার স্বর সপ্তমে চড়িয়ে বাড়ির কাজের মহিলাটিকে বলছেন - ‘ না না  গোপালের মা, এটা তুমি কী বলছ । কাল থেকে তুমি দু’দিন কাজে আসবে না? দ্যাখো, এরকম করলে আমার কি করে চলবে !  তোমার দাদা দশটার মধ্যে আফিসে বেড়িয়ে যায় । ছেলে-মেয়ে দুটো সাড়ে দশটার মধ্যে স্কুলে চলে যায় । তুমি না এলে এদেরতো সময়মতো দুটো ডাল-ভাত রেঁধে দিতে পারবো না । তুমি আমার সমস্যাটা তো একবার বুঝবে । আচ্ছা তুমি কেন দু’দিন আসবেনা বলতো গোপালের মা? তুমি কি কোন সমস্যায় পরেছো, টাকাপয়সা লাগবে? না কি অন্যকোন মতলব আছে’?
          আজ সকাল সকাল গৃহিণীর  গলার স্বর সপ্তমে চড়ানোর কারনটা এতক্ষণে  বুঝতে পারলাম। প্রত্যেক বাড়ির গৃহিণীদের কাছে তাদের কাজের মহিলা হল  ভীষণ প্রয়োজনীয় আরাধ্য দেবী । যাকে অনেক সাধ্য-সাধনা করে ভালো অর্থ, ভালো খাবার-দাবার, ভালো জামাকাপড়, ইত্যাদির প্রতিশ্রুতির  বিনিময়ে সংসারে বেঁধে রাখতে হয় ।  কারণ, একদিন কাজে না এলেইতো চোখে সর্ষের ফুল দেখতে হবে ।  আর সেখানে দুটোদিন গোপালের মা কাজে আসবেনা । তাতে গৃহিণীর  মাথায় আকাশ ভেঙে পরাটাই স্বাভাবিক।
গোপালের মা বিনয়ের অবতার সেজে বলল, ‘না না আমি কোন সমস্যায় পড়িনি। টাকাপয়সাও লাগবেনা। বিশ্বাস করো  বৌদি, আমার অন্যকোন মতলব নেই’।
'তাহলে কেন তুমি দু-দিন  কাজে আসবে না?'
'আমার একটা হেবি পার্সোনাল কাজ আছে।'
আমি মনে মনে বললাম, যাঃ বাবা, এ আবার ইংরেজি বলছে। আগেতো এর মুখে ইংরেজি শব্দ শুনিনি। যদিও আমি বাড়ির ঝি আর গৃহিণীর কথাবার্তার মধ্যে মাথা ঘামাই না । তবুও এই ‘হেবি পার্সোনাল’ শব্দটার প্রতি আমার কৌতূহল জন্মায় । সেই কৌতূহল নিরসনের জন্য আমি গুটি গুটি পায়ে রান্নাঘরের দিকে এগিয়ে গেলাম।  রান্নাঘরের দরজা দিয়ে উঁকিমেরে দেখি, গৃহিণী গম্ভীর মুখে বসে আছেন । আর গোপালের মা, মানে দিনের ভীষণ প্রয়োজনীয় আরাধ্য দেবীটি দুই দিকে দুই হাত বাড়িয়ে জানলার গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে আছে। কেউ কোনো কথা বলছে না । বেশ একটা থমথমে রান্নাঘরের পরিবেশ । আমি অসময়ে কালবৈশাখী ঝড়ের পূর্বাভাস পেলাম । গৃহিণীর এরকম মুখকরে থাকার অর্থ, তিনি প্রচণ্ড রেগে আছেন । যে কোনো সময়ে বাস্ট করবেন । এই ঝড় যে সময়মতো তাঁর পূর্ণ শক্তি নিয়ে আমার উপরেই আছড়ে পড়বে তাতে কোন সন্দেহ নেই । তাই আগাম সতর্কতা হিসেবে গৃহিণীর চোখ এড়িয়ে কোনমতে রান্নাঘরের দরজা থেকে তাৎক্ষণিক ইউ-টার্ন নিয়ে নিজের ঘরে চলে এলাম। এই মুহূর্তে বাড়িতে থাকা নিরাপদ নয় ভেবে বাজারের থলেটা হাতে নিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম।
দুনিয়ায় সব সমস্যার সমাধান আছে। কিন্তু ঝি সমস্যার কোন সমাধান বোধহয় নেই। আজকাল গৃহিণীদের কাছে ঝিয়েরা যে কতটা এসেনশিয়াল, তা এই ঝি’কুলের সব ঝিয়েরা ভালোমতন জানে।  এরা এখন নিজেদেরকে ‘এসেনশিয়াল কমোডিটিস’ মনে করে। এদের ছাড়া সব সংসার অচল। সরকারি কর্মচারীদের মতো এরাও হঠাৎ হঠাৎ বিনা নোটিসে ডুব মারে ।  পরেরদিন  ক্যাজুয়াল লিভের দরখাস্ত হিসেবে কাজে না আসার নানা রকম কারণ দর্শায়। এবার পুজোর সময় গোপালের মায়ের ডিমান্ড অনুযায়ী তাকে তার  একমাসের বেতন পুজো-বোনাস হিসেবে দিতে হয়েছে। কী কপাল! আমি পেলাম না পুজো-বোনাস। অথচ বাড়ির ঝি’কে দিতে হল। এসব করেও কি তাতে শান্তি আছে। সেদিন গৃহিণী আমাকে বললেন, ‘আফিস থেকে ফেরার পথে তুমি এক প্যাকেট সার্ফ এক্সসেল নিয়ে আসবে। কমদামী সার্ফ আনবে না। গোপালের মা বলে দিয়েছে। কমদামী সার্ফে নাকি ক্ষার বেশি থাকে। তাতে হাতের সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যায়। সার্ফ এক্সসেল না আনলে সে আর কাপড়চোপড় কাঁচবে না বলে দিয়েছে’। কথাটা শুনে আমি বললাম, ‘তোমার গোপালের মা কি সার্ফ কোম্পানির বিজ্ঞাপনের মডেল? আমিতো জানি না’। গৃহিণী খোঁচা খাওয়া বাঘিনীর মতো গর্জন করে  উঠল, ‘তুমি জেনে কি করবে? তুমি কি ওর মডিলিং-এর ডিরেক্টর? তোমাকে যেটা আনতে বললাম, সেটা নিয়ে আসবে’। অগত্যা, গোপালের মায়ের ইচ্ছে আর গৃহিণীর আদেশ এই দুই সখি মিলে মাসের শেষ দিকে আমার পকেটের ব্যালেন্স আরও কমিয়ে দিল। এই সব সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে আমি মাছের বাজারে প্রবেশ করলাম। কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজির পর একটা ছোট সাইজের লোকাল কাতলা মাছের দর্শন পেয়ে, সেটার সাথে শুভদৃষ্টি করবো বলে যেই হাত দিয়ে তুলে আমার চোখের সামনে ধরেছি, অমনি পাশ থেকে কে যেন বলল, ‘আরে, তারিণীবাবু যে! তা মাছ বাজারে মাছ কিনতে এসেছেন?' তাকিয়ে দেখি আমার প্রতিবেশী হিমাদ্রি বাবু  পান খাওয়া  দু’পাটি লাল দন্ত বের করে দাঁড়িয়ে আছে। কথাটা শুনে প্রায় মুখ ফসকে বেরিয়ে যাচ্ছিল, 'না মাছের  বাজারে  অন্তর্বাস কিনতে এসেছি'। নিজেকে কোনোমতে  সংযত করে বললাম, ‘এই একটু মাছ কিনছি’। এই বলে আমি আবার মৎস্য দর্শনে মন দিলাম। কিছু মানুষ আছেন যারা গায়ে পড়ে কথা বলতে ভালোবাসেন।  তাদের যতই এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করা হোক না কেন, তারা নিজেদের  মানসন্মানের পরোয়া না করে  এই গায়ে পড়ে কথা বলার পর্বটা চালিয়ে যেতে থাকেন। এই হিমাদ্রি বাবুও ঠিক এই ধরনের মানুষের পর্যায় পরেন । তিনি আবারও বললেন, ‘কী ব্যাপার আপনি তো সাধারণত ছোট মাছ কেনেন। আজ বড় মাছ কিনছেন যে? বাড়িতে কি গেস্ট আসছে’?
কি আপদ! বাজারটা যে একটু শান্তিতে করবো তারও উপায় নেই। একেতো বাড়িতে সকাল থেকে এক ঝি নিয়ে অশান্তি। তার উপর যদি ছোট মাছ নিয়ে গৃহিণীর হাতে দিই, তাহলে ঐ কাঁচা মাছের স্থান হবে  আমার মুখমণ্ডলের উপর। এটা তো আর হিমাদ্রিবাবুকে বলতে পারছি না। তাই ওনার কথার উত্তর না দিয়ে আমি  মাছটির ‘ল্যাজ হইতে মাথা পর্যন্ত’  দর্শন করে  যথাযথ মূল্যের বিনিময়  সেটিকে আপন আধিকারে  থলেতে পুরে বাড়ির পথ ধরলাম। 
বাড়িতে ঢুকে গৃহিণীর হাতে বাজারের থলেটা দিতে গিয়ে ওনার মুখমণ্ডল পর্যবেক্ষণ করে যা বুঝলাম, তাতে মনে হল সকালের ঘন কালো মেঘের  ঘনঘটা অনেকটা হাল্কা হয়ে  গিয়েছে। এই মুহূর্তে বজ্রবিদ্যুৎ সহ বর্ষণের কোন সম্ভাবনা নেই। তাই মুখে একটু হাঁসি ফুটিয়ে বললাম, ‘এক কাপ চা দেবে’?
‘বসো দিচ্ছি’ বলে  গৃহিণী মাছের থলেটা আমার হাত থেকে নিয়ে রান্নাঘরে চলে গেলেন। 
দুপুরে খেতে বসে জিজ্ঞেস করলাম, ‘গোপালের মা তার হেবি পার্সোনাল কাজের ব্যাপারে কিছু বলেছে? যার জন্য সে দু দিন কাজে আসবে না।'
‘না, কিছু বলে নি। অনেক কাকুতি মিনতি করে দুদিনের ছুটি নিয়ে গেছে। তবে আমি বলেছি, দেখবে দুদিন যেন তিনদিন না হয়।'
বুঝলাম আগামী দুদিন আমাকে খুব হিসেব করে চলতে হবে। বিশেষ করে যখন তখন চা পাওয়া যাবে না। পারলে আমাকেই  চা করে খেতে হবে।
যাথারিতি দু’দিন পর সকাল বেলায় গৃহিণীর ভীষণ প্রয়োজনীয় আরাধ্য দেবী গোপালের মা, এক মুখ  হাসি নিয়ে হেলতে দুলতে এসে হাজির। এসেই জিজ্ঞেস করল, ‘বৌদি  তোমরা ভালো আছো তো? এই দুদিন তোমার খুব কষ্ট হয়েছে তাই না’?
গৃহিণী তাকে এক কাপ চা দিয়ে বলল, ‘তা কষ্ট একটু হয়েছে বৈকি। দু’দিন ছুটি নিয়ে কী করলে গোপালের মা? বাইরে গিয়েছিলে’?  আমি পাশের ঘরে বসে চা খেতে খেতে ওদের কথোপকথন শুনছিলাম। গোপালের মা বলল, "না বৌদি এখানেই ছিলাম। গত পরশু আমার গোপালের জন্মদিন ছিল। সাত বছর হল আমাদের বিয়ে হয়েছে। অভাব অনটনের  মধ্যে দিয়ে সংসারটা কোনোমতে  চালাতে হয়। গোপালের বাবা পরের রিক্সা চালায়। আমি চারটে বাসাবাড়িতে কাজ করি। প্রতি বছর কখন যে ছেলের জন্মদিনটা পার হয়ে যায় মনেই থাকে না। আর মনে থাকলেও করার কিছু থাকে না। গোপালের বাবা একদিন আমাকে বলল, এবার  গোপালের জন্মদিনে তোমাকে আর গোপালকে সমুদ্র দেখাতে নিয়ে যাব। তোমার তো সমুদ্র দেখার অনেক দিনের সাধ। আমি আবাক হয়ে  বললাম, সে কী গো! সমুদ্দুর?  সে তো অনেক দূরে।  আর সেখানে যেতে অনেক টাকা লাগবে। গোপালের বাবা বলল, 'অনেক দূরে কেন হবে। এখানেই তো সমুদ্র আছে।  খরচা বেশি হবে না।'
আমি বললাম, 'এখানে সমুদ্র কোথায়? এখানে তো একটা নদী আছে। ময়ূরাক্ষী নদী। তাও প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে।'
গোপালের বাবা হেসে বলল,' আছে আছে। নিয়ে গেলেই দেখতে পাবে’। " 
আমি একমনে গোপালের মায়ের কথাগুলো শুনছিলাম।  চা পর্যন্ত খেতে ভুলে গেলাম। আধ খাওয়া ঠাণ্ডা চা কাপশুদ্ধ টেবিলে রেখে আমি ধীরে ধীরে রান্নাঘরের দরজার দিকে এগিয়ে গেলাম। গোপালের মা ঘরের  মেঝেতে পিছন ফিরে বসেছিল বলে আমাকে দেখতে পায়নি।  গৃহিণী কিন্তু আমাকে দেখতে পেয়েও কিছু বলল না। তারপর গোপালের মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘তোমরা সমুদ্র দেখতে গিয়েছিলে’?
"হ্যাঁ বৌদি আমরা সমুদ্দুর দেখতে গিয়েছিলাম। সেই জন্য তো এবারে পুজোয় আমি সব বাসাবাড়ি থেকে জামাকাপড়ের বদলে টাকা নিয়েছিলাম। সেই টাকা থেকে গোপালকে পুজোয় নতুন জামাপ্যান্ট কিনে  দিয়েছিলাম।  বাকি  টাকা সমুদ্দুর দেখতে যাব বলে রেখে দিয়েছিলাম।  গোপালের বাবা ওর মালিককে বলে  রিক্সাটা এক রাত্রির জন্য নিজের কাছে রেখে দিয়েছিল।  অবশ্য এর জন্য মালিককে টাকা দিতে হয়েছিল।   কিছু  চিরে-গুড় আর গোপালের জন্য একটু দুধ, একটা ব্যাগে পুরে গোপালের বাবা আমাকে আর গোপালকে রিক্সায় বসিয়ে  সমুদ্র দেখাতে নিয়ে চলল । গোপাল আর আমার সে কী আনন্দ! শুধু গোপালের বাবার জন্য আমার খুব কষ্ট হচ্ছিল। রিক্সা  চালাতে চালাতে সে হাঁপিয়ে উঠছিল। মাঝে মাঝে সে বিশ্রাম নিচ্ছিল। আমি  বললাম, 'রদ্দুরে রিক্সা চালাতে তোমার খুব কষ্ট হচ্ছে। তাই না? এতদূর নাএলেই পারতে।'  গোপালের বাবা  হেসে বলল, না আমার কোন কষ্ট হচ্ছে না। তোমার আর গোপালের আনন্দ দেখে আমার সব কষ্ট দূর হয়ে গেছে। তাছাড়া শহরে  সারাদিনে এরচেয়েও অনেক বেশি রাস্তা আমি রিক্সা চালাই। একসময় আমরা ময়ূরাক্ষী নদীর  পারে পৌঁছালাম। চারিদিকে শুধু বালি আর বালি। তারই মাঝখান দিয়ে  ময়ূরাক্ষী নদী বয়ে চলছে। গোপালের বাবা রিক্সাটাকে একটা শেকল দিয়ে আটকে আমাদের নিয়ে নদীর চরে নেমে এল। গোপালতো   আনন্দে বালির মধ্যে ছোটাছুটি শুরু করে দিল। আমি গোপালের বাবাকে  বললাম, 'হ্যাঁ গো তোমার সমুদ্দুর কোথায়? এটা তো একটা নদী। ময়ূরাক্ষী নদী।' গোপালের বাবা  আমার একটা হাত ধরে জলের খুব কাছে নিয়ে গিয়ে বালির চড়ে বসিয়ে দিয়ে নিজে আমার পাশে বসে বলল, 'এবার ভালো করে নদীটাকে দু’চোঁখ ভরে দেখো'। আমিও যতদূর চোখ যায় নদীটাকে দেখতে লাগলাম। দূরে জেলেদের মাছধরা নৌকা গুলো ভেসে যাচ্ছিল। গোপালের বাবা বলল, 'এবার তুমি দু’চোখ বন্ধ করে মনে মনে ভাবো– তুমি সমুদ্রের পারে বসে আছো। বড়ো বড়ো ঢেউ  শব্দ করে তোমার দিকে এগিয়ে আসছে। তুমি আমি আর গোপাল সেই ঢেউয়ের জলে স্নান করছি। তুমি সমুদ্রের জলে ভেসে আসা ছোট ছোট ঝিনুক কুড়িয়ে তোমার শাড়ীর আঁচলে জমা করছ’। আমি ওর কথামত চোখ বন্ধকরে মনে মনে তাই ভাবলাম। কিছুক্ষণ পর চোখ খুললাম। অবাক হয়ে দেখলাম, আমরা সমুদ্রের পারে বসে আছি। আর সমুদ্রের ঢেউগুলো আমাদের  দিকে এগিয়ে আসছে।  আমরা সেই ঢেউয়ের জলে স্নান করছি। দূরে জেলেদের মাছধরার নৌকা গুলো ভেসে যাচ্ছে। আমি ছোট ছোট ঝিনুক কুড়িয়ে আমার আঁচলে জমা করছি। আমি গোপালের বাবাকে বললাম, 'আজ তোমার জন্য  আমি  সমুদ্দুর দেখতে পেলাম গো। আমরা জীবনটা আজ ধন্য হল। যতদিন আমি বেঁচে থাকবো ততদিন এই সমুদ্র দেখার কথা আমার মনে থাকবে। কোনোদিনও ভুলবো না'। আমি গোপালের বাবাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললাম। গোপালের বাবা বলল, 'আমার জন্য নয়। আমিতো শুধু পথ দেখেয়েছি। তোমার বিশ্বাসী মন তোমাকে সমুদ্র দেখিয়েছে'। আমরা সেদিন রাতটা গোপালকে দুধ আর নিজেরা নদীর জলে চিড়া ভিজিয়ে গুড় দিয়ে খেয়ে জেলেদের একটা নৌকায়  কাটিয়ে দিলাম। আমি সারারাত জেগে  চাঁদের আলোয় সমুদ্দুর দেখলাম।" 
আমি আজ আমার গৃহিণীর চোখে জল দেখলাম। সে কাঁদছে। লক্ষ্য করলাম গোপালের মা-ও শাড়ীর আঁচল দিয়ে তার দু’গাল বেয়ে নেমে আসা অশ্রুধারাকে আটকানোর চেষ্টা করছে। আমার পা কাঁপছে। দাঁড়িয়ে থাকতে পারছি না। কোনোমতে নিজেকে ড্রয়িং রুমের সোফায় এনে ফেললাম। আজ গোপালের মা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, আমরা কতটা আত্মসুখী। সর্বদা নিজেদের  সুখের কথা ভেবে  দিনযাপন করি। গোপালের মায়েদের মতো মানুষেরা একদিন  যদি তাদের  কর্তব্য থেকে বিচ্যুত হয়, তাহলেই আমাদের মতো আত্মসুখী মানুষজনের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। তাদের আমরা ফাঁকিবাজ, অলস প্রভৃতি কত বিশেষণে ভূষিত করি। ভুলে যাই, তারাও আমাদের মতো স্বামী, সন্তান নিয়ে সংসার করে। তাদের অনেক সাধ আহ্লাদ থাকে, যা তারা অর্থের অভাবে পূরণ করতে পারে না। অথচ আমারা অর্থের জোরে সেগুলোকেই কী অনায়াসেই পূরণ করে ফেলি।
গোপালের মায়ের সমুদ্র দর্শন। কী বলবো একে? একে অপরের প্রতি  অগাধ বিশ্বাস, ভালোবাসা। নাকি অন্যকিছু। যার জোরে ভরা যৌবনা ময়ূরাক্ষী নদী সমুদ্র হয়ে গোপালের মায়ের চোঁখে ধরা দিয়ে তার সারা জীবনের সমুদ্র দেখার সাধ পূর্ণ করেছিল। গোপালের মা, তার আকাঙ্ক্ষিত সমুদ্র দেখে তার জীবন ধন্য করেছিল, আর গোপালের বাবাও তার একমাত্র ভালোবাসার মানুষটিকে সমুদ্র দেখাতে পেরে ধন্য হয়েছিল। সেদিন ওদের দু’জনের চোখের নোনাজল মিশে গিয়ে ময়ূরাক্ষীর জলকে সমুদ্রের জলের মতোই লবনাক্ত করে তুলেছিল। আমি জানি, গোপালের মায়ের চোখ থেকে সমুদ্র কোনোদিনই বিলীন হবে না। কারণ, এই সমুদ্র তার প্রিয় মানুষটার বিশ্বাস ও ভালোবাসার প্রতীক।

-------------------------------------------------------------------------------------
   ঠোঁটকাটাঃ

                                    গুরুচন্ডালি
                                              কুমারেশ পাত্র

১।অবশেষে মরে বাঁচাইয়াছেন মহানায়িকা !হুজুগে বাঙালি তো ভুলিতেই বসিয়াছিল আর কিছু জগতে চলিতেছে কিনা । আমলাশোল । কালাহান্ডি । মধ্যমগ্রাম । হিল্লি-দিল্লি ।কি আর করিবে তাহারা,টপিকের ভাইটামিনে শীতের ক'টাদিন যদি কাটিয়া যায়,মন্দ কি?
২ ।লিটিল ম্যাগাজিন মেলা আসিল ।আবার চলিয়াও গেল ।কটা ক্রয় হইল ,বা কটা বিক্রয় হইল সে প্রশ্ন তুলিয়া রাখাই ভালো,কারণ না বলিলেও পাঠকবর্গের আর বুঝিতে কিঞ্চিত কষ্ট হইবে না ।তো যাহারা বনের মহিষ তাড়াইল,তাহাদের আবার দেখিতে পারিতেছি পটেটো চিপস্ হাতে লইয়া  প্রাক্-চর্বণ মুহূর্তে ঘূর্ণায়মান যূগলদিগের পাশেই ।অগত্যা আশঙ্কা,'সেই বালক' ইহাকে চিপসের মেলা বলিয়া  সম্বোধন না করিয়া ফেলে !
৩।আপ আসিল ।আমরা ভাবিলাম সব কটা চোর বুঝিবা ধরা পড়িল।ভারতীয় রাজনীতি আর কাকের কন্ঠস্বর----ইহার মধ্যে বিস্তর সাদৃশ রহিয়াছে । চিনি মিশাইলেও উহা সুমিষ্ট --বলিলে কাকতাড়ুয়ারাও হাসি রুখিতে পারে না ।তবু অপেক্ষা...
৪।দিল্লি হইল হিংলিশ ।কলকাতা হইল বেংলিশ । উদরে  পাদাঘাত করিলেও,ওই .....অগত্যা ভাবিতেছি বিদ্যালয়ে এই হাঁসজারু ভাষার পাঠ্যক্রম চালু করা যায় কিনা !
৫। ইদানিং সানি দেবী আসিলেই অটোগ্রাফ লইয়া ছুটিতেছে আবালবৃদ্ধবনিতা ।শুনিতেছি দেবীর অন্তর্বাস নিলাম হইবে আর সে নিলামের অর্থ কোনো এক মিশনে পাঠান হইবে ।ইহাতে দেবীর আবেদন ,উক্ত মিশনের পোশাক নীল করা হউক ।
৬।আজকাল গাধা হউক আর ঘোড়া হউক চিমটি কাটিলেই উহা 'সিঙ্গার ' বানিয়া যাইবে এই সংবাদ  ছড়াইয়া পড়িতেই  হরিদাস পাল যারপরনাই খুশ্ হইয়াছে । এই চিমটির প্রস্তকারক চীনের হাওয়াং সিয়াং  নামক এক  বহুজাতিক কোম্পানি । সস্তায় পাওয়া যাইবে । যাহা হউক ,পিতামাতার দুশ্চিন্তা বহুলাংশে দূর হইল আশা করা যায় ।
----------------------------------------------------------------------------------------------------------------

তবু লালনমনঃ

                    একবার বাজাও তোমার দোতারাঃ
                                         কুমারেশ পাত্র
গুরু বনাম লঘু ।সর্বত্র ।আলো বা অন্ধকারে !কেন?পোকাগুলো কি আজও কিলবিল করছে হাইপোথ্যালামাসে ?মরছে মানুষ সারমেয় সাবকের মতো !হেথা হোথা ।প্রযুক্তির কারসাজিতে আরও আরও সরিয়ে দেবার প্রয়াস !নিমেষেই ।আহা !লালন,তুমি আর একবার বাজাও তোমার দোতারা ,আর একবার ,আরএকবার ছড়িয়ে পড়ুক ভাতৃত্ববোধের ধূপ ।
----------------------------------------------------------------------------------------------------------
উড়োচিঠিঃ

                              সেথা কেবলই এক বাড়ির কঙ্কাল......
                                               কুমারেশ পাত্র
প্রিয় মেঘ,
             আবার বাঁকা পথ!তুমি  কি জানো একটু খানি পরশের লোভে কেমন হয়ে থাকি সারাটাদিন?তোমার হাসির বাঁকে যে মহাকাব্য লুকিয়ে আছে তাকে চিনতে চিনতেই একদিন দিশেহারা পাখির মাতোই ডুবে যাবো মহাশূন্যের আবডালে ।তোমাকে ছুঁতে চেয়েছি সেই কবে,যখন তুমি কেবল উড়তে শিখেছো সবে,ডিম ফুটে ছানারাও হামিখায়, ভালোবেসে । তুমিও তো উড়েছো ।কেবলই আকাশে ।গাছের মগডালের উপর থেকে কেবলই থেকে থেকে আমাকে দেখে গেছো....
 এভাবেই বড়ো হওয়া ।এভাবেই দিন দিন তোমার উন্নত বুকে জমেছে ফুলের ঘ্রাণ আর মুচ মুচে ভালোবাসা ।তোমায় দেখার জন্য পিলুদের বাড়ি বসে থাকি,তুমি কখন ফেরো ,কখন উড়ে যাও আমার ঘাসবনে ...সময় থেমে থাকে না মেঘ...ফুলের গন্ধ থেমে যায়...অকালে .....উড়ে যাও তুমি দূর দেশে ...সকলকে ছেড়ে....ওই দূরে....যেখানে তুমি কাঁদো...আর আমি এখানে........ কাঁদি......চুপি চুপি ......পিলুদের  বাড়িটা আজ আর নেই....কোথায় হারিয়ে গেছে ছেলেটা......বাবামাও.....সেথা কেবলই এক বাড়ির কঙ্কাল......
                                                                                                       ইতি
                                                                                    ............................................



-----------------------------------------------------------------------------------

নাটকের খবরঃ
                                            মৌলী রায়
                             বনগাঁ নাট্যচর্চার নবম বার্ষিক নাট্যোৎসব

ইছামতীর পাড়ে সীমান্ত শহর বনগাঁ ।সীমান্তের নানান সমস্যা ।এখানে রাজনৈতিক কলকোলাহলের মধ্যেও সংস্কৃতি এখানে বাঁচে বুক ফুলিয়ে ।শহর জুড়ে রয়েছে অসংখ্য লিটিল ম্যাগাজিন ও কবিদের দাপট ।তবে এ শহরের হাওয়ায় নাটকও যে তার অস্তিত্ব জানান দেয় প্রকটভাবে তা আরও একবার প্রমানিত হল গত ১৮-১৯-ই জানুয়ারি বনগাঁ হাইস্কুলের অনুবর্তন মঞ্চে অনুষ্ঠিত হওয়া বনগাঁ নাট্যচর্চা কেন্দ্রের নবম বার্ষিক নাট্যোৎসবে ।দুদিন ব্যাপী নাট্যৎসবে দর্শকাসন পূর্ণ ছিল নাট্যপ্রেমি মানুষের ভিড়ে ।নাট্যোৎসবের শুভ সূচনা হয় প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মাধ্যমে ।প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করেন নাট্যব্যক্তিত্ব নারায়ণ বিশ্বাস ।প্রথম দিনের প্রথম নাটক 'রক্ত' মঞ্চস্ত হয় বনগাঁ নাট্যচর্চা কেন্দ্রের প্রযোজনায় ।এরপর সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে 'দীনবন্ধু মিত্র সম্মাননা'  প্রদান করা হয় বিশিষ্ট নাট্যব্যক্তিত্ব আশিস চট্টোপাধ্যায়কে । অকাল-প্রয়াত নাট্যকর্মী বৈশাখি চট্টোপাধায়ায়ের স্মৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে গতবছর থেকে চালু হওয়া 'বৈশাখি পদক' প্রদান করা হয়  আর এক বিশিষ্ট নাট্যব্যক্তিত্ব আশিস দাস -কে ।এদিনের অনুষ্ঠানে মঞ্চস্থ হয় আরও তিনটি নাটক---বেদান্ত ঠাকুরনগরের পুতুল নাট্য 'দুষ্টু বেড়াল' ,দত্তপুকুর দৃষ্টির 'তিন সত্যি'  ও গোবরডাঙা নকসা'র 'কোনও গৃহবধূ ' ।শেষোক্ত নাটকটিতে দীপান্বিতা বনিক দাসের একক অভিনয় দর্শকদের মুগ্ধতায় ভরিয়ে তোলে ।নাট্যোৎসবের দ্বিতীয়দিন শুরু হয় বনগাঁ নাট্যচর্চা কেন্দ্রের 'এক যে ছিল চোর' এর মধ্যদিয়ে।এরপর বগুলা সৃজনের 'কারিগর নামা' ও শেষে অশোকনগর ব্রাত্যজন-এর 'তিতলি' মঞ্চস্থ হয় ।নাটকটির সমাজচেতনাবোধ নাট্যপ্রেমি দর্শককে আলোড়িত করে ।উৎসবের সমাপ্তি ঘটে মঞ্চে উপস্থিত নাট্যকর্মী ও সমস্ত দর্শকের সমবেত কন্ঠে 'আমরা করবো জয়' গানটির মধ্য দিয়ে ,এক নতুন প্রত্যয়,নতুন আশা ও নতুন স্বপ্নের


আবেশকে সঙ্গে নিয়ে ।
------------------------------------------------------------------------------------------------------
বই রিভিউঃ
                                                গণমাধ্যমে  শিশু-কিশোরেরা
                              (সম্পাদনা- মশিউর রহমান শান্ত)
                                                                   -- নাফিজ আহসান

গণমাধ্যমের এক বিশাল জায়গা জুড়ে দাপটের সাথে কাজ করছে প্রজন্মের শিশু-কিশোরেরা । প্রতিনিয়তই তারা তাদের প্রতিভার আলো দিয়ে আলোকিত করছে বাংলাদেশের গণমাধ্যম তথা মিডিয়া জগতকে । সারাদেশ থেকে গণমাধ্যমের বিভিন্ন শাখার ৪০ জন প্রতিভাবান শিশু-কিশোর এবং তরুণ-তরুণীর মিডিয়াতে কাজ করবার অভিজ্ঞতা, অনুভূতি, পাওয়া না পাওয়া সহ, অনেক না বলা কথা দিয়ে সাজানো হয়েছে 'গণমাধ্যমে শিশু –কিশোরেরা 'নামের ব্যতিক্রমধর্মী এই বইটি ।  নওরোজ কিতাবস্থান থেকে প্রকাশিত এই বইটি সম্পাদনা করেছেন একুশে টেলিভিশনের মুক্ত খবরের রিপোর্টার মশিউর রহমান শান্ত । বইটিতে লিখেছেন তরুণ কণ্ঠশিল্পী সাবা, তরুণ লেখক আল নাহিয়ান, পাভেল মুহিতুল আলম, নাফিজ আহসান, মীম নউশিন, নাহিদ আহমেদ,হাসান ভুইয়া প্রেজেন্টার এবং প্রযোজক আহনাফ জান্নাত পূর্ণতা , শিশু সংগঠক আবদুল্লাহ হাসান, এক ঝাঁক কিশোর সাংবাদিক,অভিনেতা, ও ক্ষুদে চলচ্চিত্রকার তথা এক ঝাঁক মেধাবী মুখ । বই মেলার প্রথম দিন থেকেই বইটি পাওয়া যাবে নওরোজের স্টলে ।  ব্যতিক্রমধারার এই বইটির প্রচ্ছদ করেছেন ধ্রুব এষা ।  বইটির মূল্য ৩০০ টাকা ।

মন্তব্যসমূহ

Unknown বলেছেন…
খুব ভালো লাগল এবারের নূতন বিষয় গুলি পড়ে।