অচেনা যাত্রী-৪/বিষয়ঃকেন লিখি ? /নভেম্বর ১৯-৩০,২০১৩/পৃষ্ঠাঃ১

        (বানান বিধিঃআকাদেমি বানান অভিধান /২০১১ সংস্করণ/পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি)


ক। সম্পাদকীয়ঃঅমিত কুমার বিশ্বাস
খ।কেন লিখিঃসুবীর সরকার,তীর্থঙ্কর মৈত্র,দেবাশিস সরকার,শান্তনু হালদার,মোস্তাফিজুর  রহমান,সালাহ উদ্দিন মাহমুদ,পার্থ কর
গ।কবিতাঃতপন বাগচী,অমিতাভ দাশ,সুবীর সরকার,সাজ্জাক হোসেন শিহাব,পার্থ কর,অমিত কুমার বিশ্বাস
ঘ।ব্যক্তিগত গদ্যঃফেলে আসা সময়/দেবাশিস সরকার
ঙ।ছোটগল্পঃরবীন্দ্রনাথ/অমিত কুমার  বিশ্বাস 


                                          সম্পাদকীয়
আসতে দেরি হল । হয়-ই তো ! রোজ । প্রশ্ন করেন ?কটা করেন?কটা করি ?কতগুলো প্রশ্ন করার ক্ষমতা আছে আমাদের ?না প্রশ্নটা বুঝে -শুনে করেন কাকে করছি ?হাঃ হাঃ ! সেই কেরোসিন শিখা আর মাটির প্রদীপের পুরোনো গপ্পো--সর্বত্র ।যা আমি আপনি আওড়াই কচিকাঁচার সামনেই বা চায়ের দোকানে !প্রশ্ন করাটা তবে খুবই জরুরী ,আর তাতেও  যেন না থাকে কোন পক্ষপাতিত্ব ।তাহলে দিল্লি থেকে মহারানিরর বিল্লি--সব চাপে থাকবে । প্রশ্ন করুন ।আর প্রশ্ন না করলেই মানসিক চাপে বিপর্যস্ত হয়ে অনেকেই দিগবিদিক শূন্য হয়ে কামড়ে দেবে । দিচ্ছেও ।এই কামড়ানোটা সহজাত কিনা তা গবেষণাসাপেক্ষ । প্রতিষেধক আবিষ্কার এখনও অধরা ।তাবলে কি আমরা টুন্ড হয়ে বসে থাকতে পারি ?মৌনব্রতকে দুর্বলতা ভেবে ছোবল মারতে পারে পুনরায় । অগত্যা 'বাবাজীকি বাবুল-গাম' এক্ষেত্রে উপযুক্ত ।চিবিয়ে যাও ।চিবিয়ে যাও ।স্বাদ থাকুক বা না থাকুক ।সিরিয়ালের মতো ।  ইচ্ছেমতো ফোলও ।ভাবো নিজের হ্যাপি বা আনহ্যাপি বার্থ ডে ।ফাটাও ।ভাবো ঘুষখোর পুলিশটার মাথা ফাটালে । আবার চিবোও। ভাবো তুমি চিবিয়ে যাচ্ছো তোমার প্রইয়োজনীয়তা-অপ্রয়োজনীয়তাকে ।আবার ফোলাও।ভাবো বসকে ফোলাচ্ছ । বসও ফুলছে--ফানুষের মতো,মানুষের মতো । এবারে ফাটাও।জোরে ।যেমনটা হামেশাই করে থাকি ।আড়ালে । আবডালে ।মগডালে ওঠার  সায়েন্টিফিক প্রসেস ।
         কি যাতা !!এটা কি সম্পাদকীয় না মাগুর মাছের ঝোল?ছ্যাঃ !!!
       ওহ ভেরি সরি(ইংরাজিতে বললাম ।না বললে নাকি বলাটায় জোর থাকেনা.!!)....................কাম টু দ্যা পয়েন্ট । এটা  'অচেনা যাত্রী'-৪ ।বিষয়ঃ 'কেন লিখবেন?' এখনও পর্যন্ত পাবলিক  ভালো খাচ্ছে ।গিলছে কি না জানিনা ।লেখা পাচ্ছি ।তবে সব প্রকাশ করতে পারছি না । বন্ধু হারাচ্ছি । মাঝে মাঝে ।গাল খাচ্ছি । কেন লেখা বাদ গেল ,বা কেন ওই নপুংসক লেখাটি রয়ে গেল অম্লান বদনে ! তবে এবারের  টপিকটা খুবই চিত্তাকর্ষক ।যারা শব্দ নিয়ে ভাঙা-গড়ার কারিগর ,তাদের কথা শুনতে বা পড়তে আমার বরাবর  ভালো লাগে ।ভীষণ ।যে পথের দুপাশে  তাঁরা ফুল ফুটিয়েছেন  ,সেই পথ বা পথে অগ্রসর হবার নীরব তথা আনিবার্য চুম্বকত্ব আমার কেন ,সকল পাঠকের জানা দরকার ।সেই পথ- বর্ণনে  আমাদের প্রশ্ন না করতে পারার যন্ত্রণা  উঠে আসবে,যার থেকে জন্ম নেয় হাজার কাব্য,হাজার আখ্যান-উপাখ্যান ,হাজার রসিক-বেরসিক শব্দগুচ্ছ ।
                                                     অমিত কুমার বিশ্বাস

---------------------------------------------------------
                           এবারের বিষয়ঃকেন লিখি?
                                           কেন লিখি
                                         সুবীর সরকার

কেন লিখি!এ আবার কেমন কথা!সত্যিই তো,কেন লিখি!জানি না,এই প্রশ্নের কোন উত্তর হয় নাকি!আমি লিখি কেননা লেখালেখির ভিতর প্রকৃতপক্ষে আমিই থাকি।এ আমার অস্ত্বিত্ব। যেমন আমি বেঁচে থাকি।বেঁচেবর্তে থাকি।ফাঁকা রাস্তায় হাঁটি।অন্যমনস্ক হই।পাখির উড়াল থেকে লোকগান,জঙ্গলবাড়ির খুব ভিতরে হাতিমাহুতের গানের মতন হাটগঞ্জের ভিতর বারবার যাবার মতন; নভেম্বরের রোদের জালকে জটায় আমার সমস্তকিছুই বুঝি আমাকে দিয়ে লেখায় ।লেখা,পড়া,অন্তহীন ঘুরে বেড়ানোর জীবন আমার ।আমি আনস্মার্ট মানুষ । চিরবিষণ্ণ মানুষ।মিশতে পারি না।হুল্লোড়ে।হৈ চৈ-এ।তাই লেখা আমার আশ্রয়।শুশ্রুষা। হাসি ও হাহাকার নিয়ে বাঁচি।আর লিখি,লিখেই যাই।আর হাঁসের পালক থেকে জল ঝরে ।
---------------------------------------------
                                     কেন কবিতা লিখি?
                                         তীর্থঙ্কর মৈত্র

একটু একটু করে বিকেল নামছে অঘ্রাণের ।দূরে বাদাম গাছের মাথায় রোদ্দুর হলুদ হয়ে উঠেছে ।এই গ্রাম্য পরিবেশে গুটিয়ে থাকা  'লাফা'লতায় দু'একটি শুকিয়ে ওঠা 'লাফা' ।ইটের পাজার উপর কামরাঙা পাতা ,আরো কত কিছু !এসবের বর্ণনা দিতে বেশ লাগছে ।কিন্তু 'কবিতা কেন লিখি ?' এ প্রশ্নের উত্তর তো আমার জানা নেই । বিশ বছর বাড়ি ছেড়ে ,আত্মীয়-পরিজন ছেড়ে ,কাঠ- বেকার একটি ছেলে,জীবনকে বাজী রেখেছিল কবিতার কাছে । কিসের নেশায় ? খেয়ে-নাখেয়ে পার করেছে সময় । কিন্তু ভেবেতো দেখিনি  । ভালো কবিতা লিখতে চাওয়া মন ক্ষত-বিক্ষত হয়েছে ।রাত জেগে কবিতা না লিখতে পেয়ে হাউ-মাউ করে কেঁদেছি । কাগজের সাদা পৃষ্টা শুষে নিয়েছে সে জল ।কেন? বলতে পারবোনা । শুধু এইটুকু বলতে পারবো ,একজন পর্বত-আরোহী যেমন পায়ে পায়ে মৃত্যুকে উপেক্ষা করে শৃঙ্গ জয়ের বাসনায় --হয়তো তেমন এক তীব্রতা ,টান আমাকে ছুটিয়ে নিয়ে বেড়িয়েছে ।আর আমি শৃঙ্গজয়ের বাসনায় সব যন্ত্রণাকে উপেক্ষা করেছি ।যেখানে অর্থ নেই ,খ্যাতি নেই--শুধু চতুর্দিকে উপেক্ষা আর বিদ্রূপের খাড়া দেওয়াল ।যাকে বেয়ে বেয়ে  একটার পর একটা ভয়ঙ্করকে তুচ্ছ করে এগিয়ে চলা ।কিন্তু কেন?এটা হয়তো কবি -জীবনধারনের  স্বাভাবিকতা ।জগতে গুড়ের দোকান,গুলের দোকান  একজন মানুষ কে সফল ও সুখি করে দিতে পারে ।আর কবি নিজের খাবারটুকুও কবিতা থেকে জোগাড় করে নিতে পারেনা ?অথচ কবিই শ্রেষ্ঠ ! হাঃ হাঃ হাঃ !
           বহুপূর্বে আমাকে এক  পত্রিকা এ প্রশ্নটি করেছিল ।সেদিন আমি প্রথম ধাক্কাটি খাই ।তাইতো,কেন কবিতা লিখি?কেন এত দূর্বারতা তার দিকে যাওয়ার  ?উত্তর নিজের ভিতর না পেয়ে গ্রামের পথে বেরিয়ে পড়েছিলাম,আর লতা-গুল্ম,যাকে যেখানে দেখেছি,তাদের কাছে জানতে চেয়েছি,কেন কবিতা লিখি ? হঠাৎ একটা কুল গাছের কাছে প্রশ্ন ছুড়ে ফেলি,"ও কুল গাছ,তুমি কুল দাও কেন?" কুলগাছ কি বুঝেছিল ?সে নিস্তব্ধ ।বার বার চিৎকার করেও কোন উত্তর মেলেনি ।পরবর্তিতে আমার যা মনে হয়েছে তা এরকম,জগতে নানা ধরনের গাছ-পালা,কীট-পতঙ্গ রয়েছে ।এসব সৃষ্টিকর্তারই সৃষ্টি ।তিনি তার সৃষ্টির মাধ্যমেই সুন্দরর প্রকাশ ঘটিয়ে চলেছেন,অসুন্দরও ।এবং এর জন্য  নির্দিষ্ট নির্দিষ্ট সৃষ্টি রয়েছে তাঁর । কোন গাছ কুলরূপী ফল প্রকাশের জন্য ,কোন গাছ গোলাপনামী ফুল প্রকাশের জন্য। গোলাপ গাছে যেমন কুল পাওয়া যায়না ,আবার কুল গাছেও  গোলাপ হয়না ।মানুষের মধ্যেও সে রকম রয়েছে ।সৃষ্টিকর্তা কাব্য যার ভিতর দিয়ে প্রকাশ করান ,তিনিই কবি ।যার ভিতর দিয়ে সুর প্রকাশ করান ,তিনি গায়ক ।এই রকম আর কি ।অর্থাৎ সৃষ্টিকর্তার কাব্যরস প্রকাশের মাধ্যম একজন কবি ।তাই একজন কবির ভিতর থেকে কাব্যরস প্রকাশিত হওয়াই তো স্বাভাবিক ,যা ওই গোলাপ ও কুল গাছের মতো নির্ধারিত ।
..........................................................................................................................
পরের পাতায় যাবার জন্য ক্লীক করুন পুরোনো পাতাসমূহের উপর ।

মন্তব্যসমূহ