অচেনা যাত্রী-৪/বিষয়ঃকেন লিখি ? /নভেম্বর ১৯-৩০,২০১৩/পৃষ্ঠাঃ।৩


(বানান বিধিঃআকাদেমি বানান অভিধান /২০১১ সংস্করণ/পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি)

এই  সংখ্যার লেখা/কবিতা

তপন বাগচী
পাগলিটা

পাগলি পরেছে খয়েরি পাড়ের শাড়ি
 গলায় দুলছে খোদাই কাঠের মালা
 দু-কানে মাকড়ি, কপালে জ্বলছে টিপ
 কারো কারো বুকে বাড়িয়ে দিয়েছে জ্বালা।

 আমি দেখি নাই, আমি আছি নিরাপদে
সেই ভুরু আর ডাগর চোখের আলো
কারো কারো বুকে কাঁপন জেগেছে পুনঃ
 নেভানো আকাশে বিদ্যুৎ চমকালো!

 পাগলি হাঁটছে, পাগলি হাসছে খুব
 আমি দূরে আছি, তাই দেখি নাই ওকে
পাগলিটা আছে নিজের জগতে সুখি
 আমি নাই থাকি, দেখেছে বেবাক লোকে।

 পাগলির মতো পাগলিটা আছে শান্ত
আমার বুকের কথাটি সে যদি জানত!!!


 নতুন কবিতা

তোর নামে আজ নতুন কবিতা লিখে
 ছড়িয়ে দিলাম সামাজিক ফেসবুকে
 তবু দেখি তোর মুখটা দেখায় ফিকে
 সেই কথাটিও নোটবুকে রাখি টুকে।

কেন যে খুঁজিস তাতে রহস্য আছে
সকলেই জানি আলো-আঁধারিতে বাঁচি
 গোটা বিশ্বই গোলকধাঁধায় নাচে
আয় হাত ধর, থাকি খুব কাছাকাছি।

 কে জানে কখন কামড় বসায় এসে
খুব সাবধান থাকতেই ভালোবাসি
 লুকোছাপা নেই, বলছি তো ঝেড়ে-কেশে
 তোর মুখে আমি দেখি বিজয়ীর হাসি।

 আয় তুই ছেড়ে ঝেড়ে সব অভিমান
এখনও কি তোর সুতোয় পড়েনি টান!
-------------------------------

অমিতাভ দাশ
গান
এইসব
অর্জিত পরিণাম, মৃত্যু ও প্রাণ
তার ও পরে
 ..........................থেকে যায় গান!

এইসব
অর্জিত কোলাহল, বেলা, অবেলা, ও
কালবেলা শেষে...
......................গান আসে শান্ত প্রদোষে...

এইসব
 অর্জিত ফিরেদেখা ঝরাপাতা
 নির্জন ক্ষণ টলমলো
 ...............................গান আনে আলো...

এইসব
অর্জিত বিরহ বেদনা সুখ
প্রেম ভাললাগা...
................................গানে গানে জাগা!



অণু-পরমাণু

চোখ থেকে শুরু
 ..........কবিতা
চুল খুলে গেল
........ছড়িয়ে
মৃদু হাসি দিল
 .....'কমা' যে
চিবুকের তিল
......ফুলস্টপ্!

ভাললাগা চন্দনে চন্দনে
এবার

চোখের পাতায়...
ঘুম নয়
এঁকো লক্ষীর পা
 সারি সারি

তন্ময় গড়ায় সন্ধ্যা রাত্রিঘন
 অপেক্ষায় দেয়াল-বোঝাই ঘুম
অপেক্ষায় আচ্ছন্ন হৃদয়

কবিতা, এসো রক্ত ঝরাই!/

দেখলে সে রেললাইন....
ওই নিঃঝুম ব্রীজ!
পড়বে?
......মনে আমায়?
কু ঝিক্ ঝিক্ ট্রেন?
...............................


সুবীর সরকার
লেখা

শ্লেষ গড়িয়ে নামলে
পাশাপাশি দাঁড়িয়ে
           পড়ি
অভিমান পুষে রাখলে
দু’চোখে হলুদ 
        জমে

ক্রসিং পেরোতে পেরোতে
কালো কিংবা খয়েরি
            ঠোঁট
এতসব লিখি ।
মুখোশের বদলে স্নো
          বল
---------------
পার্থ কর
দিনপঞ্জি
মোলার দাঁতে গালাগাল পিষে
 চারদেওয়ালে নগ্ন হই -
 ভাবি,আগুন জ্বালিয়ে রাখবো,
কোনো উস্কানিতে দাবানল বাঁধাবো একদিন!

চামড়ায় শুকিয়ে ওঠে
 বিষাক্ত হাটুরে পরত,
 অনাত্মীয় সংক্রামক দিনালাপ ।
 তখন বুকের শুধু মাংসের গন্ধ, ধূমায়িত সন্ধ্যা,
আর হৃদপেশির কাবাব নিয়ে বসে পড়ি ।
ওজনে পোষাতে নিজের দিকেই চাপাই
 ক্লান্ত অজুহাত ।

তারপর চায়ের উষ্ণতায়
 ঠান্ডা হয় প্রভুভক্ত রক্ত ।
 কশেরুকা বেয়ে নামে দ্রুত হজমির প্রশমতা ।

মাংসের গন্ধ ঠান্ডা হয়ে
 বুকে ফেরোমোন ছড়িয়ে পড়ে,
 ছেলেখেলার রাগ,ভয় বিরক্তি —
 রক্তে ফুটে ফুটে থিতিয়ে পড়ে ।
আর চারদেওয়াল স্বচ্ছ হয়ে ওঠে,
 অন্ধকার হয়ে ওঠে ধবধবে !

তারাই বোধহয় কবিতা লেখে না -
 যারা তেড়ে গাল দিতে পারে

-------------------------------------
সাজ্জাক হোসেন শিহাব
শুধু অপেক্ষা জাগে মরণের

পাখির পালকের রঙের মতো
জীবনের রং আছে আমারও ।
আমার একেকটি স্বপ্নের রং যেন
 একেকটি পাখির পালকের রং ।
সোনালি-নীল পালক যেমন
 ঝরে যায় ঝড়-ঝাপ্টার তোপে,
 ঠিক তেমন করে ঝরে যায়
আমার জীবনের অনাগত স্বপ্নগুলো
অহেতুক মরনচিন্তায় ।
আস্তে আস্তে বদলে যায়
আমার চারিদিকের দৃশ্যপট ।
শুধু অপেক্ষা জাগে মরণের ।
 অনাকাঙ্খিত তবুও অবধারিত মৃত্যু
ফ্যাকাশে করে তোলে আমার
মানসপটে গজানো একেকটি স্বপ্নের বীজ ।

অমিত কুমার বিশ্বাস
প্রেম ও বার্নল
কাঁচামিঠে আমের মতো তোমার চাউনির নীচে দাঁড়িয়ে
থেকে থেকে ভোঁকাট্টা হয়ে গেল যে ঘুড়ি তার মাঞ্জা দিতে
কেটেছি আমি নিজ হাত,তবু টু-ফু করিনি কখনও ,বা এখনও
যখন চায়ের সঙ্গে স্লিপিং পিল মিশিয়ে খাচ্ছি প্রতিরাতে,
যখন হৃদয়ের বাঁদিকে মেখে নিচ্ছি একটু খানি বার্নল

আর তোমারও বার্নলের প্রয়োজনীয়তা আছে ভাবলেই
পুড়ে যাই জোছনায়,হাজার জোনাকি ছেঁকে ধরে,
নরম পানের বোঁটার মতো তারাগুলো চেপে ধরে রাখে
হাতদুটো,অগত্যা দেশলাই ফেলে বাউল ধরি জোনাকির
সাথে,বৃষ্টি নামে,ভিজে যায় মাটির পুতুল,লাটাই,
লাছি লাছি সুতো আর নির্জন দ্বীপে হারানো ঘুড়িটাও.......

আধপোড়া  বসন্তের কবিতা
এক
জানলাটা আর নেই । ওখানেই লেগেছিল তোমার মুখ ।বহুযুগ ।ওপড়ানো চোখের মতো পড়ে আছে এখন ভালোবাসার লাশ ।অথচ কেউ দেখেনি ।ডুবোজাহাজের পিছনে লেগে আছে তোমার আধমোছা লিপস্টিক আর পোড়া বারুদের ঘ্রাণ ।নাবিকের সুষুম্নাকান্ডে তখন কেবল ই আত্মার ছদ্মবেশ ।
দুই
ব্রীজের নীচে দঁড়িয়ে তুমি বা তোমার মুখের মতোই কাঁচামিঠে রোদ।আজ আর একা নও ।এঁটো ঠোঁটদুটো ঠীক করে নিলে নিমেষেই ।তারপর ট্রেনের ক্ষুধার্ত পেটে তোমার সাময়িক সন্তরণ ।পিঠব্যাগে কেবল আমার আধপোড়া চাঁদ।

একটি  ভক্তিমূলক অধঃপতনের কবিতা
সিংহাসনে
                      কে বসে?
কেবল পা-জোড়া বেরিয়ে?

প্রেম নিয়ে একটি ননসেন্স ভারস

প্যারাশুটে উড়ছে কনডোম ছানারা
আকাশে,রোজ রাতে,আমরা গাড়োলের অনুকরণে
চিবোচ্ছি মাধবপুরের ডাঁটা আর বাসী বিরিয়ানি
স্বপ্নের মতো ,বেহুলা-লক্ষ্মীন্দারের এম এম এস ভরে
ঠক্ ঠক্ করে কাঁপছে নন-সেক্যুলার  ঘোড়াগুলো

কৃষ্ণের বাঁশি নিয়ে লং মার্চ করার পর
দোকানির ক্লিভেজ দেখবে বলে আসা ছোকরারা
আজও দেনাগ্রস্ত হয়ে গেল

দেশভাগ

এই কাঁটাগুলো  শরীরে বড্ড বিঁধছে ।
একদিন দাঁতদিয়ে উপড়ে দেবো ।দেখিস ।
যিশু নই ।হতভাগা বাঙালি ।

বুলেট ও ক্ষিদে

মানুষ খাবে মানুষ
এক একটা করে
জলে গিয়ে পালালেও
খপাৎ করে ধরে আনবে
বড়শি বা জাল নিয়ে,
উড়ে গেলেও আছে
           এয়ারগান

মানুষ খাবে মানুষ
এক একটা করে


যুদ্ধ

আমার লুকানো তলোয়ার
বুকের নীচে আত্মার রুমালে
মোড়ানো,দেখেছো?
আমার মুখোশের কারুকার্য,আয়নায়?
হায়ানা বাহিনী ,দেখেছো,
জুতোর মধ্যে লুকানো?
আমার মহামান্য মাথায়
সিলভার প্লেট,দেখেছো?

বাংলার মাটি বাংলার জল

বাংলার মাটিতে আজকাল
ধান-গমের বদলে খড়মগাছ
ভালো হচ্ছে,আজ
খড়ম পরে লাফাচ্ছে
বুড়ো জোয়ান কচিকাঁচারাও
খড়ম  পরে আসছেন মিস ইউনিভার্স,
নাগা সন্নাসী,সানি ও সয়ং ঈশ্বর
সারাটা রাজপথ জুরে আজ কেবল
খড়ম খড়ম খড়ম

স্বাধীনতা

শেকলে কুকুর ছানা

দুপুরের ভাত বিকেলে

বৌঠান চুমু খেল আমাকে

সানি কাঁদছে প্রেমে বা ফ্রেমে

মালালার হাতে চক-পেন্সিল

নাঃ
নাঃ
নাঃ

স্বাধিনতা মানে আত্মার অন্তর্বাস ছেড়ে
উড়ে যাওয়া বহুদূর !

নিরুদ্দেশের উদ্দেশ্যে উৎসর্গীকৃত একটি কবিতা

কলকাতার মুখ থেকে হারিয়ে গেল কলকাতা
কেউ টের পেল না
সেদিন বড়বাবু হাতে নাতে ধরেও
ছেড়ে দিল
নদীতে চুপি চুপি পালিয়ে গেল
ব্রীজের নীচ দিয়ে
তখন বিকেলের পাখির ডাকের মতো
রোদে তাকে বনলতার সেনের মতোই লাগছিল
তারপর বেপাত্তা
নিরুদ্দেশের উদ্দেশ্যে খবর দেওয়া হল
মেডেল  কমিটি এসে মেডেল পরিয়ে দিল
তবু ফিরে এল না
বালুর মা,সিন্নি মাসি, একরাম আলির পুরোনো
স্কুটার এমন কি নিতাই মন্ডলের তেরো বছরের
কিশোরীও তিন বছর পর ফিরে এল এক সন্ধ্যায়
কিন্তু.................

বাংলা ভাষা

আমাদের ঘাসবনে রঙিন পাখিদের দেখলেই
আমার লকলকে জিভটা বার করে দেব

তারপর ইংল্যান্ডের রানির তান্ডব নৃত্যে
প্রসারিত ওষ্ঠ হতে লাল-নীল জামা পরে

ঘাসবনে ছড়িয়ে পড়বে ইংরেজ সেনারা

আর তাহলেই লোকে বলবে
বাঃ ছেলেটার এলেম আছে!
................................................................................
পরের পাতায় যাবার জন্য ক্লীক করুন পুরোনো পাতাসমূহে

মন্তব্যসমূহ