অচেনা যাত্রী/উৎসব সংখ্যা /পৃঃ২


 গুচ্ছ কবিতাঃ
 গোপাল লাহিড়ী
 
বাঁচার সময়
কার মুখ? অন্ধকার শুষে নিয়েছে রক্ত,
কাঁচের শার্সিতে বাঁকা চাঁদ খুব সতর্ক
একলা বলেই কেমন গা ছমছম
ইজেলে ভাঙ্গা ভাঙ্গা লাইন এখন ভরসা
কিছু স্বপ্ন দেখছে আজ লতা গুল্ম
মধ্যরাতের শান্ত অপেক্ষা
নতুন ভাষা খুঁজেছে কাঠের টেবিল
ডানা ছড়িয়ে ভাসতে থাকা রাতপাখি
জলরঙে তলিয়ে যায় সব একাকিত্ব
আগুনের শিখাটুকু অপেক্ষা করে মানুষের
দরজা খুলে দিলে ঝাঁপিয়ে আসে বুনোফুল
দেয়াল জুড়ে কালো রঙ সাদা রঙ.
ঘুমের মধ্যেই ঝরে পড়ে বাঁচার সময়
সারাদিন সারারাত কখনো খুঁজে পায় কেউ

এই শহর

রাস্তার মোড়ে, এ-গলি ও-গলি হাঁটা
অন্ধকারেই নিয়ে আস পারঘাটা
বিমানে এসেছে ক্রোএশিয়া লাতভিয়া
মায়েরা এখন জালিয়ে দিয়েছে দিয়া
শহর তোমার শহর আমার ভাবি
ভাব-ভালোবাসা, সোনা-রূপ নাকছাবি
সতের উনিশ হাত টেনে ধরে  আজ
টুইট-বার্তা, রাত্রে খুলেছে সাজ
বৃষ্টির ফোঁটা, গোলটুকু নিয়ে ভিজি
ভাগ্য লিখেছে, যতসব হিজিবিজি
মুখগুলো চেনা চুপকথা পাশাপাশি
লখখী ফিরেছে, জমে টাকা রাশিরাশি
ছেলে নাকি মেয়ে এনজিও থতমত
কুড়িয়ে নেবে কি বেজন্মা শিশু যত?
আমরা মুখোমুখি

ভালোবাসা ও হিংসা কমবেশি সবার মধ্যেই  আছে
হয়ত  বা একটু পুড়ে পুড়ে কালচে হয়ে গেছে
তবু ভালো লাগে এই চাপান উতোর
মেঘ চিরে চিরে যে সব প্রশ্ন উঠে আসে
উত্তরে কি ভাবে বলি সত্যি কথাগুলো
আসলে আমাদের সারাটা জীবনই এক লজ্জা
মজ্জাবিহীন  অস্থিহীন স্বপ্নহীন কাহিনী
যেন ছিল না কিছু ভালো, সাজানো কথা
এত ভারী ভারী অখ্খরে লেখা থাকে
ক্ষতস্থানে নেই কোনো রক্তের দাগ
আজ অনেকদিন পরে আমরা মুখোমুখি
তোমার চোখ যেন ফসল শন্য মাঠ
পাঁশুটে হলদেটে বিকেল, ঠোঁটে শব্দহীন সংলাপ
এদিকে নিজের মতো ভেঙ্গে ভেঙ্গে যাচ্ছে সময়
-------------------------------------------------------------------------------------------

গুচ্ছ কবিতাঃ
ফা হা   রা

লাঠি

শেওলাসবুজ আঠালো পানিতে লাঠি ডুবে ছিলো শীর্ষস্থানে প্রজন্মের পতাকা ছিলো না

সুতাগুটি ঘুরতে ঘুরতে সময় লক্ষ্য করে লাঠিচোয়া জলকেলাস ফাটিয়ে মাথা তুলছে কে
 সভ্যতা? লাঠির মাথায় বজ্র চমকালে নবজাতকের স্মিতবিদ্যুতে জগৎ চমকায় ।  ইতিহাস

 হাসে: এমন দণ্ড যার প্রহার এড়িয়ে পৃথিবীতে কারো আাসার তরিকা খুলতেই পারে না



  রাজা বা রাষ্টপতির বাহুবল নতজানু ভিক্ষুকের মনে দাঁড়ানোর একমাত্র হিম্মত লাঠি
 তেরছাতীব্র প্রতিটি লাঠির গোড়ায় গোশতগঠিত ডাবল ডট ডিমকোষ! কেউ কেউ বলে

নতুন প্রজন্ম যুগপ্রগলভ ডট-কম ডট-কম বলে গলা ফাটায় ভাষাপুঁজ, প্রহসনচারুতা!



লাঠিখেলার গোলঘর সার্কাস পরিধিকে যারা খাটো করে দেখে তাদের প্রতি লাল চ্যালেঞ্জ

পর্দার ওপাশে গেলে তারা কি বলতে পারবে: দ্যাখো, তাবুরেখার উল্টো দিকে জগৎ আছে, যা 

নিস্তরঙ্গ এবং যার নামগন্ধও তোমাদের কারো জানা নেই আর মোটা দাগে রেশ টানা যায়:

-এক লাঠিচার্জের রাষ্ট্রহীন খেলা ব্রহ্মরাষ্ট্র জুড়ে, দূরে আর দিগন্ত নাই, লাঠিমুক্ত লবঙ্গপ্রদেশ
 


 পিষ্ট হবার পরে একজন ক্ষতস্থান খুলে দেখায় ধস্ত মূলো আর ভিক্ষা করে অন্য একজন
দামি শাড়ির স্বর্গে নিজের গলন্ত ঘা ঢেকে রাখে ভয় মাছি উড়োতে কৃতদাস পাচ্ছে না



নুনজলে মিষ্টতা আরোপ

জীবনের ত্বকে জিভ লেলানো ছাড়া যৌবনের আর কী করার থাকে বুঝতে না পেরে

একজন আত্মহত্যার দিকে গলা বাড়ালো শূন্য থেকে আওয়াজ এলো, স্বাগতম



বলাই হয়নি, তার জামার গোপন আস্তিনে একটি ক্ষুরধার ছুরি ছিলো যা দিয়ে সে

সময়ের উগ্রতাকে আগলে 'রে ঘাড় থেকে ধর নামাতে পারতো একমাত্র পোছে


দেরি হলে এমন হয়দড়ি ডিঙিয়ে গলা আর সবুজমাঠের পটে এগোতে পারে না  

 গোঙানির স্বরে সদ্য সাবালকত্ব-পাওয়া এক পোষা মোরগ বাক দিয়ে ওঠে অবেলায়
 খোপকাটা কাঠের বাক্স থেকে, যেখানে ডিমের উপর তাপ জমছিলো পালক চুয়ে


 গোল আলুর খোসায় বৃষ্টিরপুঁজ জমে তাতে ছেলেটির চেতনা নিমেষে দ্রবীভূত

হয়ে পড়লো; সঙ্গম-উদ্বুদ্ধ মোরগের যৌবনঘোষণা শুনে কেঁপে কেঁপে উঠে এলো সে,

নিজেকে আত্মা বলে চালিয়ে, যদিও আত্মা বিষয়ে সে মূলত - জানতো না



 না-জানার ঘোর অবশ্য যাবতীয় আলোকদৃশ্যকে আকর্ষণ করে তার গোশতের ভাঁজে

আব্রু নষ্টের ভয় থাকলে শাড়ি না-পরে বুনোজঙ্গলে উদয়-ভাবনা মনেই আনতো না চাঁদ



 যদি সে জানতো সবজির কন্দমূলে জ্যোৎস্নার কষে এতো দ্রুত অকথ্য পচন শুরু হয়

 সে তার জিহ্বাকে চালিত করতো একাটি সনেটের সুস্বাদের উপর দিয়ে অনায়াসে



 নাভির নিচ থেকে একটি শামুক উঠে এসে হৃৎপিণ্ডের সবুজ ঝোঁপে শান্তিপ্রয়াসী হতো

 হাই-প্রেসারের চিন্তা থাকলে সমুদ্রের বয়ামে নিজেকে ডোবানোর কথা ভাবতেই পারে না



  সূর্য হায়, অযথাই ছেলেটি অভিমানী শ্রুনুনে বেখেয়ালে মিষ্টতা আরোপ করতে গেলো!



সি বা
 কপালে শাদা জলপট্টি, নিচে তবু কেন যে কপাল পুড়ে ছাই

টের পাই মায়ের হাত-ফসকানো ভেজা চাঁদ গোপনে উড়ে

নক্ষত্রের পুরনো গারদে ফিরে যেতে চায়──খুব ভয় লাগে !



 কাঁসার গেলাসে বিস্কুট চোখের পানিতে লে হলুদ নরম

পলিদ্বীপ প্রহর কেটে রাতের লাল ফিনকি দ্যাখো ছোটে



 জ্যোৎস্নার শ্বাস কফে প্যাঁচার কণ্ঠস্থান তুষার বরফে কিছুটা

 জমাট; অশনির ডানা থেকে শিশির কুঞ্জে পালক খসে পড়ে



 পেটে দ্রবীভূত সিবাজল সেবার মজদুরি যথাক্রমে সেরে

 রাত শেষে রোদের আশায় অন্ধকার ছেপে জ্বালায় প্রার্থনা

বিন্দু বিন্দু ঘামের আকারে স্মৃতি কষ ঝরে ভাঙা হাড়ে



পেটকুঠুরি

 কানা, তবু আকাশ ধরা ফাঁদ পাতছি, না, সম্ভবত ঠেকাতে পারবে না

তারার ঘটে পদ্মসাগর, নোনা কপাল তুষের ধূপ না চিনে পারবে না



মাছের চোখে চতুর বটি জলের ফলায় কাটা এবং ফলার উপর রোদ

যে ছুরিটা সালাদ কেটে মুহূর্তে চম্পট, খাদ্যপ্রাণের পেটকুঠুরি চেনে !



 গোলমরিচের কূটনামি ঝাল ঘামের সাথে মেশে, কেতর কাটা হাতরুমালে

 লবণ মুছতে ব্যর্থ হাপিত্যেসসতর্কতা, দৃশ্যপট কার না চোখে পড়ে !



প্রত্নকলস

পাথর চাপা কাঁসার কলসে শ্রমিকের পোড়া ঘাম সোনার কয়েন

ডুবে আছে; রসচিতৈ মনে রে, দ্যাখো, চাঁদের ঝোলানো জিভ

নিচে নেমে আসে ঘন জ্যোৎস্নায় ফসিল ঝরা পাতায় রক্তের

দুয়েকটি ফোঁড় ধুলোর পালকে সভ্যতার ছাতকুঁড়ো মিশে আছে



 ছলম খোলা সাপের পাশে রতি প্রাক্তন পুরনারী ঘাসের ছুরিতে

 কাটাকাটি ছক কাটা ঘরের চৌকাঠে পড়ে আছে ঘোলা রূপকথা

রূপকের ফুলকি জ্বেলে দ্বাররক্ষী ছুটে আসে জোর পায়ে পাশফেরা 

ঘুমের টোকায় মহাকাল দম নিলে প্রত্ন কলস উল্টে পড়ে যায়



সৌ লে  

সৌরগবলেট পেতে রাখলাম পিঁপড়েকাটা ঘন চিনিরোদ

                                           করোটির স্মৃতি, ঘাম শোধ

                                            ছায়ার টিসুতে জটলা দিন 

               স্বপ্ন চুয়ে নীরবতা মদ লিকারে লিপ্ত সূর্য সারথী

                                         লিখে দিলো নাম, ইনসুলিন



   ফোঁড়া টনটন বাদামি আভা

  নিচে জলপুঁজ কিছুটা লাভা

 মধুমেহ ভোর দেহদৌলত, ঝুলবারান্দা মানে পরবাস

                                                                ঘাস লবঙ্গ অনুসঙ্গটি

                                                       মাথা কুটবে, শিশিরের ঘটি

                                                             সীমিত কথার অনুপ্রাস



                               মহাসমুদ্র সিরকার পিপা চলবে কি চুমুক সঞ্জীব দা

                                                                 বঙ্গোপসাগর মাত্রা টেনে

                                      সন্ধার মেঘে আখরোট ভেবে কে বসায় দাঁত

                                                                                 সূত্র না মেনে
                                                              উপর-নিচে কামড় দ্বিঘাত



                               সোনাডিম পারা হাঁস জুটলে অনাদায়ী খাতে একটু বাকি

                                                                          পরিশিষ্টের খুচরো সাহস !

                                                                         এমন হলে পোষাবে নাকি

                                আনো আরোগ্য রতিলাবণ্য হালকা ছবি লীলাবতী ঘোষ



ছি টা

 মাছের ফুলকা থেকে নেমে, তাকে বললাম, বস্তুত আমিই বড়শিচোর;

 ক্ষমাকামী, ছলকানো জলের ফাঁকে চোখ মেরে পলকের অপরাধে



ঝটকা টানের পর সে যখন ধানকলসের দুধ ছিটকে ভিমরি খেলো

তুলে নিয়েছিলাম ছিপ টানের কুহেলিকায়, ভাঙা রৌদ্রের ছলনায়



 গলার নিচে অতরকিত বক্রতার লোহাফুল আটকে গেলে কেমন লাগে

 সে- জানে, বাচার আশায় প্রথম লাফ যে-দেয়, জলের সরল টানে




 ---------------------------------------------------------------------------------------------------------
'অচেনা যাত্রী'  পড়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।বাকি অংশ পড়ার জন্য অনুগ্রহ করে পরের  পাতায়  যান ।আপনার মূল্যবান মতামত জানান।আমাদের পরামর্শ দিন । ভালো থাকুন । ভালো রাখুন ।   

মন্তব্যসমূহ