অচেনা যাত্রী/প্রথম বর্ষ/তৃতীয় সংখ্যা/ বিষয়ঃ প্রেম-অপ্রেম /কার্ত্তিক ১৪-কার্ত্তিক ২৯,১৪২০/নভেম্বর ১-নভেম্বর ১৪,২০১৩/ পৃঃ২

  [ অনুগল্প ]                                           প্রতীক্ষা/শুভঙ্কর রায়

                          সুজিত আর অপর্ণা দুজনে বেশ ঘনিষ্ঠ বন্ধু । শুধু বন্ধু তাই নয় ,দুজনে সারা জীবন একসাথে কাটাবার স্বপ্ন দেখে, স্বপ্ন দেখে একসাথে মরার । দুজনেই জয়েন্ট এন্ট্রান্স দিয়েছিল, ভাগ্যক্রমে সুজিতের সুযোগ হয়নি ডাক্তারি পড়বার । তাতে একটুও হতাশ হয়নি সুজিত। অপর্ণাকে দিয়েই তাঁর স্বপ্ন পূরণ করবে । তাই তাঁর বাইরে যাবার সব ব্যবস্থা সুজিতই করেছে যথেষ্ট হ্যাপা সহ্য করে ।
                    অপর্ণার বাইরে যাবার সবকিছুই ভালো ভালোয় গুছানো হয়ে গেছে । আজ রাতেই ট্রেন । অপর্ণার সাথে যাচ্ছেন তাঁর কাকাবাবু, যিনি ব্যাঙ্গালুরুতেই থাকেন। অপর্ণা  ওখান থেকেই সব করবে। সুজিত
ইষ্টিশানে ছাড়তে আসে । তাঁর মনটা খারাপ , সে সুযোগ পায়নি তা নয়, অপর্ণাকে ছাড়া দীর্ঘ কয়েকটা বছর থাকতে হবে। ট্রেনে উঠে বসেছে অপর্ণা । হুইসাল দিয়ে ট্রেন চলে গেল অপর্ণা সুজিতকে দেখে সুজিতও অপর্ণার দিকে তাকিয়ে থাকে হাত নাড়ে কিছুক্ষ বাদে ট্রেন কোথায় মিলিয়ে গেল ।
                সুজিত গত দু'বছর যাব রোজ সকালে
ইষ্টিশানে অপেক্ষা করে অপর্ণা আসবে । হিসাব মতো  দুবছর আগেই আসার কথা ।  আসবে তো দরের কথা, কোন খবরই  নেই তাঁর। বাড়ির কেউ-ই বলতে পারেনা । তাই অপর্ণার পথ চেয়ে বসে থাকে সুজিত। রোজই যাঁরা আপনজনদের নিতে ইষ্টিশানে আসে, তাঁরা আপনজনদের পেয়ে খুশিতে ঘরে ফিরে যায় । রোজ ব্যর্থ হয়েই ঘরে ফেরে সুজিত। আবার নতুন আশা নিয়ে সকাল বেলা হাজির হয় ইষ্টিশানে। এভাবেই তাঁর দিন যায়-দিন আসে ।
                 সেদিনও ব্যর্থ হয়ে ঘরে ফিরছিল । হঠাৎ  সুজিতের চোখ ফিরলো এক রিক্সা , অপর্ণাকে দেখতে পেল । কিন্তু পাশে বসে থাকা ভদ্র লোককে চিনতে পারল না । তাকে তো কোন দিন দেখেনি। তবে কি ? না হতে পারেনা । ও অন্য কেউ । এখনও অপর্ণার জন্য অপেক্ষা করে ইষ্টিশন চত্বরে । যদি তাঁর অপর্ণা ফিরে আসে।

---------------------------------------------------------------------
 ছোটগল্প                            বেড়াল/অমিত কুমার বিশ্বাস

                                                                     এক
                 একটা মরাকান্না ফাঁকফোঁকড় সম্বল করে  ঘরের দেওয়াল চুঁইয়ে পড়ছে । এ কান্না কিসের? এত করুণই-বা কেন? শ্যামলী আত্মঘাতী হলে তার মা এমনই শেষবার কেঁদেছিল ।  একমাত্র মেয়েটা ওই শীতের রাতে উঠানের চালতা  গাছটাতে অভাবে ঝুলে থাকবে-- তার মা ভাবতেই পারেনি ।
               আধঘুম থেকে বিছানায় উঠে বসে উৎসব । হাতের কাছের  চাদরটা কোনওমতে  গায়ে জড়িয়ে ঘরের মেঝেতে দাঁড়ায় ।তারপর কি এক অনিবার্য  ডাকে সাড়া পেয়ে দরজার দিকে এগোয় । দরজা পেরিয়ে চিলেকোঠা, চিলেকোঠা পেরিয়ে উন্মুক্ত ছাদ ।ছাদে আসতেই সে অনুভব করে কান্নাটা তাঁর শরীরের সবকটা রোম খাঁড়া  করে দিয়েছে ।
              ভোর চারটে ।কুয়াশাচ্ছন্ন আকাশে আবছা চাঁদের আলো ।সদ্য সন্তান হারানো মায়ের ধুমায়মান চোখের মতো কুয়াশা থেকে বিন্দু বিন্দু জল অদ্ভুত এক শব্দে মাটিতে আছড়ে পড়ছে ।মৃদু ,অথচ স্পষ্ট ।পাতা ,ডাল বা নীড়ে জমা এ জল  । মনে হয় এ ক্রন্দসী এক গোপন অভিসন্ধিতে মত্ত --এ তারই ফিসফিসানি ।এছাড়া  পৃথিবীটা ঘুমিয়েই ।মানুষজন,গাছপালা,পশুপাখি--সব । এ অন্য পৃথিবী ।অন্য কেউ ।জন্ম থেকেই গম্ভীর হয়ে আছে ।আর এই নীরবতা ভঙ্গ করে  কে কাঁদে?শ্যামলীর মা রাতের অন্ধকারে পথে বসেই মাঝে-মধ্যে হাউমাউ করে কাঁদে । আবার হাসে ।সেটা হাসি না কান্না তা বোঝা দায় ।সেও তো ক'মাস হল চোখ বুজেছে ! তবে?
               ছাদের   কার্নিশে দাঁড়িয়ে অদূরস্থিত ল্যাম্পপোস্টের ধ্যাবড়ানো আলোর নীচে চোখ রাখে উৎসব ।পরপর ক'টা টালির বাড়ি ।কুয়াশার পিছনে অস্পষ্ট ।সেখান থেকেই  । সারাদিন মাইক,উলু-শঙ্খধ্বনি ,ভিডিও---তারপর ঘুম । চরাচর ঘুমিয়ে ।
               ঘুমিয়ে থাকে সোমা-রুমা । ভোররাতে ওরা যেন বেশি ঘুমাতে ভালোবাসে ।কেউ জাগালে চটে যায় । ভীষণ ।উৎসবের আবার শোওয়া খারাপ ।ঘুমের ঘোরে এলোপাথারি হাত-পা ছোঁড়ে ।খবরটা ফাস হয়ে যায় ।শুনে তো দু'বোন হেসেই খুন ।উৎসব খুব লজ্জা পায় ।এক হপ্তা ওবাড়ি মুখো হয়না ।মুদীখানার দোকান থেকে নগদ কুড়ি টাকা দিয়ে একটা  চটের বস্তা কিনে আনে,তাতে কোমর পর্যন্ত  ঢুকিয়ে  রাতের পর রাত শুয়ে থাকে,তবু বদ অভ্যাস কিছুতেই যায়না ।আজও কি তারা ঘুমিয়ে?ঘোরের মধ্যে?
              একটা  ট্যাক্সি স্টার্টের শব্দ । কান্নাটা এবারে আরোও তীব্র ,তীক্ষ্ণ ।কিছুটা সমবেত । তারই মধ্যে  একটা করুণ কন্ঠের আঁচড়ে ফালাফাল হয়ে  যাচ্ছে কুয়াশার হৃদয় ।এ কান্না সোমার ।কাঁদবেই তো ।রুমা যে চলে যায় ।মা মারা যাবার পর সেই তো তাকে সন্তানের মতো আগলে রেখেছে ।এমন কি উৎসবকেও ।হাতে হাত রেখে উৎসবকে কথা দিয়েছিল,বোনকে সে তাঁর হাতেই তুলে দেবে ।
              একটা নারকীয় চিৎকার করে ট্যাক্সিটা কান্না ও উলু-শঙ্খধ্বনিকে পিছনে ফেলে অন্য জগতে অদৃশ্য হয়ে যায় । ম্যাজিক ! শব্দটার ক্রম অবলুপ্তির পরও নিষ্পলক চোখে এক ফোঁটাও জল এল উঁকি দিলনা ।পাথুরে চোখ ।পাথুরে হৃদয় ।পাথুরে শরীর । তবু সেই পাথরের গোপন ফাটল দিয়ে বিষাদের বারিপাত নৈঃশব্দ্যের ঝর্ণাধারায় ছড়িয়ে পড়ে পরিমন্ডলের আনাচে-কানাচে ।একটা ঘর ভেঙে চুরমার হয়ে ভেসে যায় স্রোতে,একটা অভিমানী প্রণয়মুখর তলোয়ার  মুহূর্তেই দু'ফালি করে পৃথিবীটাকে ,একটা পথ যেতে যেতে হঠাৎ কি এক নিষ্ঠুরতায় থমকে দাঁড়ায়,তারপর একটু বাঁক নিয়ে পথিককে সহসা এক চরম  শূন্য ছায়াতলে রেখে অদৃশ্য  হয়ে যায় ।কিছুটা চোখরাঙানী ,কিছুটা  অহং এর লড়াই,কিছুটা ভুলবোঝাবুঝি ।প্রতিটা শব্দ যেন পিয়ানোর চাবির মতো সাজানো । কে বাজায় ? এত স্পর্ধা কার ? ভিতরটা তোলপাড় হয়ে যায় উৎসবের ।দু'হাতে কান চেপে সে একটা অস্ফূট আর্তনাদ করে,"আঃ" !
                                                    দুই
              দরজা বন্ধ করে ঘরে আসে উৎসব ।আলো জ্বালে ।চোখ ধাঁধিয়ে যায় ।দু'হাত দিয়ে চোখ-মুখ ঢাকবার   চেষ্টা করে । যারা অন্ধকারে অভ্যস্ত তাদের ঠিক আলো  সহ্য  হয়না ।একটা পলায়নবাদী প্রবণতা সংক্রামক রোগের মতো আঁকড়ে ধরে । মুখ থেকে আস্তে আস্তে হাত সরায় উৎসব ।বিছানায় আসে ।বালিশে মাথা রাখতেই অবাধ্য সৈনিকের মতো  স্মৃতি ঢুকে পড়ে করোটীতে ।সহসা কেঁপে  ওঠে উৎসব ।চোখ বন্ধ করে ।ঠোঁট কাঁপে ।বিষাদ সেখানে একটা দৃঢ় চুম্বন রেখে গেছে ।কী ভাবছে উৎসব ? পালাবার কথা ?হ্যাঁ ,সেদিন পালিয়ে গেলে আজ হয়তো প্রেমের মানেটাই অন্যরকম হত ।
               কান্নাটা প্রায় মুছে এসেছে ।পলেস্তারা খসা দেওয়ালের দিকে তাকায় উৎসব ।একটা মাকড়ষা কি সন্তর্পণে জাল বুনে চলে সেখানে । কেউ টের পায় না ।একটু পরেই আর একটা উৎসব সেখানে ধরা পরবে । লাফাবে-ঝাঁপাবে ।বোবাকালা ছেলের মতো শুধুই গোঙাবে ।
              হঠাৎ একটা বেড়াল  ধপ্ করে মেঝেতে লাফ দিয়ে পড়ে । ঘোর থেকে বেরিয়ে আসে উৎসব । মুখতুলে এদিক-সেদিক চাওয়ার পর  বেড়ালটি  ডেকে ওঠে,"মিয়াও"।সমস্ত ঘরটা যেন কেঁপে ওঠে ।আশ্চর্য ! এরকম  ভাবেই কিছু আগে কে যেন কাঁদছিল !ছাইছাইরঙা বেড়ালটির শুকনো মুখের দিকে তাকানো যায়না । চোখ  দুটো ঈষৎ সিক্ত ।সেখানে অশ্রু রেখা স্পষ্ট । বেড়ালও কাঁদে ।অভিমানে সারাটাদিন কচুবন,ছেঁচিঘাট,ননিতলা  একাকী ঘুরে বেড়িয়েছে । মালকিন চলে যায় যে !আর আসবেনা কখনও ।
            অন্য দিন হলে দৃশ্যটি হয়তো অন্যরকম হত । তড়াক করে লাফিয়ে উঠে দরজার হাক নিয়ে বেড়ালটিকে মারতে যেত উৎসব ।পিছন পিছন ছুটত । কচুবন,ছেঁচিঘাট,ননিতলা  পেরিয়ে বাড়ি পর্যন্ত যেত । অমনি ঘর থেকে ছুটে আসতো বেড়ালের মালকিন । আর বেঁধে যেত ঝগড়া । তুমুল । আড়ি হত । পাক্কা তিনদিন কথা বন্ধ ।
               উৎসবের মুখে  আর কোনওরকম আক্রমণের অভিব্যক্তি নেই ।ভাবলেশহীন চোখে বেড়ালের শুকনো মুখের দিকে চেয়ে থাকে ।বেড়ালটি এবারে এক লাফ মেরে বিছানায় ওঠে ।আবার ডাকে,"মিয়াও"! উৎসব কাত হয়ে শোয় ।বেড়ালটি বুকের কাছে আসে । চাদরের উপর দিয়ে তার  নরম তুলতুলে মুখ উৎসবের বুকে ঘষতে থাকে ।তারপর হাত,পা ,লেজ এক জায়গায় করে অমায়িক ভঙ্গীমায় শুয়ে পড়ে ।উৎসব হাও দিয়ে বেড়ালটিকে বুকের সাথে মৃদু চেপে ধরে ।সামনের দেওয়ালে তাকায় ।দেওয়ালটা ক্রমশ এবড়ো-খেবড়ো হয়ে আসে ।কাঁপে । উৎসবের দু'গাল বেয়ে মুক্তোর মতো জলধারা নিঃশব্দে গড়িয়ে পড়ে ।
             
.............................................................................................
 ছোটগল্প[প্রেমের]                  দৃষ্টি/অমিত কুমার বিশ্বাস


 
                                                          এক 

               পথটা সরু । দু'পাশে সারি সারি গাছ ।ঘন। একটা বিন্দুতে এসে মিসেছে ।আর সেদিকেই দৃষ্টি ।পথে নয়,পথের উপর হেঁটে যাওয়া এক নদীর উপর ।নদী? হ্যাঁ নদী ।রূপসা ।সে -তো নদীর-ই নাম ।নদীর মতোই ঢেউ খেলে যায় ।ছোঁয়া  লাগলেই কাঁটা দেয় ।পবিত্র হয় শরীর ।নদীতেই তো পাপমোচন ।শাপমোচনও ।
           রূপসা এবারে ছোটে ।প্রকান্ড ঢেউ ।মাটি কাঁপে ।প্রথমে মৃদু । পরে বাড়ে ।বেড়ে যায় । ক্রমশ । এ এক মানানসই  চলন । সম্মুখে সমুদ্র । ঘাসবনের ।এখানেই সঙ্গম ।সুতীব্র । রূপসা এবারে পিছনে তাকায় । হরিণীর মতো ।বঙ্কিম গ্রীবা ।হেলানো নিতম্ব ।অমায়িক মুদ্রায় । এরকম চৌকশ মৃৎশিল্পী ইদানিং খুব একটা চোখে পড়ে না ।মাটির সংগে পিরীতেই  তৈরি মৃন্ময়ী ।অসম্পূর্ণ । অথচ  পূর্ণাঙ্গ । অনুভবে ।অন্তত হৃদয়ঙ্গমের  কাছে তো বটেই ।
---এসো ।
চোখে তাঁর পাকা ধানের ভাষা ।ঠোঁটে ঘুমিয়ে পড়া পুকুরের মৃদু স্পন্দন ।চুলে ঘরে ফেরা সহশ্র পাখির উল্লাস ।
----এসোনা।
  মৃদু হাসি ।সে-ই  মুদ্রায় । তবে আরোও অপরূপ । শ্রাবণের মতোই ।এবারে এক অলৌকিক আহ্বানে সাড়া দিয়ে এগিয়ে যায় হৃদয়ঙ্গম ।
 ---দ্যাখো  ।সামনে ।
--কী?
--ঘাসবন ।
--ঘাসবন?
--হ্যাঁ ।আর নদী ।
--নদী ?কোথায়?
--ওই তো,সামনেই ।
--ও । ও- তো মুমূর্ষ ।মানুষ যে খেয়ে ফেলেছে ।
--না।
--না?
--হ্যাঁ।
--হ্যাঁ?
--হ্যাঁ বাবা । ওটাই নদী । নদীযে অমর ।
--ধুস্ ।কী যে বলনা ।নদীতো হারিয়ে যায় ।
--না।
--না?
--হ্যাঁ । নদীকথা শ্বাশত ।
--অ্য ! হঠাৎ রোমান্টিকতা ? কারণ আছে?
--আছে ।
--কী সে ?
--তুমি চেষ্টা কর ,দেখি পার কি-না !
--নদী চলছে ।মৃৎশিল্পী গড়ছে ।পিরীত চলছে । জলের সঙ্গে মাটির আর মাটির সঙ্গে জলের ।অলৌকিক ভাবে ।আর এখন সঙ্গম ।দ্যাখো চেয়ে--
--ধ্যাৎ !
বলেই লজ্জা পেল রূপসা । পাশাপাশি না দাঁড়িয়ে এবারে দুজন ঘাসবনের দু'দিকে চলে গেল । রূপসার হাঁটু ডুবে গেল । কোমরও । আরো উপরে ।এবারে সাঁতার দিচ্ছে । শাড়িটা লেপ্টে ।উন্মাদের মতো দৃষ্টি আবার সেদিকেই । রূপসা ডুবে গেল । ঘাসে । ধীরে ধীরে  । ঘাসের নীচে । প্রবল ঢেউ । হৃদয়ঙ্গম ডাকলো । সাড়া নেই । অবশেষে  সম্মুখে দৃশ্যমান  নদীচর ।আদুরে  ওষ্ঠদ্বয়কে সে রাখলো সেখানেই,আর মুহূর্তেই  উলটে গেল নিটোল নদীচর ।অগত্যা মুখ তুলে নিল হৃদয়ঙ্গম ।সহসা দুটি মায়াবী হাত ক্রমশ হারিয়ে গেল হৃদয়ঙ্গমের চুলে । ধীরে ধীরে ডুবে গেল চোরাবালির নীচে । আরো আরো নীচে ।
                                                        দুই
                হৃদয়ঙ্গমের হুঁশ এল ।মদের মাত্রাটা কী আজ একটু বেশি-ই হয়েছিল ? কী দেখেছে  সে ? কী কী কী ? একটা হাত? দুটো?তিনটে? সরু সরু? নগ্ন? নখরযুক্ত? তাকে তাঁর থেকেই লুটে-পুটে নিতে এসেছে ?কী কী কী ?
            হৃদয়ঙ্গম  উঠে দাঁড়াবার চেষ্টা  করে । পারে না । ফট্  করে পড়ে যায় ।বেহুঁশ  গান্ডুর মতো । পুরোনো তক্তাপোশে  নখে ফালাফাল পিঠ-বুক-গাল ।শরীরটা ভীষণ এক ঝাঁকুনি দিয়ে কেঁপে ওঠে মৃগি রোগীর মতো ।রোগা রোগা নগ্ন হাতদুটি তাঁর   শরীরটাকে পুটলি বানিয়ে শেঁক নিচ্ছে অবিরাম ।  হঠাৎ বৃষ্টি নামে ।জানলার বৃষ্টিবিন্দুতে আটকে যায় শীৎকার ।মাখামাখি করে কাঁচের দেওয়াল বেয়ে নামছে নীল শুঁয়োপোকার  মতো ।ধীরে ধীরে ।
               হঠাৎ পুটলিটাকে ছিটকে ফেলে দেয় রুগ্ন হাতদুটো । অসহায় পুটলিটা গড়াগড়ি খায় জানলার পাশে । জানলায় করুণ দৃষ্টি ।ঘোলাটে জ্যোৎস্না মেশানো ।বৃষ্টিবিন্দু  ঠিক যেন কোন এক মৃৎশিল্পীর তৈরি । হেলানো নিতম্ব । নদীচর । এখানে? কী যা-তা ! নদী? জানলায় ? ছুঁতে চায় হৃদয়ঙ্গম  । ঠোঁট রাখতে চায় । হয়তো যন্ত্রীর অবাধ্য ঠোঁটের ছোঁয়ায় স্পর্শকাতর  স্বপ্নের বাদ্যযন্ত্র বেজে উঠবে নৈসর্গিক উল্লাসে । সেখানেই দৃষ্টি । নক্সাকাটা  । ঘাসে শুয়ে পড়ে  । অতঃপর ডুবে যায় ঘাসের সমুদ্রে ।হৃদয়ঙ্গমের শূন্য দৃষ্টি ।সেথায় বৃষ্টি নামে ।জানলার ওপাশে বৃষ্টি ।ঘোলাটে ।এপাশেও ।কেউ কাউকে ছুঁতে পারেনা ।পারেনা ।না না না ।
             সহসা দুটো রুগ্ন হাত উঠে আসে বিছানার কবর থেকে । টানতে টানতে নিয়ে যায় পুটলিটাকে । কেবল অসহায় দৃষ্টি পড়ে থাকে জানালায় । রূপসা নদীর পানে ।    
......................................................................................................................
 'অচেনা যাত্রী'  পড়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।বাকি অংশ পড়ার জন্য অনুগ্রহ করে পরের  পাতায়  যান ।আপনার মূল্যবান মতামত জানান।আমাদের পরামর্শ দিন । ভালো থাকুন । ভালো রাখুন ।   

মন্তব্যসমূহ