অচেনা যাত্রী/প্রথম বর্ষ/তৃতীয় সংখ্যা/ বিষয়ঃ প্রেম-অপ্রেম /কার্ত্তিক ১৪-কার্ত্তিক ২৮,১৪২০/নভেম্বর ১-নভেম্বর ১৪,২০১৩/ পৃঃ৩

 গুচ্ছ  কবিতাঃ

প্রেমপদাবলী

সুবীর সরকার




প্রেমিকাকে পিঠে বসিয়ে ঘোড়ায় চেপে
                                         আসতেন

সারাদিন হলুদজিরের গন্ধ 
তোমাকে দেখলেই গল্পের অনুষঙ্গ



প্রমোদ প্রমাদের প্রশ্ন উঠবে তারপর

এবং ইত্যাদি নিয়ে ভাবতে শুরু

                               করো

তোমার মুখে বুঝি বিকেল নামছে



কলতলায় মাছ ধুতে যাচ্ছো

জ্যামিতি বাক্সের গায়ে জোড়া

                         মথ

বিবাহবাজনায় ঋতুবদল




কার সঙ্গে হারিয়ে যাচ্ছো!

অপেক্ষারত ডিঙিনৌকো

সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে

আঙুলে চাঁদের আলপনা


৫ 
গলিতে আলো জ্বললেই সুদূরতা

চারদিকে গাছ।গাছের

           অন্ধকার।

হ্যারিকেন ঝুলিয়ে তুমি পা তুলে

              বসো



ঘরে ফিরছেন ভরারৌদ্রে

ঘর জুড়ে ভদ্রাসন পাতা

চিকন হাসির সুর গড়িয়ে

                    নামে



 
মাথা নিচু করে ফিরে যায়

                   ঘোড়াটি

তুমি অন্যমনস্ক!

চাপা গলায় ফোড়ন কেটে

তোমার প্রেমিকা এখন

                মূলমঞ্চে

 ----------------------
 গুচ্ছ  কবিতাঃ
পারু পারভিন
নির্মোহ
----------
দশ দিক খুলে দিলে
সীমান্ত চৌকি তুলে নিলে,
অবারিত স্বাধীনতায়
ডান ভুলে বামে
দিক ভুলে ওদিক ঘুরি
যে হিংসায় ছোবল নেই ,
যে চলাচলে লোভ নেই ,
যে হুঙ্কারে গর্জন নেই ,
যে হাতের মুঠায় তপ্ততা নেই ,
যার স্বপ্নতে আগামী নেই ,
সে স্বাধীনতায় আমার
কোন মোহ নেই !

ইচ্ছার বেসাতি
-------------
ইচ্ছার বেসাতি
গারো আর খাসিয়ার যুগল রেখে
চলে যায় সমতল জলায়  ,
কিশোরীর কপোল ভেবে ।
দিগন্ত নুয়ে পড়ে,
পুড়ে পুড়ে কামনায় ঠোঁটে
বিধৌত নদী সঙ্গমে সাগর খোঁজে ,
পলিতে বপন করে যৌবন প্রকৃতি ।
এরপর ফুলে ফলে ভরে উঠে ,
চরাচর,সংসার সমতল !
আমার তৃষ্ণায় ডোবে
তোমার তৃষ্ণাও এরকম।

কথা আর কবিতা
---------------
চুপচাপ শুনি কথা আর কবিতা
গরল সুখের পংতিমালা
তারার পাশে বসে ।
সারা রাত পাঠ কর
ফিসফাস নারীর বর্ণমালা
চোখ,চুল,গ্রীবা,বক্ষ,কটিদেশ বর্ণনা ।
শুনে শুনে পুড়ে যাই
যাক কন্ঠ নিভে !
হুলফোটা কষ্টে কাতর হই
ওঠানামা কথার মুন্সিয়ানায় ।
রাতভর শোনাও দেখি
একের পর এক কবিতা
তোমার পংতিমালা !

হার মেনে যাই
-------------
তোমাকে স্মৃতিময় গাছটার নীচে রেখে  এসেছি
যেমন দাঁড়িয়ে থাকতে !
বই খাতা হাতে তোমাকে অতিক্রম করতাম ।
দেখাদেখি হলে,
সারাদিন ভাল লাগায় ভাসতাম ।
যদি হতো নীল খাম বিনিময়,
কী যে ভাল লাগতো !
এখন বারো হাত তাঁতের সীমানায়
মাখন গলায় মিথ্যে যখন বলি
আসল টুকু কুরে কুরে খায় ।
ভেতরে তোমার আধিপত্য
বাইরে তাকে ভান ভনিতায় ভাসাই ।
জীবন নামের এই প্রহসন,
নিজের কাছে নিজে এখন
ভীষ ভাবে হার মেনে যাই !
  

         গুচ্ছ  কবিতাঃ
         দেবাশিস সরকার

        একাকিত্বের গল্প
তুমি আছো নিরবে নিরব হয়ে ওই হিজল গাছটির মতো একাকি দাঁড়িয়ে, এই তো চেয়েছিলে তুমি, সময়ের পরশপাথর হয়ে আমার দুর্বলতার সম্ভাবনাকে দূরে ঠেলে। একাকিত্বের সুখ তুমি পাও, পাখিদের জমজমাট বিতর্কের আসরে, অথবা নিঃসঙ্গ বলা গাছের ডালে ক্লান্ত চিল এসে যখন শোনায় ক্ষুধার গান। এই তো চেয়েছিলে তুমি, আমাকে হৃদয়ের লক্ষ যোজন দূরে নাগরিক কোলাহলে যান্ত্রিক সভত্যায় ঠেলে দিয়ে। আমিতো শুধু তোমায় চেয়েছিলাম, জানো স্বজন হারানোর ব্যথায় আজ কাঁদতে পারি না, হাসি মুখে কপট ছলনায় প্রেমের গান গাইতে হয় আমায়। তবু তোমার একাকিত্বের গল্প লিখব বলে রোজ বসি খাতা কলম নিয়ে, কিন্তু লেখা হয়ে উঠে না। কলম থেকে রক্তের অশ্রু ঝরে পড়ে মিশে যায় পড়ে থাকা হিজল ফুলের বিছানায়। তোমার নিঃসঙ্গতার সঙ্গী কানি বকগুলো প্রতিদিন খাদ্যের বাজারে বিক্রি হয়ে যায়, ঘুঘু গুলো রক্তের পুকুরে স্নান করে ধনীর রসনায় তৃপ্ত হয়, শালিক, চড়ুই দোয়েলও মিশে যায় এদের ভিড়ে। হিজল তলায় বসে তোমার একাকিত্বের গল্প আর লেখা হয়ে উঠে না, নিরব সন্ধ্যায় ঝিঝিপোকার গানে মগ্ন হয়ে দেখি, আকাশ ভরা জমাট অন্ধকারে তারার মেলা...........।


অভিমান
এই জীবন দিয়ে অনুভব করেছি অভিমান বোঝার অভিমানিরা শুধুই ভুল বোঝে। উদ্দিপ্ত উল্লাসে যখন তোমাকে জড়িয়ে ধরতে চেয়েছি তুমি ভুল বুঝেছো, তোমার নিষ্ঠুর বিদ্রূপে যখন অভিমানে ঠোঁট ফুলিয়ে থেকেছি তুমি তখন অন্যের হয়ে গেছো। আর আজ তাই অভিমান করতে বড় ভয় হয়, দারু দুঃস্বপ্ন আমায় তিলে তিলে বঞ্চনার মুত্যুহীন স্রোতে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। উপবাসী কামনারা বিক্ষোভে ফেটে পড়ে তৃষ্ণার ব্যগ্র আলিঙ্গনে স্তব্ধ রাতে। হৃদয় ক্ষতের বিভৎসতা থেকে চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে হয় আমিতো প্রেম চেয়েছিলাম, চেয়েছিলাম একটু ভালোবাসা..তোমার রহস্যের ইন্দ্রজাল ছিঁড়ে আর আমি নতুন করে ভালোবাসতে চাই না , নতুন করে অভিমান করতে চাই না......


এই সব জীবন
ঘরের অবজ্ঞা আমায় দিয়েছে নাবিল মুক্তি, ভালোবাসার ফেরারী জগতের মুগ্ধ পথিক আমি, বন্দরে বন্দরে ভেড়াই তরী কামনার অলৌকিক চৈতন্যে। জ্ঞানের দুবোর্ধ্যতা আমার সয় না, বুঝতেও চাই না হীরা অথবা কাঁচের পাথর্ক্য, ভালোবাসার সুখে অর্ঘ্য দেই আমি প্রেমাস্পদে। তাইতো শুধুই নির্জনতার ভালোবাসায় বৃষ্টির ছন্দে, আলো-আঁধারির রাজ্য পেড়িয়ে ছুটে যাই তোমাদের কাছে। আমি হাতরে হাতরে জঞ্জাল সরাই একটু মুক্তার খোঁজে, পেয়েছি জানো ? অনাবিল ভালোবাসার সর্বগ্রাসী বেগে ধেয়ে আসা কুমারী কবিতা। তবু তোমার উপহাসেরা আমাকে ভাবায়- কেন চওড়া হিপের স্তনসর্বস্ব চ্যাপটারা প্রগতিশীল মিডিয়ার প্রচ্ছদ হয়ে যায়, কেন যৌনকাতরতা পুজিঁ করে চলে কুমারিত্বের শারীরিক বানিজ্য ? হা হা হা হা আমি পাগল হয়ে যাবো সত্যি পাগল হয়ে যাবো, তবে কেন ভালোবাসার আলিঙ্গনে কেবলই উদ্বিগ্ন প্রেমের প্রবাহ, নিস্তব্ধতায় মৃত্যুর প্রতীক্ষা।


স্বপ্ন-১
আমি প্রতিদিন আপন আয়নায় দেখি ভালোবাসার পুরোনো গল্প নতুন করে নতুন সুরে, অমানিশার আকাঙ্খায় তবু অধরাই থেকে যায় আমার অধর সুধা পানের প্রবল ইচ্ছা। একঝাঁক ঝকঝকে একাকীত্বের চুম্বনে কিশোরী ঠোঁটে বেজে উঠে কামনার সুর। অনুপম উগ্রতার আবির্ভাবে শূন্য হৃদয় তখন রূপান্তরের মাঠে হয়ে যায় সোনালি স্বপ্ন, অভিশপ্ত স্বপ্ন সুখমাখা জীবনের ঁচা গন্ধে অতিষ্ট শিল্পকর্মে তবুও মুনাফা লাভের বুকফাটা আহাজারি। তোমার ছোট কাপড়ে ইচ্ছাকরে শরীরের নাঢাকা অংশগুলোর ইচ্ছের উকিবুকি, অন্তর্বাস ভেদ করে দেখা মসৃন ত্বকের টাটানো সৌন্দর্য আমাকে কবি বানায়। আঘাতের পর আঘাত পেয়েও ছুটে চলি অমোঘ নেশায় তোমার সাজানো অস্থিমজ্জায়, তোমার দাবানলে জ্বলে পুড়ে ছাই হবার আশায়, অসহ্য যন্ত্রনার বিষে মৃত্যুর কান্না শোনার অপেক্ষায়, দারুণ স্বাদের রসালো গোলাপের সৌন্দর্য অথবা একটু ভালোবাসা পাবার আশায়......


আমিতো চাই কিছু নিতেও
আমিতো চাই, তবে শুধু দিতেই নয় কিছু কিছু নিতেও। এই যেমন ধরো, যদি তুমি আমার কলিজাটারে নাড়াচারা করো কিছুকাল, আমিতো একদিন স্পর্শ করে দেখতে চাইতেই পারি ? আমি যদি ইচ্ছে করে দিনের পর দিন বিলিয়ে দেই তোমায়, তবে একদিন কিছু একটা কেড়ে নিতে চাইতেই পারি। এতে রাগের কিছু নেই, অভিমানের বালাই রেখো না, সাময়িক লাভের আশায় যদি তুমি কারো অধর ছুঁয়ে সুখের জোয়ারে ভাসো, আকাশ নীলিমায় প্রত্যাশা মুখর স্বপ্নের নীড় গড়ো, তবে জেনে রেখো আমার আশির্বাদ ছাড়া সুখের পায়ে চুমু তুমি পারবেনা দিতে কখনো। হৃদয়ের কটু গন্ধ কোন পারফিউমে ঢাকবে তুমি বন্ধু ? সন্ধানী দৃষ্টি তোমার স্বরূপ খুঁজবেই, হবে তুমি নিরব একাকী। সময় আছে এখনও রাতের আধাঁরে চাঁদের উদ্ভাসে কালিমাকে ছুঁড়ে ফেল, রক্তের গভীরে মিশে থাকা সত্য প্রেমকে জাগাও, লাভ নয়, চতুরতা নয়, শেকড়ের টানে ভালোবাসার শিল্পকর্মে বাঁচো।


আজো ভালোবাসি তোমায়
হাসির ঝিলিকটি ঠোঁটের কোনে লাগিয়ে তুমি ভাবনাহীন রঙের ফোয়ারায় ভাসো, আঙ্গুলের মাথায় আচার লাগিয়ে ঠোঁটের ভেতর নিয়ে যখন চুম্বন করো, এর থেকে কামনাদীপ্ত মুহর্ত আমার জীবনে আর পাই না। জলের ভেতর গোলাপ পাঁপড়ি ছড়িয়ে তুমি যখন স্নান করো, আমার ভালো লাগে না। ভালো লাগে গ্রামের পুকুরে বুক জলে ভেসে ভেসে জলের উপর পরে থাকা হিজল ফুল দুহাতে সরিয়ে দাও যখন, তখন ভালো লাগে, ভালো লাগে দ্রুত বুকের আঁচলটি জলে ফেলে আবার তুলে দাও যখন ভেজা বুকে, স্নান শেষে ভেজা চুল থেকে টপ টপ করে ঝরে পরে বিন্দু বিন্দু জল তখন আবার ছুঁতে ইচ্ছে করে প্রবল ভাবে, সূর্যের রঙে সিঁথি রাঙিয়ে, কপালে লাল টিপ আর মুখে মিষ্টি পানের রঙ মেখে যখন ঘুরে ঘুরে বেড়াও আমার চারেদিকে, তখন কেমন অচেনা মনে হয় তোমায়। নতুন করে প্রেমের জোয়ার ডাকে হৃদয়ে। তবে যাই বলো, রান্না ঘরে যখন রান্নায় ক্লান্ত হয়ে ঘামে ভেজা শরীরের গন্ধে হানো কটাক্ষ তখন আমি পাগল হয়ে যাই, মুগ্ধ হয়ে নিংড়ে নেই ভালোবাসার সুর-স্বাদ মাখা অনন্ত প্রেমের পংক্তিগুলো। কার আমি আজো তোমায় ভালোবাসি বল
বিশেষ দিনে আমার তোমায়..........

মা ক্ষমা করো মা
মা ক্ষমা করো আমায়, লাল রঙের বিষাদকে আমি এখোন ছুঁড়ে ফেলতে পারিনি, পারিনি বিপন্ন হৃদয়ের মায়া মাড়িয়ে বলধা গার্ডেনের ইউক্যালিপটাসকে ভালোবাসতে। উলু ধ্বনির দিন ফুরিয়েছে, শাঁখের শব্দ আর তোমাকে মহিত করে না, ঢাকের বাজনাও বেশ রাত মনে হয় তোমার। ঢািরা অলস সময় বিড়ি ফুঁকে ফুঁকে অতীতের পারদর্শীতার স্বপ্ন দেখে। বাচ্চারা আর মুগ্ধ হয় না ওদের কথায়। হাত জোর করে প্রার্থনায় তোমায় পাওয়া যায় না, গায়ে মদের গন্ধ ঢেলে বিজাতীয় বাজনা আর উৎকট শব্দের অসহ্য উচ্ছ্বাসে হাস্যজ্বল তোমার অবয়ব। বধুরা আর মন্দিরে প্রদীপ-ধপতী হাত নিয়ে মাতেনা তোমার আরধনায়। শরীরের সবচেয়ে বেশি অংশ খোলা রেখে অথবা লুঙ্গি তুলে নাচন-কুদনে মত্ত ভক্তবৃন্দের কামনা শিহরণ মন্দির প্রাঙ্গনের বর্ণাঢ্য মিছিল। পবিত্র ভাগাড়ে কান্নার সংলাপ আর নয়, ক্লান্তিহীন দেহে দুর্লভ আহাজারিও করব না, তবে তৃষ্ণার্ত হৃদয় একফোঁটা শান্ত শান্তি কামনা করেছিল, ভুলে গিয়েছিলাম, তুমিতো তা দিতেই পারবে না। অপরাধ নিও না, ক্ষমাই করো আমায় মা- আমি তোমায় খুশি দেখতে পারলাম না ..


কবি নাজমুল হাসানকে
তোমার ফোনটা পেয়েই ঘুম ভেঙ্গে যায় আমার, কিন্তু রোমাঞ্চকর, রহস্যময়ী অপরূপা রূপালী তন্দ্রা র্নিলিপ্তভাবে আমায় জড়িয়ে রাখে। খোলা জানালা পেয়ে জোর করে এসে সকালের একফালি তাজা রোদ আমার পা ধুয়ে দেয় অবিরত, মৃদু হাওয়ায় কাঁঠাল পাতারা দোল খায়, বাতাসে লেগে থাকে শেফালি ফুলের গন্ধ, দূর থেকে ভেসে আসতে থাকে উচ্চস্বরে চন্ডি পাঠের একটানা শিহরণ। ফোনটা পাবার পরও হারিয়ে যাই কাশফুলে ছেয়ে থাকা মেঠোপথ ধরে নদীর কিনার, নলখাগড়ার বন পার হয়ে কষ্টের নীল প্রান্তরে। হে প্রিয় সংবাদ পাঠিকা তোমার করু মুখোচ্ছবি বার বার জানতে চায় র্ঘটনার শেষ পরিস্থিতি এখন ক...তবু সুখের তন্দ্রা আমার কাটে না। অসহ্য যন্ত্রণার বিষ ঢেলে লাব্যহীন আবেগে তবু শৈল্পিক ছোঁয়ায় সাজাই শুদ্ধ স্বপ্নের হাসি, কান্না, দুঃখ, আনন্দ আর আমার বিদীর্ণ বুকের রক্তাক্ত প্রতিক্ষিত ভালোবাসা ...........। 




  একটি কবিতাঃ


মাসুদার রহমান 
ভোরবেলা, ভোর দেবীকে

ভোরবেলার এই দৃশ্য আকাশের গায়ে লেগে থাকে
আর আমি চোখ খুলে দেখে নিই আমার জীবনের 
এক বিখ্যাত ভোর।
তিন তলার ফ্ল্যাটবাড়ি; সুরপা নামের এক ভোরদেবী
আর ওই দৃশ্যের ওপারে যে অধরা গোলক

তাকে যে একটু ছোঁব, এর জন্য ঝাঁ ঝাঁ রোদ
                                               দুপুর শাসন
ফলে, ফিরে যাবে চকিত বিদ্যুত হাওয়া
ঘুরে যাবে মঞ্চ
আমি তবে কেউ নই?
আমি কি গোধূলি লোক!
ভোরদেবী তবে আর দেরি কেন; আমার জীবনে
তুমি লিখে দাও গোধূলির প্রযত্নে ভবিতব্য
                                                 অন্ধকার
আমি সেই অন্ধকার বুকে নিয়ে
                         দূরে সরে যাব


 সপ্তর্ষি  হোড় 
অন্তরে তুমি
তুমি কি জানতে
তোমার বকুনি
 আমার মাথায়
আলোক কিরীট সাজ !


               তাহলে তোমার 
                                আমার জন্য
                                কতটা বকুনি
                                বলতো প্রাপ্য আজ !!


ফারহান ইশরাক
লাল রেস্টুরেন্ট
বুকের ভেতর লাল রেস্টুরেন্ট, জ্বলে নীল শিখা অক্সিজেন ক্ষয়ে ক্ষয়ে
ওপরে সোনার কেতলি, তাতে আছে বেদনার ফুটন্ত জল
ছুঁড়ে দেই চা-পাতার মচমচে গুঁড়ো, গুঁড়োগুলো স্বপ্নের বিচূর্ণ কণা
থেঁতলানো হৃদপিণ্ড, বুকের পাটায় ঘষা খেয়ে তুমি একটু ঢেলে দাও রস
স্টকে নেই পর্যাপ্ত আদা, সে ভূমিকা ধার্য হলো তোমার কপালে।

 পাথরিকা তোমার প্রশংসা এবার--আঙুলে চামচ তুলেছো
 তরলে ডুবিয়ে অলৌকিক তৈজসের চূড়ো, তীব্র নাড়িয়ে তাকে
 অসহ্য মাধুরি দিয়েছো।
 রেস্তোঁরার টেবিলে টেবিলে সৌখিন ঠোঁটগুলো, কিছু একটা বলাবলি করে
 গলা বাড়িয়েছে কেতলির নির্গমন ফুটো, কলকলিয়ে নেমে আসে স্বাদ
নল থেকে কাপ, কাপ থেকে উঠে আসো স্রোত
উঠে আসো পোড়া প্রেম, রক্তস্বর গাঢ় গুঞ্জরন।


অরবিন্দ দত্ত

তুমি সেই মেয়ে

                   
ফাল্গুনের  ঝড়ো হাওয়ায়

ঝড়ে পড়া পাতার  ওপর  আনমনা

হয়ে  বসেছিলে  তুমি।  

হাওয়ায় উড়ে  আসা  গাছের  হলদে

পাতা গুলো তোমার  ষড়ঙ্গে  ছুঁয়ে,

তোমাকে রূপমাধুরী  করে তুলছিল।      

আমি,  দূরে  গাছের আড়ালে

দাঁড়িয়ে   দু’চোখ ভরে   তোমার

সেই রূপ প্রত্যক্ষ করেছিলাম।   

হাওয়ায় উড়ে আসা  তোমার  কুন্তলরাশিতে

তোমারই  মুখখানি ঢাকা পড়েছিল -     

যেন  মনে হয়েছিল  চন্দ্রকিরণ    

হঠাৎ মেঘের  অবগুণ্ঠনে  ঢাকা  পড়ে গেল।

তুমি  সেই মেয়ে,  যাকে

আমি দেখে ছিলাম  –

লাল  পলাশের  মালা  হাতে,  

দাঁড়িয়ে ছিলে কংসাবতীর তীরে।

তুমি সেই মেয়ে,

যাকে  আমি  পেয়েছি ভেবে ,  

রেখেছিলাম  আমার হৃদয়পিঞ্জরে .....


 পিন্টু রহমান
চন্দ্রপ্রতিমা উপাখ্যান

পাথরগুলোও ডুবে যায় গভীর মগ্নতায়;
                   হয়তো আমারই মতো
পৌষের হিমছড়ানো কোনো কিশোরী সন্ধ্যায়
চিত্রল জোছনায়
ছাতিম শাখা আরো শোভাময়
দৃষ্টির প্রখরতা নৃত্য করে পাতায়-পাতায়।

আহা, গাছটি আজো ঠাঁই দাঁড়িয়ে:
যেমন ছিল রূপকথার সাথে প্রথম অভিসারে স্বপ্নবোনার কালে
রূপকথা নেই;
অথচ সমুখেই ঘুমিয়ে রয়েছে নিরন্ন মানুষের ঝাঁক
 টানা হুঁইসেল বাঁজিয়ে চলে যায় রাতের শেষ ট্রেন
নিভে যায় সিগনাল বাতি,
ঘুমিয়ে পড়ে পৃথিবীর সব কোলাহল
ঘুমাতে পারিনা কেবল এই আমি- গভীর মগ্নতায়......

 মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়
উদ্বাসিত পথ
লাল জলের রক্তিম আভা
আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতে  জ্বলন্ত লাভা
ধমনীতে রক্তাল্পতা
স্তব্ধ হৃদপেশী
মস্তিষ্কের অসাড়তা    
উদ্বাসন জীবন--পথের ।। 

তন্ময় দে
ফাজিল প্রেম

ইচ্ছে-টিচ্ছে অদ্ভূত,
লোনের প্রেমেও চড়া সুদ!
দামি গিফট,বন্ধুর বাইক
পেট্রলটা এবার রেশনেই দিক।


আশরাফ জুয়েল
অন্ধকার চষে ফিরেছে সম্ভ্রম

অন্ধকার চষে ফিরেছে সম্ভ্রম !  
ছিটকিনি জেগে    
এবড়োথেবড়ো আই লাইনার
ছেঁড়া চুলের জটলা নীরবে
শাড়ীর ভাঁজে মাড়ের গন্ধ  
কপালের সিঁদুর ইঁদুরে চেটেছে !
বাথটাব শুকনো বরাবর ।
এখন গা আর  গুলায় না
অবচেতন প্রেম দাঁড়ায় !
রুটিন মেনে
বুক খোঁজে তৃণভোজী চাদর

গতরাতের উষ্ণতা এখনো ঠোঁট পোড়াচ্ছে
ওরা এভাবেই খাঁটি হয়!



টুম্পা মণ্ডল
বিবিধার্থ

আয়ুষ্কাল বেঁচে উঠছে দিনে দিনে

বোতলে ভরন্ত জীবনদায়িনী মা

আমার ক্ষত নিস্তেজ করে,আমি
শিষ্টের মতো ঢলে পড়ি নরমে।   

অথচ যন্ত্রণা হয়।মাঝ রাত ফেটে

প্রসবপীড়া জ্বিভ বার করে লোভে,

আমার সন্তান ডুকরে ওঠে বুকের ভেতর।



উবু হয়ে বসে অস্ত্র তুলি হাতে,

ধার ঝলসে ওঠে প্রতিটা পরতে

কে ত্রস্ত হয়, কোথায় আঘাত বাজে, জানিনা..

নিজেই বিক্ষত করি তার প্রতিটা নাড়ি।

 এভাবেই প্রতি রাতে জেগে থাকি, 
জীয়ন্ত শুকতারার বার্তাবাহী দানবীয় লীলায়।

তবু আলোর মুখোশে জ্ঞানচক্রী উড়ে

 কাব্য আওড়াই বিলাসে।



 সুশোভন রায়চৌধুরী
 ব্রাত্য শামুক
 আমায় ব্রাত্য করে রেখেছিলি তোরা
 সাত্যকি সাজে ছদ্মবেশী
 ফুটো পকেটের ফাঁকা কানাকড়ি দেখে
 অফারের মাল , পেতে তাবেদারি
 নষ্ট নীড়ের ভেজা উঠোনেতে
 পেড়েছিস খাট সাজানো বিছানা
 ব্রাত্য কোন ধ্রুবতারা নই
 তিরন্দাজের ব্যর্থ নিশানা

শীতের কিছু ঝরা-পাতা থেকে
 মাটির কবরে মিশে যেতে পারি
 লণ্ঠন হাতে বোঝা কাঁধে করে
 মেঘমল্লারে সচকিত পাড়ি
 রুক্ষ মেজাজ , ক্রুদ্ধ নয়ন দেখি আমি খালি
 ফেটে পড়ে বুক
 মজ্জাতে আমি ঢুকিয়ে নিয়েছি
 ব্রাত্য আমি ব্রাত্য শামুক

খোলসের ধারে কেটে গেলে হাত
 ছুঁড়ে ফেলো আমি জলাশয় জীব
 পৃথিবী- বুকে রোদ্দুর হতে 
এসেছিলাম আমি জন্তু সজীব

সাজ্জাক হোসেন শিহাব
 ভাবতেই অবাক লাগে

ভাবতেই অবাক লাগে..........
আমার দু’চোখ একদিন বন্ধ হবে চিরতরে!
বিহানবেলার কচি রোদ আর দেখা হবেনা!
আর দেখা হবেনা বাতাসের ঢেউয়ে পাখা মেলানো গাঙচিল!
নদীর কুলুকুলু শব্দ হবে অথচ আমি রবোনা!
বৈশাখ মাসে বায়ু সাগরে ঝড় উঠবে ঠিকই,
অথচ সেই ঝড়ের দিনে আমার ফুসফুস রবে নীরব!
সত্যিই এমন করে ভাবতেই,
শীতের সকালের তাবৎ শিশির কণাকে,
আমার দু’চোখের অশ্মজল বলে মনে হয়।
মনে হয় বিধাতার এই পৃথিবী কতো সুন্দর!
একে ছেড়ে যেতে হবে বলেই আমার নয়নের জল,
কুয়াশার জাল হয়ে আলিঙ্গন করে এই পৃথিবীকে।
বৃষ্টির দিনগুলোকে মনে হয়, ওতো আমারই কান্না ।
ছান্দসিক কবিতা হঠাৎ হয়ে ও,
রক্তের কণাগুলো খুঁজে পাবেনা দৌড়াদৌড়ির শক্তি,
নীরব হবে কন্ঠস্বর, পচে ওঠার জন্য প্রস্তুত হবে
আমার আদরের অঙ্গগুলো..........
আঙ্গুলের ফাঁক দিয়ে ঝরে ঝাওয়া প্রতিটি প্রহরই ঠে গদ্যময় ।
অমাবশ্যার রাতে পথ হারানো চাঁদকে মনে হয়,
আঁধারের পথ ধরে ও হাঁটে আমার জীবন আঁধারময় হবে বলে।
আমার শরীর-প্রাণ থমকে দাঁড়াবে একদিনতাই 
আমার কাছে মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি বলে মনে হয়।


অমিত কুমার বিশ্বাস
খেলা
সমুদ্রের জলে আছে বিশুদ্ধ  যৌনতা
বুঝেছি স্নানে;যতবার দিয়েছি ডুব
হারিয়েছি বহু বহু দূর,নীল নির্জনে
পিপাসায় শুকিয়ে যায় শরীর
ডুবে যায় অতল গভীরে
যেখানে খেলা করে হাঙরের আত্মারা!
........................................................................................................................
 'অচেনা যাত্রী'র   'প্রেম-অপ্রেম' সংখ্যা এখানেই সমাপ্ত।পরের সংখ্যা 'কেন লিখি' ।আপনি কেন লেখালিখি করেন তা গদ্যাকারে লিখে পাঠান।সঙ্গে পাঠান কবিতা,প্রবন্ধ বা গল্প ।পড়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।বাকি অংশ[পুরোনো সংখ্যা গুলো] পড়ার জন্য অনুগ্রহ করে  পুরাতন পোস্টসমূহে যান ।আপনার মূল্যবান মতামত জানান।আমাদের পরামর্শ দিন । ভালো থাকুন । ভালো রাখুন ।            

মন্তব্যসমূহ