অচেনা যাত্রী/প্রথম বর্ষ/তৃতীয় সংখ্যা/ বিষয়ঃ প্রেম-অপ্রেম /কার্ত্তিক ১৪-কার্ত্তিক ২৮,১৪২০/নভেম্বর ১-নভেম্বর ১৪,২০১৩/ পৃঃ১

 

সূচীপত্রঃ-

ক. 

  ১।সম্পাদকীয়ঃঅমিত কুমার বিশ্বাস[ প্রধান সম্পাদক/অচেনা যাত্রী]
 ২। সম্পাদকীয়ঃ পিন্টু রহমান       [ অতিথি সম্পাদক/অচেনা যাত্রী]
 খ.
বিশেষ রচনাঃ

                    ১। প্রেম অপ্রেম এর নিস্ফলা গদ্য / অমিতাভ দাশ
                             ২। প্রেম ও কবিতা / মবিনুল হক

     গ। অনুগল্পঃ ১। প্রতিক্ষা/শুভঙ্কর রায়
        ছোটগল্প  
                  ১। বেড়াল/অমিত কুমার বিশ্বাস

                             ২।  দৃষ্টি/অমিত কুমার বিশ্বাস

।কবিতা              গুচ্ছ  কবিতাঃ  ১।সুবীর সরকার

                                   ২। পারু পারভিন

                                  ৩। দেবাশিস সরকার
             
     একটি কবিতাঃ-               
                        ১।মাসুদার রহমান
                       ২। সপ্তর্ষি হোড়

                      ৩।  ফারহান ইশরাক                      
                      ৪।  অরবিন্দ দত্ত          
                      ৫।পিন্টু রহমান
                      ৬।  তন্ময় দে
                     ৭। আশরাফ জুয়েল                    
                     ৮।টুম্পা মণ্ডল                 
                     ৯।সুশোভন রায়চৌধুরী
             ১০।অমিত কুমার বিশ্বাস


  চ।পত্রিকা সমালোচনাঃরচয়িতাঃঅনুরবর জমিতে কবিতার চা   --সালাহ উদ্দিন  মাহমুদ
    [প্রচ্দঃপার্থ প্রতীম সেনগুপ্ত]



. কবি ও লেখক পরিচিতিঃ   মবিনুল হক ,অমিতাভ দাশ,অলক বিশ্বাস,  সুবীর  সরকার ,শাহিন  লতিফ ,   আরিফুল ইসলাম , পিন্টু রহমান ,মনোজ দাস ,মশিউর    রহমান  শান্ত, অরবিন্দ দত্ত,সৌভিক দে সরকার , শর্মিষ্ঠা মজুমদার ,   শুভঙ্কর রায় ,মানিক সাহা, তনয় মাইতি ,শুভম ,সৌমেন রক্ষিত, তন্ময় দে,আশরাফ জুয়েল,টুম্পা মণ্ডল,সুশোভন রায় চৌধুরী, সালাহ উদ্দিন মাহমুদ,পার্থ প্রতীম সেনগুপ্ত,অমিত কুমার  বিশ্বাস 
...............................................................................................

                                          সম্পাদকীয়ঃ-


        প্রেম-অপ্রেমের মধ্যেই প্রকাশিত হল 'অচেনা যাত্রী'র 'প্রেম-অপ্রেম' সংখ্যা ।মাত্র একমাস  আগে ভূমিষ্ঠ হওয়া একটা ব্লগজিন এতটা সাড়া পাবে ভাবিনি ।এ সবই আপনাদের অগাধ ভালোবাসা । এর জন্য আমি চিরকৃতজ্ঞ ।প্রেম কী,ভালোবাসাই বা কী--এ নিয়ে তর্কের কোন শেষ নেই,কারণ প্রেম এক বিমূর্ত ধারণা ।প্রেম আর ভালোবাসা কি এক,না ভিন্ন ?কোথায় তৈরি হয় তারা ?হৃদয়ে না মস্তিষ্কে ?প্রেম কি  আবেগ নির্ভর,না যুক্তি-তক্কোও সেখানে চলে?প্রেম কি কেবল হরমোন হরমোন খেলা,না পাগলু-ছাগলু নৃত্যেই সীমাবদ্ধ প্রেম?এ নিয়ে কলেজ ক্যান্টিন থেকে মোড়ের চায়ের  দোকান তোলপাড় ।আর সবাই এ বিষয়ে একটা প্রচ্ছন্ন গর্ব অনুভব করেন যে তিনি এই 'প্রেম বিষয়টা' অন্যের চাইতে একটু বেশিই বোঝেন ।আমিও।এ গর্ব-রোগ স্বতঃস্ফূর্ত ।পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়াহীন । ইতিবাচক । সকল সৃষ্টির ভিত্তি ।এই প্রেমের উল্টো পিঠ অপ্রেম।অপ্রেমও সৃষ্টির ভিত্তি ।তবে তা কারো কারো ক্ষেত্রে । তাঁরা নমস্য ।বাকিরা হয় উদাসীন, নয় ধংসাত্মক !যা কাম্য নয় । কারণ তা সৃষ্টির মুখে প্রশ্নচিহ্ন তুলে ধরে ।ইতি মধ্যে মান্না দে চলে গেলেন। কলকাতা বঞ্চিত হল তাঁর শেষ যাত্রার সাক্ষী হতে ।বাঙালিও । চলল টানাটানি ।জিতল কেউ কেউ ।হারল সেই হতভাগা বাঙালি । নরদ চন্দ্র চৌধুরীর ভাষায় 'আত্মঘাতী বাঙালি' !সেই প্রেম-অপ্রেম গোহারা হেরে গেল ।যেমনটা হারতে অভ্যস্ত আর কি,সেই বঙ্গভঙ্গের পিছনের পাতায় পড়ে থাকা পলাশীর উপাখ্যান থেকেই !আজ বাঙালি বনাম বাঙালি ।জমে  ওঠে খেলা । মৃত্যু-মৃত্যু খেলা । এর মাঝেই মাছের পেটি টিপতে টিপতে অকস্মাৎ মাছ বাজারে  দেখা হওয়া সহকর্মীর দিকে সে কি দন্তবিকশিত হাসি !যেন তেনজিং নোগরে এভারেষ্টে পোজ দিচ্ছে!                                                                                                                                                                         অমিত কুমার বিশ্বাস
                                                                     [ প্রধান সম্পাদক/অচেনা যাত্রী]
.....................................................................................

                                       সম্পাদকীয়ঃ- 
    জীবনের মূল অনুষঙ্গ প্রেম । প্রেমের কারণেই সিংহাসন ত্যাগ করা , উঁচু ভবন থেকে লাফ দেওয়া , তাজমহল নির্মাণ করা কিংবা সব অভিমান বুকে নিয়ে গাছের ডালে ঝুলে পড়া ! হায়রে প্রেম , তোর ভবনেই বসতভিটা ! এতসব গুরুত্ব বিবেচনায় 'অচেনা যাত্রী'-র এবারের মূল উপপাদ্য 'প্রেম-অপ্রেম' । বিভেদের দেওয়াল ভাঙার প্রত্যয়ে আমাদের যে পথচলা , চলতি সংখ্যার মাধ্যমে ঐ পথচলা আরো বেগবান হবে । প্রেমের বিচিত্র বর্ণনা পাঠকদের ভিন্ন স্বাদের অনুভূতি যোগাবে । জয়তু 'অচেনা যাত্রী'!
                                                        পিন্টু রহমান           
                                       [ অতিথি সম্পাদক/অচেনা যাত্রী]
............................................................................................................................................................... 

    বিশেষ রচনাঃ     প্রেম অপ্রেমের নিস্ফলা গদ্য / অমিতাভ দাশ
                                                                         ১
            মানুষ মানুষকে সত্যিই কিছুই দিতে পারে না, শুধু একটু ভালবাসা... যা, কাঙ্ক্ষিত উত্তাপ থেকে একসময় হয়ে ওঠে নক্ষত্রের চলাফেরা, নক্ষত্রের ডুব, ধীরে ধীরে ফুটে ওঠা দূরে-থাকা নক্ষত্রের আলো! এই মানুষদের উপস্থিতিই তখন এক একটি অনন্য আলোদ্বীপ! আলো আছে প্রতীক্ষায়, বিরহ-দহনে, দুঃখ ও সুখেও আছে আলো, গভীর হতাশা ও অন্ধকারেরও রয়েছে এক আলো! তবে সব চাইতে তীব্র আলো প্রেমে! মানব প্রেম বিবর্তিত হতে হতে যখন রূপান্তর ঘটে আরো আরো বৃহত্তর কিছুর প্রেমে, তখন প্রেম হয়ে ওঠে আরো আরো আলোময়! সন্ধ্যা আসছে...বিকেলর আলো পড়ে এলো... এবার দূরের নক্ষত্রের পালা... আলো আনো... আলো এনো... মনের গহীনে আরও আলো নিয়ে এসো মনের গহীন প্রদেশে!
                                                       ২
              তুমি অলৌকিক হও রোজ কি অলৌকিক হও যে রাত ! এই প্রথম লাইনটি লেখামাত্রই পাঁচ পাঁচটা রবীন্দ্রসংগীতের লাইন মনে পড়ে গেল! নাহ্ হবে না গদ্য লেখা আমার দ্বারা! কেন কিছু ভাবতে গেলেই রবিঠাকুর উঁকি মারবেন? আসলেই ভাবছিলাম, মানে ভেবে ভেবেই মনে করার চেষ্টা করছিলাম স্বপ্ন কি সাদা-কালো, না কালার মুভি! এই যে আচ্ছন্ন নিশিভ্রমণ - আনগাইডেড টুর, জোর করে হিজিবিজি কীসব দেখান এর নির্দেশক কে, টেকনলজি টা কি অছি? বিচ্ছিরি না? এরকম প্রায় রোজ রোজ ছয় সাত ঘন্টার নাটক দেখা কখনও হরর ফিল্ম? এক্কেবারে ওরে হাত পা খুলে গেল রে ... মাথাটাও আমার নেই...খুব ক্লান্ত না হলে ... মোটেই এক ঘুমে রাত কাবার হয় না! বেশ...আচ্ছা একটু ভাল ভাল জিনিস ভাবা যাক...বেশ সুন্দর রোমান্টিক কিছু...সুন্দরী... বেশ বেশ... মিষ্টি মিষ্টি প্রেম...আহা, আহা....কিন্তু হয় না! মাঝপথে ঘুম এলে সেই ইঞ্জিন বগী সব অন্য লাইনে নিয়ে গিয়ে পুরো মাওবাদী হামলা স্বপ্নজিৎ রায় এর! ভায়োলেন্স ভয় আরো কতো কিছু -- উফফ্ । প্রিয়া এসো তোমায় জড়াই ... জড়িয়ে ঘুমাই... বেশ বেশ ... তারপরেও হয় তিনি আতঙ্কবাদীদের দ্বারা আক্রান্ত, নয় আমি এবং ঘুম ভেঙে যাওয়া... একমাত্র ওই সেই আবার ... খুব আদর টাদর করে ঝুমম-ক্লান্ত না হলে ... আক্রমণটি আসতে পারেই। তাই একমাত্র উপায় স্বপ্নের ডিটেইলস্ মনে করে রাখা... ফুল ডিটেইলস্ মনে করার চেষ্ট করছি তাই -- সিচুয়েশনস, সিনারী, অ্যাকশন, ভিলেন, ট্যাঁ রা রা রা ভয়ের মিউজিক...ভয় -- সব কিছু -- ইয়েভ-রি-থিংস......যাতে আজকে আবার যদি দেখি... তাহলে বন্ধ করে দেওয়া যেতে পারে হয়তো দুঃস্বপ্ন -- মাঝপথেই -- সীটছেড়ে উঠে আসা--মাঝপথেই 'এ মুভিটা আমার দেখা আগেই -- এবং এটি মোটেই ভাল না!' এটি ঘোষণা করে সশব্দে!
                                                 
               দুটি বিপরীত চিন্তা পরস্পরের সাথে যুদ্ধ করে যায় ... মানে টেনাসিটিতে কে জিততে পারে ... ঘ্যান ঘ্যান করে - ওই আর কি! একটি ভয় ধরায়... 'এই গেল গেল! সব চলে গেল! লেটস গো, ওরে ওঠ রে চল রে, কর রে' আর হতচকিত সমষ্টি, মানে আমি মাইনাস ওই ভাবনাটি, উবু হয়ে বসে ভাবতে থাকে 'হলটা কি?' এবং ওঠার নামও করে না। আরেকটি ভাবনা কিছুক্ষণ পরপরই বলে খুউব মায়ালু গলায় 'চলুন এবার বাড়ি যাওয়া যাক'... 'বাড়ি' কথাটার ওপর অনেকটাই জোর দিয়ে...যেন সেখানে সাতজনমের প্রিয়া, খাঁটি গরুর দুধ, আরামকেদারার পাশে প্রিয় উপন্যাস, ফুরফুরে বাসন্তী বাতাস, একগ্লাস ঠান্ডাজল এবং 'ওগো' বলে ডাক...এরকম সবকিছু মজুত ... এই 'বিদেশ' থেকে জাস্ট গেলেই হলো -- প্রতি পনের মিনিট পরপর ট্রেন -- বসারও সীট মেলে... এসব কথায় কান দিতে নেই সবাই জানে, তবুও পক্ষে বিপক্ষে একটু তো যোগ দিতে হয়ই বইকি নিজের মাথার মাঠের টিম সেখানেই প্র্যাকটিস সেখানেই গোল দেওয়া, আবার বল কুড়ানো, লম্বা কিক - হুইসিল - ফুরুৎ সবটাই! ভুজুং খেয়ে দৌড়াব... না গভীর বিশ্বাসে পশ্চাদপসরণ করে 'বাড়ি যাবো'... বড়ো জটিল হয়ে যায় অংক -- সেলেটে আর আঁটে না! মাঝামাঝি কিছু নেই? অথবা উল্টো? কিচ্ছু হারিয়ে যাচ্ছে না, সব আছে হারায় নি, এটাই বাড়ি তাই কোথাও পালিয়ে যাবার দরকার নেই -- হতেই তো পারে এমনটিও! অতএব তাদের দুজনকেই থামাই দলে টানি ও অদৃশ্য যমের সামনে দাঁড়িয়ে আমার সবটাকে সংহত করেই তাকে বলি 'মৃত্যু ব্যাপারটা বেশ ঘ্যাম, মানে বিস্ময়কর! কবে বেল গুলি তুলে নিয়ে বলবে গো ব্যাক টু প্যাভিলিয়ন তাও জানি না, তবে এটা জেনে রেখো ততদিন ইচ্ছেমতো চার ছয় মেরে যাবো, দৌড়বো নি, সেটাও!' একটা উত্তেজনা একটা আহ্বান একটা ব্রাভাডো কেমন স্বাতন্ত্র আনে। মনটা ফুরফুরে, যেন এরকম ভাল শাসন করেছি অবাধ্য ভাবনাদের, এখন অবকাশ হি অবকাশ -- রাজকন্যা লেবুর সরবত বরফকুচি সহ ছাদে বেলফুলের মালাটালা গুঁজে অপেক্ষারতা -- আমি গেলেই... 

                                                      
     .........প্রেম এর কাছে ঢুলুঢুলু চোখে ঝুপ করে কখন ঘুমিয়ে পড়ে বিদায় নিয়ে আবার ঘুম ভাঙলেই চোখ কচলেই আবার প্রেম...ভালো না ব্যাপারটি বেশ? সঙ্গ সব চাইতে ভালো একটি সুন্দর মনের মানুষের, কিন্তু রাজকন্যাটি যদি পাশে কোন কারণে নাই, তখন ঘুম ভাঙলেই সরোদ নিয়ে বসা যেতে পারে, বা গানের রেওয়াজ, বা তুলি রঙ্, বা কবিতার বই বা কলম ও এমন নিস্ফল গদ্য লেখা -- পৃথিবীটা তবেই গোল গোল লাগে -- মানে জীবনকে স্লাইস করলে -- নানান ডায়ামিটারের বৃত্ত! কিন্তু একটা নিবেদন থাকে -- এইযে কবে হামাগুড়ি থেকে টলমল পায়ে হাঁটা শুরু এতো দিন হল মনে পড়েনা... মাঝে রাজকন্যা এসে আগ বাড়িয়ে চুমু খেয়ে 'ভালোবাসি' বললে একটু ওড়া...মানে ঝিমঝিম ভাবটা ব্যাপক রকমের স্পর্শকাতরতা বাড়িয়ে দেয়, মাটিতে পা পড়ে না তন -- হাত বাড়ালেই ছুঁলেই ফুল ফোটে অন্যরকমের মাইডাস টাচ্ -- এই সবই নিবেদন -- কাকে? প্রেমকে যাকে নিবেদন করি...কবিতা, গান, কথা, বুক থেকে উপড়ে নেওয়া কথাগুলো, অপলক তাকানো, হাসি কষ্ট সুখ ব্যথা ... আমার স-অ-ব  -- সেই প্রেম যা নিবেদন করি... তাও প্রেম আমিও প্রেম পূজারী, পূজা, ঈশ্বর, ঈশ্বরী. সংজ্ঞা পেরিয়ে অনুভবে মিশে গলেটলে একাকার, -- প্রিমঅরডিয়াল স্যুপ -- যার থেকে জন্ম নিয়ে বের হয়ে আসে আমাদের ডি এন এ আর এরকম নিস্ফলা গদ্যও!

..............................................................................................................................................
বিশেষ রচনাঃ


                            প্রেম ও কবিতা / মবিনুল হক
 প্রেম
ভালোবাসি ভালোবাসি
 শুদ্ধ সাত, অশুদ্ধের পাঁচ
 প্রকৃতিকন্যার নাচ, হাসি
 ভালোবাসি ভালোবাসি
 ভালোবাসি ভালোবাসি
অকস্মাৎ  যদি
 রক্ত মেধা হৃদয় অবধি
 কবিকে পাথর ছুঁড়ে মারো
 হে ঈশ্বর! অতঃপরও
 ভালোবাসি ভালোবাসি 
 (আমার  প্রেম শিরোনামের এই কবিতাটি করুণাময় আল্লাহ্ দার্শনিক আফলাতুনের প্রতি নিবেদিত রচনাঃ ১৯৭২)
           
                আমার প্রথম প্রেম কবিতা বহু বছর আগে বাঙালি যুবকের স্বভাবধর্মবশে উপরোক্ত কবিতাটি লিখেছিলাম আল্লাহ্- বাণী কোরআনের সুরা শোয়ারা পড়ার পর লিখেছিলাম শোয়ারা মানে কবিগণ কোরআনের ওই সুরার ২২৪-২২৬ নং আয়াতে কবিদের সম্পর্কে বলা হয়েছে --এবং তারা কবিদের অনুসরণ করে, যারা বিভ্রান্ত (২২৪) তুমি কি দেখ না ওরা লক্ষ্যহীনভাবে সকল বিষয়ে কল্পনাবিহার করে থাকে (২২৫) এবং যা বলে তা করে না (২২৬) [সূত্রঃ কোরাআন শরীফ, অনুবাদঃ মওলানা মোবারক করীম জওহর, হরফ প্রকাশনী, কলকাতা, পৃঃ ২৩৬]

                       কোরআনের ওই আয়াতগুলি পড়ার পর মনে পড়ে গিয়েছিল দার্শনিক প্লেটোর ইউটোপিয়ার কথা আরবি ভাষায় প্লেটো হয়েছেন আফলাতুন আফলাতুন তাঁর গ্রন্থ রিপাবলিক-এর কল্পরাষ্ট্র থেকে কবিদের নির্বাসন দিয়েছেন তাঁর স্বপ্নরাজ্য ছিল কবিমুক্ত কবিদের অপরাধ তাঁরা কবিতা লেখে আর কবিতা মানেই প্রেম ভালবাসা ভাবালুতা কল্পনাবিলাস হৃদয়াবেগের ভারসাম্যহীন উন্মত্ততা কবিরাই তো সাধারণ সরল-সোজা মানুষের মনে চারিয়ে দেয় প্রেমের অসুখ জাগিয়ে তোলে হৃদয়ের নতুন নতুন অভাববোধকে আম-আদমিও তখন হাঁফিয়ে উঠে বলে-- হেথা নয় হেথা নয়, অন্য কোথা অন্য কোনোখানে কবিদের উসকে দেওয়া এই অসুখের নাম প্রেম কবিরাই পৃথিবীতে ছড়িয়ে দিয়েছে প্রেমের ভাইরাস (এখানে চুপিচুপি বলে রাখা ভাল যে প্রেমের প্রতি প্লেটোর বিশেষ প্রেমের নিদর্শন হল তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ সিমপোসিয়াম আদর্শ প্রেম আর আদর্শ সৌন্দর্য বিষয়ে লেখা ) অপরাধ তো কম নয় অতএব নির্বাসন
                      আল্লাহ্ এবং আফলাতুন-- দুপক্ষ থেকেই কবিদের প্রতি এই অপ্রেম আমাকে বিস্মিত করেছে ভাবিয়েছে সেই যুবাবয়সেই অথচ যুগেযুগে কবিরাই তো আল্লাহ্ প্রেমে মস্ত্’‌ হয়ে ফিলা-ফানার তুরীয় মার্গে পৌঁছে গিয়েছেন এখানে আমরা স্মরণ করতে পারি সুফিকবি জালালউদ্দিন রুমি, হাফিজ, সাদি, ওমর খৈয়াম, আমির খুসরো প্রমুখদের কাব্যকৃতী এইসব কবিরাই তো রচনা করেছেন হাজার হাজার নাত, হাম্দ্, গজল, ক্বাসিদা--আল্লাহ্ প্রশংসাগীতি আর এঁদেরই ধারানুসরণে আজকের কবিরাও লিখে চলেছেন অজস্র প্রেমের কবিতা--তা সে জড়, জীব, প্রকৃতি বা ঈশ্বর--যে প্রেম হোক না কেন ! কবিরাই মানবপ্রেমের দর্শনে উদ্বুদ্ধ করেছে অমানুষদের মানবীয় প্রেমের দহনে, নর-নারীর প্রেমে দিওয়ানা হয়ে সৃষ্টি করেছে অমর কাব্যগাথা সারা পৃথিবীব্যাপী নানান ভাষায় সেইসব প্রেমকাব্য পঠিত হচ্ছে
                  গদ্যে, কবিতায় কতভাবে কতভাষায় যে প্রেমের বিচিত্র প্রকাশ অহরহ ঘটে চলেছে তার ইয়াত্তা নেই এক বাঙালি লেখক এক বিশেষ সম্প্রদায়ের প্রতি তাঁর অশেষ প্রেমের নিদর্শনস্বরূপ যে উপন্যাস লিখেছেন, তার নাম--প্রেম নেই ! এবং একইভাবে প্রত্যয়ের সঙ্গে বলতে হয় যে, কবিতা, প্রেম, ধর্ম-দর্শন বিষয়ে এই অর্বাচীনকে যে সামান্য কয়েকটি পংক্তি লিখতে হল--সেটাও ওই বিষয়ের প্রতি অধমের সমর্পিত প্রেমেরই নিদর্শন আত্মকথনের অপরাধ মার্জনীয়
--------------------------------------------------------------------------------------
 'অচেনা যাত্রী'  পড়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।বাকি অংশ পড়ার জন্য অনুগ্রহ করে পরের  পাতায়  যান ।আপনার মূল্যবান মতামত জানান।আমাদের পরামর্শ দিন । ভালো থাকুন । ভালো রাখুন ।   

মন্তব্যসমূহ

Unknown বলেছেন…
আমিত দার সম্পাদকিও পড়লাম এককথাই অসাধারন। শান্তানু দার কেন লিখি ও অসাধারন।