অচেনা যাত্রী/পাক্ষিক/প্রথম সংখ্যা/১লা অক্টোবর ২০১৩

-------------------------------------------------------                                            
                                                   সম্পাদকীয়ঃ-

                                   ভীষণ বৃষ্টি । চরাচরে ।মনেও ।প্রেম বা প্রেমপত্র ছেঁড়ার।একাকী সিক্ত মনে অকস্মাৎ জানলায় উঁকি। নাঃ,আবারও ভুল হল । অগত্যা নিজের সঙ্গে নিজেকাটাকুটি খেলা ।হার-জিতের অদ্ভুত উল্লাসে ডুবে যাওয়া কিছুক্ষণ ।ডুবে যাওয়া শব্দের নরম ছায়ায়,ভাবনার বনবীথিকায়,আখ্যানের গহীন অরণ্যে।সেথা তোমায় কি পাবো না স্বল্প ক্ষণের জন্য , অন্তত এই শব্দের নকশিকাঁথায় !

                                                                অমিত কুমার বিশ্বাস
                                                                    [ প্রধান সম্পাদক/অচেনা যাত্রী]

     
          

                                           সম্পাদকীয়ঃ-

         সাহিত্যের আয়নায় পৃথিবী দেখার প্রত্যাশায় সবে মাত্র চোখ মেলে তাকিয়েছে বাংলা সাহিত্যের পাক্ষিক ব্লগজিন 'অচেনা যাত্রী ' । অচেনা । আহা, অচেনাই বটে ! বস্তত এর মাধ্যমে সাহিত্যে চেনা অনুষঙ্গগুলো অচেনা পাঠকের আঙিনায় পৌঁছে দিতে চাই; নান্দনিকতায় ফলবতী হতে চাই- চাই মানবিক মল্যবোধের অচিন বৃক্ষে জলসিঞ্ন করতে । ব্লগজিনের ব্যাপারে কারো কারো দ্বিমত থাকলেও এর গুরুত্ব কিন্তু অনস্বীকার্য । কেননা,  বাংলা-বিহার-উড়িষ্যায় বেড়ে ওঠা বাঙালি জনগোষ্ঠ আজ আর একত্রীভূত নেই , জীবন ও সময়ের প্রয়োজনে ছড়িয়ে পড়েছে পৃথিবীর নানা প্রান্তে । ফলে এতসব শিকড়চ্যুত লেখক-পাঠকের সেতুবন্ধ স্থাপনে 'অচেনা যাত্রী'-র অভিযাত্রী না হয়ে উপায় কী......
                                            -- পিন্টু রহমান 
                                            [ এই সংখ্যার অতিথি সম্পাদক/অচেনা যাত্রী]


-------------------------------------------------------------------------------------------

সূচীপত্রঃ-

ক. 
 সম্পাদকীয়ঃঅমিত কুমার বিশ্বাস
 সম্পাদকীয়ঃপিন্টু রহমান[ অতিথি ]



 খ. কবিতা

রোদ জোছনার মৌতাতে
অমিতাভ দা
২।গানঃসুবীর সরকার
৩।
খামারঃসুবীর সরকার             
৪।স্টোরিলাইন সুবীর সরকার                                        
৫।
ছুরিবন্দুকসুবীর সরকার
এপিসোড সুবীর সরকার 
৭। দাম্পত্য:মাসুদার রহমান                                          
৮।ম্যাকবেথের বিবিঃঅমিত কুমার বিশ্বাস

 .আধুনিক:শাহিন লতিফ
১০.কাঙ্ক্ষা:শাহিন লতিফ
১১.নূপুর:শাহিন লতিফ
১২.সোনালি অশ্রু:শাহিন লতিফ
১৩.মুর্শিদার চিঠি:শাহিন লতিফ
১৪.চাদর:শাহিন লতিফ
১৫.বয়স:শাহিন লতিফ
১৬.ব্রহ্মপুত্রের জন্যে শোক:শাহিন লতিফ
১৭.আমি বিদ্রোহী:আরিফুল ইসলাম


গ. ছোটগল্প

 ১।পোড়ামাটির ধূপকাঠিঃ
পিন্টু রহমান  
২।নতুন জীবনঃঅরবিন্দ দত্ত

ঘ. কবি ও লেখক পরিচিতিঃ-   
                                    অমিতাভ দা
                              সুবীর সরকার
                                    পিন্টু রহমান 
                                   শাহিন লতিফ
                                  আরিফুল ইসলাম
                                   অরবিন্দ দত্ত
                                  অমিত কুমার বিশ্বাস
---------------------------------------------------------------


রোদ জোছনার মৌতাতে 
 অমিতাভ দাশ
পৃথিবীতে যখন কেউ আর 
গোপন প্রেমপত্র লিখবে না 
তখন আমি 
তোমার হয়ে যাব

মাঠের সবুজে দেবো মুখ 
একঝাঁক ফুল বা কবিতা এনে 
দেবো মাখিয়ে
গোপন পরাগ 

হৈহল্লার মতো
ঝাঁক ঝাঁক রোদ উঠবে 
আর 
ঝটফট করে উড়বে... 
লাখ খানেক আদুরে চড়ুই!

বৃষ্টি ছাড়াই এরকম বন্যা আর 
সমস্ত ভূগোল তলিয়ে ইতিহাস! 
বলবে তুমি "হুম্!"

সারাদিন ধরে 
একে অপরের রোদ পোহানোর পর
সারারাতও জোছনায় ডুব....

শিশির-ঝরা টুপটাপ ভোরে 
ঘুমের কাছে জমা রাখবো 
আমাদের রোদ, জোছনা, 
ও জমজমাট ওম!
      
                                     

                                       গান
                                              সুবীর সরকার

                                        একটু বর্ষার গান উদযাপন
                                                                    করি
                                               পুঁটি খলসের ঝাঁক
                                                পাদটিকায় দানাশস্য




                                                    খামার
                                              সুবীর সরকার

                                          সংলাপ চাপা পড়ে
                                                            যায়
                                         অজান্তে ডোরবেল
                                        ফ্রেমের বাইরে মস্ত 
                                                         খামার

                                              

    
                         
                                            স্টোরিলাইন
                                                  সুবীর সরকার

                               হাওয়ায় হাসি ভেসে আসে
                                            সেতু পার হতেই
                                                     জলস্রোত
                                        গাছের ছায়ায় সোঁদা
                                                     গন্ধ,চশমা
                                                              
                                                 স্টোরিলাইন


                                             ছুরিবন্দুক
                                              সুবীর সরকার
                                   কঙ্কালের কাঁধ আঁকড়ে
                                                    ছুরিবন্দুক
                                      থেমে যাওয়া সানাই
                                ঘুমের মধ্যে ভুল বকছো
                                               দুপলক দূরে
                                                      জলদস্যু



                                         এপিসোড
                                           সুবীর সরকার

                                      চাপা স্বরে কাঁদো
                                       প্রিয় থেকে টুপি
                                                    সরাও
                                      ঠোঁটে আসা গান
                             বোধহয় শেষ এপিসোড
                                        পাতা ওলটানো
                                                     হচ্ছে


                                              

মাসুদার রহমান

দাম্পত্য

কাচুলি খোলার সময় আমিই তোমাকে প্রায় হেল্প করি
 তখন একটা ঘোড়া লাফিয়ে মাড়িয়ে চলে সবজি ক্ষেতের বেড়া
 প্রান্তরের কচিঘাস ধানজমি...
 এখন তুমি কাচুলি বাঁধছ
 নি:সঙ্গ পোড়োবাড়ির দেয়ালে দেয়ালে তুলে দিচ্ছ
 শ্রাবণ দিনের গ্লানি; প্রহৃত শীতের গাঁথা
 খুলে পড়া  যতো খড়খড়ি


 ম্যাকবেথের বিবি
অমিত কুমার বিশ্বাস

১।
ফানুসের মতোই ফুসছে সুষুম্নাকান্ডের নিম্নদেশ

চাউনিতে নেট সার্ফিং
পুজোর বাজারে এসেও খুঁজছি নেপলা
আসলে তোমার জন্যই তো বেঁচে থাকা
ডিগবাজি রকবাজি  ইত্যাদি ইত্যাদি
সেটটপ বক্সেও আজকাল বড্ড বিরক্ত
এরকম  ছেলেমানুষি করলে কি চলে
তোমার জন্যই দখ আজন্ম হামাগুড়ি দেওয়া

মৃত্যুর ম্যারাথনে নিশ্চত সোনার সন্ধানে
কবর খুঁড়ে নিয়ে এসেছি বাদশাহী আংটি,এই দেখ
তবু নিজের সমাধিতে  নগ্ন আত্মার সাথে
ক্রমশ খেলছি সাপলুডো
                 আজ আর বাধা দিও না ।
 


শাহিন লতিফ এর কবিতা
 আধুনিক

যাইতে ছিলাম। তখন যাওয়ার অবশ্য কোনো কারণ ছিল না। মেঘের যে চেহারা তা আমরা ভাবিয়া দেখিলাম । কিন্তু সগোত্রীয় সকলেই বলিল যে, এখন আর থামিয়া লাভ নাই। যে কারণে থামা দরকার তাহা বহুকাল পূর্বে বোঝার ফলে গ্রিস দেশে প্রমিথিউসের পতন ঘটিয়াছিল। এই অভিজ্ঞতার কথা জানার পরে আরো জটিল আকারে সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য করিতে করিতে আমরা মরিতেছিলাম। আমাদের পথে ও প্রান্তরে সকল শিশু ও সবুজকে হত্যা করিয়া আগুন ধরাইয়া দিতেছিলাম। ফলে জগৎ রঞ্জিত হইয়া উঠিয়াছিল। সে দৃশ্য দেখিয়া সগোত্রীয় সকলে উল্লাস করিয়া ছিলাম এবং নারীদের বলিয়াছিলাম ইহাকেই সত্য বলিয়া মানো। আমাদের নারীরা সেদিন থেকে বক্ষবন্ধনী পরিধান করিয়াছিল। এবং ঠোঁটে রঙ দিয়া কল্লোলিত হাসিয়া ঢলিয়া ঢলিয়া পড়িয়াছিল। তখন থেকেই নারী ও পুরুষ বিপ্লব ভুলিয়া গিয়াছিল। আর জগৎ বড়ই আধুনিক হইলো।




কাঙ্ক্ষা

মরিচের ডালে চাঁদ মিশে থাকে

এ মিশে থাকার কোনো দৃঢ় দর্শন নেই
তবু আমি মরিচের ডাল ধরে যুগান্তরে যাবো

দেবতা হবার মতো প্রাচীন বাসনা তোমার জানা

কলেজে দেখা তোমার সাদা পোশাক
শতাব্দী পরেও আমাকে টলিয়ে দেয়
এরও কোনো মানে নেই

দর্শন আর অর্থ ছাড়াই পথের পর পথ

হেঁটে এলাম
জানি তো অর্ঘ্য
আমাকে কখনো দেবে না





নূপুর

নূপুরকে নাড়াতে গিয়ে নড়ে গেছে আমার পাঁজর
 শীত এলেই এখন যখন তখন গর্তে যেতে হয়
নূপুরকে নাড়াতে গিয়ে হয়েছি ধূসর
 বৃষ্টি এলেই এখন গৃহান্তরে চলে যেতে হয়

যুগান্তর জুড়ে এ আহত ছায়া
তুমুল বিউগল বাজায় বনেট ও বন্ধনে

হে দ্বীপ ও দর্শন
হে প্রাণ ও স্পন্দন
 আমাকে ফেরাও
 স্বর্গ ও মর্ত্য জুড়ে
 আমি আবার নূপুরকে নাড়াতে যাবো


সোনালি অশ্রু

সোনালি অশ্রু পান করে হয়েছি চাতক
 আকাশ ছাড়া আমি আর কিছুই দেখি না

উর্বর পৃথিবী ও প্লাবন কিছুই
 পিপাসিত এ আঁধার কাটাতে পারে না

তোমার স্তনের রেখায় যে রক্তস্রোত
 আঁচড়ে আঁচড়ে আরো করেছি গভীর
জংঘার ভাঁজে আজ ফেরারি অতীত
আমি তো মানুষ নই
 আমার ভেতর ক্রমাগত ডাকে এক পাপিষ্ট ডাহুক

সোনালি অশ্রু পান করে হয়েছি চাতক
বৃষ্টির ধারা ছাড়া পাপ মোচনের
আমার সামনে আর কোনো পথ খোলা নেই



মুর্শিদার চিঠি

এক ঝাঁক মুক্ত বলাকা
 উড়ে যায় অসীমের পানে
 নিয়ে যায় মুর্শিদার চিঠি
 রোদ-মেলা বিকেলের নিকানো উঠোনে।

নিকেলের মতো বেলা চমকায়
পড়ে আসে গোধূলি অলকায়
 পালকের মতো বনবালিকার
 পালঙ্ক পালক পালকি আঙিনায়

প্রণয়ের বেদনায় বিরহীর
বাঁধা সুরে গমকে ও সাধা মিড়
লতিয়ে উঠেছে কার অমন লতিকায়
গয়নার নাও বাঁধা দূরের কোনো গাঁয়।
 


চাদর

হতবাক। চারপাশে সশরীর নীরবতা বাকহীন
সবিনয় ন্যুব্জ রোদে
স্যাঁতসেঁতে চাদর মেলেছি উষ্ণতার দায়ে
ভেতরে অস্তিত্ববাদী... আয়নায় যাকে দেখি, আশাহত হই
ততধিক স্তব্ধতার রেশ বাদ্যযন্ত্র ঘিরে

মেটামরফসিস... তেলাপোকা ডিম পাড়ে
প্রেমে। প্রেম নর্দমায় সান্দ্র স্রোতে ভাসে
ভাসে কুণ্ঠিত ফুসফুস ছাড়া শব্দহীন বিবর্ণ বুদ্বুদ

কে যায় কে আসে?
অনুক্ত জিজ্ঞাসা ভাঁজে ভাঁজে লেপ্টে থাকে দ্বিধাগ্রস্ত জীর্ণ বুননে
 কী যায় কী আসে?




বয়স
ঝালমুড়ি, চিনিপিঠা, টোস্ট আর চা
সন্ধ্যার এ আপ্যায়নে পরিতৃপ্ত মন

বাইরে ঈষৎ বৃষ্টি, আষাঢ়ের দিনে যেন
 প্রিয়সঙ্গ মুখরিত হরেক আলাপে

সোফাতে মুখোমুখি- পাশে মেঘ বসে
উল্লাসে ভিজে যাওয়া দারুণ পঁচিশ
খুনসুটি নীলরঙে অগোছালো আলোয়ানে
কাচভাঙা সংগীতে দাঁতের ঝিলিক

তোমরা কি জাদু জানো? আহা! আলিঙ্গন
 কী ব্যর্থ অনুভবে শিহরণ জাগাতে
আমি বৃষ্টি ছুঁয়ে দেখি
 ধারা জলে স্নানলীলা অসহ্য আমার।

ভালোবেসে জলপরী আমাকে নাও

ও মেঘ ও পরী জলপরী গো কোথা যাও যাও কই
নিয়ে যাও এইসব ধুলো-নোংরা ব্যাধি-ক্লেদ বীজাণুর হাঁড়ি
নিয়ে যাও ফেলে দাও গৌরীশংকরের পায়ে
সবকিছু শুদ্ধ হোক ঋদ্ধ হোক প্রেমে-পুজো হোক ভেনাসের

মেঘ আর শোনে না আকুতি
 মেঘ ভেসে যায় কৈশোরের প্রেমিকারা
 যেভাবে আজ টয়োটায় চড়ে ধর্মপতি পাশে।


ব্রহ্মপুত্রের জন্যে শোক
সিদ্ধি টেনে চলে গেলে
প্লা ব নে র মে ঘ
নরম বুকের খাঁচা আলগা হয়ে যায়
কিছু ঋণ কিছু অর্থহীন তাপ
বয়ে বয়ে ক্ষয়ে যায়
 পু রা ত ন ব্র হ্ম পু ত্র
তার পাড়ে তার তীরে নিশিন্দা মাথায়
 এক ফালি কাপড়ের পাড়
সাজায়ে রাখে রাত্তিরের নারী



আরিফুল ইসলাম-এর কবিতা

আমি বিদ্রোহী

রক্তেভেজা মাটির লৌহ উত্তাপে
বার বার গর্জে উঠছে শাহবাগ প্রজন্ম চত্বর
রেসকোর্স ময়দানকে টপকিয়ে
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আলোড়নকে  ছিটকে
একই আওয়াজে ফাঁসি ফাঁসি ফাঁসি চাই
মুখে তার ফুটে উঠেছে ভাষার যৌবন
উসকে আগুনের ফুলকি চোখ থেকে সর্বাঙ্গে।
যুদ্ধে যাবো মা, আরেক বার যুদ্ধে যাবো
৭১’ এর যুদ্ধে যারা রাজাকার,আলবদর
তাদের ধং করার যুদ্ধে
আমি আজ বিদ্রোহী
রক্তে আমার বিস্ফোর হচ্ছে
জ্বালা মেটানোর ইচ্ছগুলো
আমি উন্মত্ত মাগো,বড্ড
ন্মত্ত
কোন বাধা আজ আমি মানিনা
ওই তো প্রজন্ম চত্বর! আমাকে ডাকছে
আমি যাবো মা
বোনের অসম্মান ভাইয়ের রক্তের ছাপ ভুলতে পারিনি মা
আমি ভুলিনি
ওদের ফাঁসি দিয়েই ঘরে ফিরবো
ওদের ফাঁসি দিয়েই ঘরে ফিরবো মা....




----------------------------------------------------------------------------------------------------------------


                                                 ছোটগল্প

                                     পোড়ামাটির ধূপকাঠি 
                                                              পিন্টু রহমান 
                    তাঁর ঘামপিছলে শরীরে শ্বেতবিন্দুর মতো ফোঁটা-ফোঁটা জলের ধারা। পা দুটোও ক্লান্ত; বয়সের ভারে কেবল থেমে যেতে চায়। তবু নাতিনকে ধরার জন্য মইজদ্দিন মণ্ডল ব্যতিব্যস্ত। সাধ্যের সীমারেখা অতিক্রম করে বেচারা দৌঁড়ায় আর দৌঁড়ায়। দৌঁড়নোর ফাঁকে মুখ থেকে এক-একবার খসে পড়ে বিচিত্র সব শাসানি, ওই রতন ওই, দাঁড়া কচ্চি, তা না হলি কপালে বোল জবর বেমত্তি আচ। তোর চৌদ্দগুষ্টিও আমার হাত তি বাঁচাতি পারবেনানে, জিব টানি বের করি ফেলবুনে। শালা ইতর কনেকার!
                    রৌদ্রের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে বাম হাতে লুঙ্গি সামলিয়ে থেমে থেমে দৌঁড়ায় সে। কিন্তু রতনের গতির সাথে কিছুতেই পেরে ওঠে না। অস্ফুষ্ঠ স্বরে আর্তনাদ করে, দ্যাক, আমি আর পাচ্চিনি বোল,জানে সয্যু হচ্চেনা। ইবার এট্টু থাম।
                 বস্তুত মণ্ডলের খিটমিটে মেজাজ, বিগড়ে গেলে আর রক্ষে নেই,লাঠি হাতে আদরের নাতিনকে তাড়া করে। অবশ্য রতনও কম যায় না, পারলে কথার তীরে দাদুর মেজাজ সপ্তমীতে চড়িয়ে দেয়, ক্যানে দাদা, থামতি বুলছু ক্যানে, আমাক ধরবা না, কেরাম পারো ধরো দেকি, দেকি তুমার কোমরে কেরাম জোর আচে! চলার গতি খানিকটা কমিয়ে রতন পুনরায় বলে, বুজলি দাদা, আমাক ধরা অতো সহল না, তুমার বাপ আলি’উ ধত্তি পারবে না।
                   নলখাঁগড়ার বন পিছনে ফেলে অবশেষে ওরা মাঠের পথ ধরে, ফসলহীন বিস্তীর্ণ মাঠ, সবুজের চিহ্ন পর্যন্ত নেই। বাউলের ক্ষ্যাপা চুলের মতোই রৌদ্রের উথাল-পাথাল ঢেউ। উত্তপ্ত ধুলিকণা; খাঁ-খাঁ প্রান্তরে রৌদ্র-কুয়াশা। রতনকে জাপটে ধরে মইজদ্দি মণ্ডল হাঁপানি রোগীর মতো হাঁফায়। শরীর বেয়ে চুঁইয়েপড়া ঘামের জলে তার ক্ষোভও খানিকটা স্তিমিত হয়। লাঠির অগ্রভাগে থুতনি রেখে রতন জানতে চায়, আইচ্চা দাদা, তুমি বোলে আমাক খুব পিয়ার করো, আমার জন্যি নাকি পরাণ কান্দে! রতনের কথা শেষ হওয়ার আগেই মইজদ্দিনের পুরাতন ক্ষোভ নতুন করে আবার মাথাচাঁড়া দিয়ে উঠতে চায়, তথাপি ঠাণ্ডা মাথায় সজাগ দৃষ্টিতে নাতিনকে জিজ্ঞেস করে, কে, তাতে কি হয়িচে, তুই আবার এসব উৎফান্দি কতা শুদ কচ্চি ক্যান? কাপাল হতে চুঁয়ে পড়া ঘাম বামহত দিয়ে মুছতে মুছতে রতন তাঁর দাদাকে নতুন আরেকটি পরামর্শ দেয়, কি আর হবে, বুলচি  উত্তরের মাটের ওই জমিডা তুমি আমার নামে লেকি দেও। তালি সপ ন্যাটা মরি যাবেনে। জমির লাগি কেউ আর তুমার উঁতুজ্বালা করবে নানে। দেকবা পানির নাকাল সপ ঠাণ্ডা হয়ি গিচে।
             যত ঝামেলা ঐ একখণ্ড জমি নিয়ে দখল নিতে যে যার মতো মরিয়া। একটার পর একটা কাহিনী তার শান্তির সংসারে অশান্তির পদধ্বনী। জমি নয়, সবাই যেন মইজদ্দিনকেই গ্রাস করতে চায়! আত্মীয়-স্বজনের সাথে যোগ হয়েছে প্রতিবেশীরাও। সুযোগ পেলেই হাসিঠাট্টা করে জমি বিষয়ক কথা বলে অকারণে মাথার চান্দি গরম করে দেয়। কিন্তু এসব তামাশা তাঁর অসহ্য লাগে। অল্পতেই মুখ ফসকে বেফাঁস কথা বেরিয়ে পড়ে। পেপুল্টি পাতার রসে আগে যাও বা কাজ হতো এখন আর হয়না। দিনের আলোয় তার চোখে রাতের আঁধার নামতে শুরু করে। কতদিন, কতরকম করে ছেলেদের বুঝিয়েছে ,কিন্তু বাবার কথায় কারো আস্থা নেই। স্ব-স্ব অভাব-অভিযোগের পক্ষে অকাট্ট যুক্তি নিয়ে উপস্থিত হয়। 
                 জমির দখলস্বত্ব প্রমাণের জন্য বড় ছেলে ইতিমধ্যে বাঁশের মাথায় লাল পতাকা উড়িয়ে দিয়েছে। মেজ লাগিয়েছে ইপিল,ইপিলের চারা বৃক্ষরোপনের গুরুত্ব বোঝাতে বাবার দরবারে নানামুখী আলোচনা। স্কুলপড়য়া নাতির মুখে ভূমিকম্প, কার্বন-ডাই-অক্সাইড, সমুদ্রের পানিতে জমিন তলিয়ে যাওয়া কথাগুলো মইজদ্দিন ঠিকঠাক বুঝতে পারে না। মনে হয়, জমি হাতাতে এসব নিত্য-নতুন ফন্দি-ফিকির! বৈষয়িক জ্ঞানের অপবাদ থাকলেও হাতগুটিয়ে বসে নেই ছোট শফিকুল। কারণে-অকারণে বেচারা জমির ওপর পায়চারি করে, পাঠকাঠির সাহায্যে জমি মাপজোক করে। তার বুকের মধ্যে উত্তেজনা, উত্তরের জমিনটা যদি সত্যি সত্যি হাতছাড়া হয়ে যায়! 
                                                      দুই
            মণ্ডলের চিন্তা চেতনায় ইদানিং সম্ভাবনার নতুন নতুন ইঙ্গিত পাখা ঝাঁপটায়। চালচলনেও আমূল পরিবর্তন। আগের সেই একরোখা ভাব আর নেই, বরং পলিমাটির মতো মসৃণ জীবনাচার। মনে হয় ঈদের নতুন পোশাক পরিহিত শিশুর মত উৎফুল্ল যেন-বা! কদাচিৎ খেতে ভুল হলেও মসজিদে যেতে ভুল হয় না। গভীর রাত অবধি খোদার দরবারে দুহাত তুলে আরবী-বাংলা মিশ্রিত দীর্ঘ মোনাজাত করে, চোখের কোন বেয়ে নেমে আসে সুরমামিশ্রিত নোনাজল। আগে কাঁদতে পারতো না, অথচ এখন অল্পতেই চোখের পাতা ভারী হয়ে ওঠে। ঝাপসা দৃষ্টিতে ছোটখাট ভুলগুলো বড় হয়ে ধরা দেয়। পরিবর্তনের এই স্রোত ছেলেদের মধ্যেও। বাবার পিছু পিছু ওরাও মসজিদমুখী। হঠাৎ হঠাৎ পা ছুঁয়ে ছালাম করে, দোয়া চায়। বৌ-ঝিদের মুখ তো আজকাল চোখেই পড়ে না। পর্দার আড়াল থেকে ভেসে আসে মোলায়েম সব সুর, চুড়ির টুং টাং আওয়াজ।
                    ছোট ছেলেটা আজম্মের রোগা তার শীর্ণকায় দেহাভ্যন্তরে জীবাণুদের অবাধ বিচরণ। গলায় ঝোলানো তাবিজগুলো যেন বাড়তি বোঝা! মাঝে মধ্যে আকাশের পানে দীর্ঘক্ষণ তাকিয়ে থাকে,বিড়বিড় করে কি সব আওড়ায়। এ নিয়ে মইজদ্দিন মণ্ডল খুবই চিন্তিত। ছেলেটি কি শেষ পর্যন্ত পাগল হয়ে যাবে! লক্ষণ ভালো না সেদিন গঞ্জ থেকে ফেরার পথে বাঁশঝাড়ের মধ্যে দেখা- উপরে দুহাত তুলে শফিকুল দণ্ডায়মান ছিল। কোন সাড়াশব্দ নেই, বদ্ধ জলাশয়ের মতো ধীর-স্থির, শান্ত। বেচারা কি ঘুমিয়ে পড়েছে! অবশ্য ছোটবেলা থেকেই তার চোখ-খুলে ঘুমানোর অভ্যাস। মণ্ডল মোলায়েম সুরে ছেলেকে উদ্দেশ্য করে জিজ্ঞেস করে, বিটা, ও বিটা, তুমি কি ঘুমি গিয়ুছু, দেকোদিনি কি অসেলি কাণ্ড, তা বাড়ি থাকতি তুমি এই জঞ্জালে ঘুমাবা ক্যানে! আড়মোড়া শফিকুল ভেঙে দ্রুত সজাগ হয়ে ওঠে। বাবাকে দেখে খানিকটা ঘাবড়ে যায়। মাথা চুলকাতে চুলকাতে উত্তর দেয়, 
-না না আব্বা, আমি ঘুমাইনি তো!
 - কও কি! তালি ক কইচ্চু একেনে! 
- ক আর কোরবু, আল্লার সাতে কতা বুলতিছিলাম। তিনার সাতে কতা বুল্লি নাকি যা চাওয়া    যা তাই পাওয়া যায়।
 - ও , তাই নাকি! তা তুমি এতুখুন ক চাইলি বিটা, উত্তরের ওই জমিডা নাকি?
 শফিকুলের মুখ দিয়ে হ্যাঁ কিংবা না কোনটাই প্রকাশ পায় না। মাথা নুয়ে দাঁড়িয়ে থাকে কেবল। মইজদ্দিন মণ্ডল আরেকটু সরে এসে ছেলেকে আপাদমস্তক নিরীক্ষণ করে। আহা শরীরের কাঠামোগুলো  দিন দিন দৃশ্যমান হয়ে উঠছে! বেশভূষায় ক্লান্তির বলিরেখা। নিজের মাথায় আঙুল নির্দেশ করে চোখের ইশারায় ছেলের কাছে মণ্ডল জানতে চায়, 
-তা তুমার টুপি কুথায়, বিটা?
  শফিকুল দ্রুত নিজের মাথায় হাত দেয়, সত্যি-সত্যি টুপিটা নেই! অবাক হওয়ার ভঙ্গিতে বলে, ওম্মা, আমার টুপি গ্যাল কনে? এট্টু আগেই তো মাতায় দিছালাম! এদিক ওদিক খোঁজাখুজি করে, দু’পকেট হাতড়িয়ে টুপির কোন হদিস না পেয়ে শফিকুল বাধ্য ছেলের মতো বাবাকে জানায়, আব্বা, টুপি মনে হয় বাসাতি উড়ি গিচে। ছেলের উপর বিরক্ত হয়ে মুখ ভেংচি কেটে মণ্ডল গজ গজ করে, কও কী! টুপি উড়ি গিচে! তালি তুমিউ তো  উড়ি যাবা! যাক ভালুই হলু, তুমার মুরুদ আমার বুজা হয়ি গিচে। একুন তি ওই জমির কতা তুমি ভুলি যাউ। যে লোক মাতার টুপি সামলি রাকতি পারেনা সে জমি সামলি রাকপে কেরাম করি? শফিকুল আর স্থির দাঁড়িয়ে থাকতে পারেনা আচমকা বাপের পা জড়িয়ে ধরে কান্নাকাটি করে, এরাম কতা কয়ুনা আব্বা, ওই জমি না পালি আমি যে বাঁচপোনানে! ওই জমির লাগিই তো য্যাতো..... 
 শফিকুলের কথা শেষ হওয়ার আগেই মইজদ্দিন গর্জে ওঠে, ওই হারামির বাইচ্চা থামলি ক্যান, ক, ঠিক করি ক! জমির লাগিই য্যাতো নামায-কালাম পড়া, তাইনা? বেকুব কনেকার! আরে, তুই কি এট্টা মুনিষ্যি হলি! তোক আমার ছেলি বুলতিউ ঘিন্না হচ্চে। 
       বড় ছেলে রিয়াজদ্দিনের আগমন। হাঁটু গেড়ে বাবার পা ছুঁয়ে কদমবুসি করে পাশে বসে থাকে। মাঝে মাঝে ধীরলয়ে দরুদ আওড়ায়। মইজদ্দিন স্থির দৃষ্টিতে ছেলের এসব নতুন কর্মকাণ্ড লক্ষ্য করে। আড়ষ্ঠতা কাটাতে গলা খ্যাঁকানি দিয়ে রিয়াজদ্দিন বাবাকে জিজ্ঞেস করে, আব্বা, আমাক নাকি তুমি তালাশ করুচু? কিচু বুলবা নাকি?
         কিছুক্ষণ দম ধরে থেকে মইজদ্দি মণ্ডল ঘাড় নাড়ায়, হয় গো বিটা,আমি আর কদ্দিন, আজকাল নিশিরাতি তুমার মার ডাক শুনতি পাই। তাই ভাবচি....
   - কি এতো ভাবচু আব্বা? 
   - ভাবচি বড় ছ্যালি হিসাবে জমিডা তুমারি পাওনা হয়। ছোটকালে তুমার দাদা আমার শখ করি ওই জমিডা দিছলু। বড্ডা পিয়ারের জমিরে বাপ! পাশে যায়ি দাঁড়ালি একুনু তিঁনাগের সুরত ভাসি ওঠে। মনে হয় আমার লাগি তিঁনারা অপেক্ষা কচ্চে। বাবার অনুভূতি রিয়াজদ্দিনকে বিন্দুমাত্র স্পর্শ করে না। তার চোখেমুখে আলোর দিশা। খুশির উচ্ছ্বাসে পুনরায় বাবার পা ছুঁয়ে কদমবুসি করে, আল্হামদুলিল্লাহ, হককতা বুলুছ আব্বা। আমি জানতাম হকমারা লোক তুমি না, জমিডা আমাকিই দিবা। আল্লা তুমার হায়াৎ দারাজ করুক।
            ঘোমটার আড়াল থেকে ভেসে আসে ছোট বউমার রুঢ় কণ্ঠস্বর, এইডি আব্বা অন্যায়! এই বয়াসি এরাম একখান হারামির মতোন কাজ কত্তি পাল্লি, তুমার তো দেকছি গোরেউ জাগা হবে না!
         মইজদ্দিন মণ্ডল বিচলিত না হয়ে দাঁড়িতে হাত বুলাতে বুলাতে জিজ্ঞেস করে, কুনডার কতা বুলছু গো মা? 
 উত্তর দিতে গিয়ে ছোট বউ এর গলা ভারী হয়ে আসে, তুমার ছোট ছাওয়াল পাগল-ছাগল মানুষ। জমিডার দিক চোখ করি তাকি ছিলু। আহা, জমিডা দিলি চড়া দামে বেচতি পাত্তাম। 
 মইজদ্দিন মণ্ডলের মনে খানিকটা হতাশার সুর, উর লাগি তো য্যাতো চিন্তারে মা! 
 - ক্যান আব্বা, চিন্তার আবার ক হলু?
  - ক্যান আবার, ও মলি তুমি তো নিকি করবা! তকুন ছেলিমেয়িগুনির ক হাল হবে, উগেরে কিডা দেখপে?
 ছেলেমেয়ের জন্য চিন্তা হলেও তাঁর নিজের জন্য বিশেষ কোন চিন্তা নেই। মেজাজ ভালো থাকলে সুর করে দোয়া-দরুদ আওড়ায়। পথচলতি মানুষের সাথে টুকটাক ভাব বিনিময় হয়। পুরানো দিনের গল্পে হারিয়ে যায়। বিশেষ বিশেষ দিনে তার আঙিনায় উপচেপড়া ভিড়, মেয়ে-জামাই, নাতি-নাতনিদের পদচারণায় মুখরিত। দুর্বল মুহূর্তে বাবার সান্নিধ্যে মেয়েগুলো কান্নাকাটি করে। আর ঐ কান্নার সাথে বেরিয়ে আসে তাদের ক্ষোভ-আক্ষেপ, অভাব-অভিযোগ। মণ্ডল অসহায় ভঙ্গিতে মেয়েদের জিজ্ঞেস করে, ওমা, তুরা এরাম করি কাঁনচি ক্যান,তোগের আবার ক হলু? নাকি কান্নার ফাঁকে-ফাঁকে মেয়েরা উত্তর দেয়, মার লাগি কাঁনচি; মা থাকলি কি আর আমাগের ভাগ্যু এরাম মন্দ হতু? যার মা নি দুনিয়ায় তার কেউ নি। ভিড় কমলে বড় মেয়েটা বাবার কাছে গোপনে বায়না ধরে, এট্টা কতা আব্বা, আমা ছকিনার বি’র বয়াস তো পিরাই হয় হয়, দুদিন পরই শউর বাড়ি চলি যাবে। তা তুমার যা অবস্থা, আল্লা নিলি কতক্ষুন তাই বুলতিছিলাম..... 
         মইজদ্দিন মণ্ডল কথার অর্থ বুঝতে পারে না মেয়ের মুখের পানে কৌতূহলী দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে। ফুলঝরি তখন এক নিঃশ্বাসে নিজের আবেদন পেশ করে, ছকিনার খুব শখ, তুমার দিয়া একখান ঘড়ি পরবে। হাজার হোক নানার স্মৃতি, তুমি মরি গেলি চায়ি চায়ি দেখপে আর কাঁনবে। 
   মইজদ্দিন দরদভরা দৃষ্টিতে নাতনির পানে তাকায়। কিন্তু নাতনির চোখ তখন অন্যপথে, হয়তো লজ্জা আড়াল করতে মেয়েটি ব্যতিব্যস্ত।
    এক টুকরো জমি নিয়ে ঘটনার পর ঘটনা, শুরু হয় নানা প্রসঙ্গের অবতারণা। মণ্ডল পরিবারের আঙিনায় অশান্তির কালো মেঘ ড়াউড়ি করে। মেজ আর ছোট মসজিদমুখী হয় না নামায কালামও ছেড়ে দিয়েছে। সারাক্ষণ ক সব গোপন শলা পরামর্শ করে। আজ পর্যন্ত এ বাড়িতে খুন-খারাবি হয়নি। কিন্তু এবার কি সেটাই হয়? মইজদ্দিন মণ্ডল আনমনে মাথা ঝাঁকায়। বড়ই চিন্তার বিষয়। বাতাসের বুকে কান পাতলেই আওয়াজ শোনা যায়, অন্দর মহলে ঝড় বইছে। বউদের মধ্যে স্পষ্ট বিভাজনের ইঙ্গিত। কেউ কাউকে ছেড়ে কথা বলেনা। দুদিন পর হয়তো পুকুরঘাট পর্যন্ত গড়াবে। উড়ো সংবাদ মুখে করে রতন ছুটে আসে। তার সারামুখে আত্কের জলছাপ, সব্বনাশ দাদা , জব্বর একখান খবর!
  - নতন করি আবার ক খবর আনলিরে রতন? 
 হাঁফাতে-হাঁফাতে রতন বলে, দড়ি হাতে করি মাজি চাচা আর চাচি আমগাছে বসি আছে যে! রতনের কথাটা মণ্ডল ঠিকঠাক বিশ্বাস করতে পারে না। মনে হয় ছেলেটি তাকে মিথ্যে বলছে। তাই রসিকতা করে বলে, ও, তাই নাকি? তা উরা মাগি-মিনষি কি ঝোলোই খাবে! রতন তার কথার গুরুত্ব বোঝাতে মাথার দিব্যি দেয়, না না, ঝোলোই খাবে না, উত্তরের জমিডা না দিলি নাকি আত্মহত্যা করবে। খুবই ভয়ানক সংবাদ। মণ্ডল আর শুয়ে থাকতে পারে না, পিঠ সোজা করে বিছানার ওপর উঠে বসে। হৃদয়ের গভীরতম প্রদেশে যেন ভূমিকম্পন অনুভূত হয়। বুক চাপড়াতে চাপড়াতে বাগানের দিকে ছুটে যায়।
                                                  তিন
                 জীবনের সরল সমীকরণ একটু একটু করে জটিল হতে শুরু করে। নিজ হাতে গড়া সংসারে মইজদ্দিন আজ নিজেই পরবাসী। কোথাও কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। কেবল ভাঙনের সুর। তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে যেদিন তার যৌথ পরিবার ভেঙে গেল, যেদিন একটা চুলার পাশে আরো কয়েকটি চুলা নির্মিত হলো সেদিন খুব কষ্ট পেয়েছিল। দিনকয়েক চোখের পানি ধরে রাখতে পারেনি। খুঁটিতে হেলান দিয়ে নীরবে চোখের জল ঝরিয়েছে।
          হাসিখুশি ভরা মানুষটার মধ্যে রাজ্যের বিষণ্ণতা। সারাক্ষণ চুপচাপ কারো সাথে কথা নেই। নিজের মধ্যেই নিজেকে আড়াল করার চেষ্টা করে। অথচ বেচারা তখনো জানতো না তার জন্য আরো বড় আঘাত ওত পেতে বসে আছে। অবশ্য কিছুদিন থেকেই বিষয়টি নিয়ে কানাঘু চলছিল, উত্তরের মাঠে নাকি আর চাষাবাদ হবে না, সেখানে মিল ফ্যাক্টিট্রি গড়ে উঠবে।
                  হুট করে একদল সাদা চামড়ার মানুষ একদিন ভুবনডাঙার মাটিতে উপস্থিত হয়। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে তারা জমিনের মাপজোঁ করে মাটি পরিক্ষা করে বিচিত্র সব চিত্র আঁকে। ঐ দৃশ্য দেখতে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে গ্রামের নানান শ্রেণীর মানুষ একত্রিত হয়েছিল। তাদের মুখে কোন কথা ছিল না।বোবাদৃষ্টিতে কেবল দেখছিল আর ভাবছিল, এসব ক হতে চলেছে! 
 আধভাঙা বাংলায় লোকগুলো বোঝাতে চেয়েছে, যা কিছু হচ্ছে সব নাকি এলাকার মঙ্গলের জন্য! কারখানা নির্মিত হলে রাতারাতি গ্রামের চেহারা বদলে যাবে। কোন মানুষ কর্মহীন থাকবে না। এখানে চাকরী করে সবাই স্বচ্ছল জীবনের মুখ দেখবে। ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া শিখে মানুষের মতো মানুষ হবে। হারিকেনের টিমটিমে আলোর পরিবর্তে বিজলীবাতির আলোর ঝলকানিতে চোখ নাচবে। বৃদ্ধ মানুষগুলোকে নিয়ে আর চিন্তা করতে হবে না বৃদ্ধাশ্রম গড়ে উঠবে। পায়ের ওপর পা তুলে তারা আমৃত্যু খেতে পারেবে। আরো অনেক অনেক কথা শুনিয়েছিল ,কিন্তু ঐসব কথা কারো মন ভরাতে পারেনি। উপরন্তু  নানামুখী আশ্ঙ্কা দৃশ্যপটে হাজির হয়। মইজদ্দিন মণ্ডল উদ্যোগী হয়ে আশাহত মানুষগুলোকে আশার কথা শুনিয়েছে, ওই মিয়ারা কলি’ই হলু নাকি, জমি কি ছেলির হাতের মুয়া নাকি যে চালি’ই দি দেবো? 
 - না দিলে কি উরা শোনবে? দেইকু ঠিক একদিন দকল করি নেবে!
  - অউরা দকল করবে আর আমরা বসি থাকপো, তাইনা? জীবন দি হলিউ ওই জমি আমরা  বেহাত কোরবু না।
  মইজদ্দিন একা না, সব কৃষকের এক কথা- কিছুতেই তারা জমি হাতছাড়া করবে না। দরকার হলে মাটিতে বুক দিয়ে পড়ে থাকবে শরীরের রক্ত দেবে। 
              অথচ কি আশ্চর্য! জীবন আছে  রক্ত আছে, কিন্তু ঐ জমি আর নেই। বিশ্বায়নের করাল গ্রাসে বিলীন হয়ে গেছে। তৈরি হয়েছে বহুজাতিক কোম্পানীর নাট্যমঞ্চ। হারিয়ে গেছে চিরায়ত সব ঐতিহ্য। যেখানে একদিন পূবালী বাতাসে ফসলের ঢেউ ছিল, ছিল সবুজের বিস্তীর্ণ সমারোহ, সেখানেই আজ ঘিঞ্জি বস্তি আর বাহারি কলকারখানা। মইজদ্দিন মণ্ডল নিজেও বেদখল হয়ে গেছে। শরীরময় অসুখের রাজত্ব। চলাফেরার শক্তি লুপ্তপ্রায় অসুস্থ সজ্জায় মৃত্যুর অপেক্ষারত প্রহরী। আলো চলাচলের ফাঁক গলে খোলা আকাশের পানে তাকিয়ে থাকে। মৃদু আলোয় তখন দৃশ্যমান হয়ে ওঠে দুরন্ত কৈশর, শহর সংলগ্ন উত্তরের মাঠ, সোনাকান্দরের সোনাঝরা বিল, হোগলার ঝোঁপ, কাউনপাখির ডিম- সব যেন থরে থরে সাজানো রয়েছে, ইচ্ছে করলেই ছুঁয়ে দেখতে পারে! 
            রতনের কাধে ভর করে মণ্ডল আরেকবার রাস্তায় নামে। চেনা দৃশ্যগুলোর সাথে নিজেকেমিলিয়ে নিতে চায়। কিন্তু এবার তার অবাক হওয়ার পালা ভাবনার সাথে বাস্তবের
বিস্তর ফারাক। উত্তরের মাঠের কোন অস্তিত্বই আজ আর অবশিষ্ঠ নেই। মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েআছে ইটভাটার চিমনি, প্লাষ্টিকের কারখানা আর বাতাসের ডানায় ডানায় অচেনা ঘ্রাণ। মইজদ্দিন নিজেও বৈদ্যুতিক খুঁটির মতো ঠা দাঁড়িয়ে। বুকের মধ্যে কেমন যেন থরথরানি অনুভূত হয়। হাতপাগুলো অবশ হয়ে আসতে চায়। চিমনীর কালো ধোঁয়ার মধ্যে থেমে যেতে চায় জীবনের সব কোলাহল।




                





  ---------------------------------------------------------------------------

                                                                    ছোটগল্প

                                               নতুন জীবন
                                                                                               অরবিন্দ দত্ত


          এখন আর জেল বলা হয় না। সংশোধনাগার বলা হয়।  সাজাপ্রাপ্ত কয়েদিদের এখানে কিছু কিছু  হাতের  কাজ শেখানো হয়।  যাতে তারা সাজা শেষ করে বাইরে গিয়ে  সুস্থ জীবন-যাপন করতে পারে। এমন কি সংশোধানাগারে থাকাকালীন  কয়েদিরা যাতে  নিজেদেরকে রুচিশীল মানসিকতায় গড়ে তুলতে পারে, তার জন্য টেলিভিশনে বিভিন্ন  পোগ্রাম দেখান হয় এবং  কয়েদিদের দিয়ে বছরের বিশেষ  কোন কোন  দিনে  রীতিমতো  সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও করানো হয়।  এখনতো কোন কোন সুহৃদয় ব্যাক্তি  কয়েদিদের নিয়ে সংশোধানাগারের বাইরেও  বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করে থাকেন। এরকমই এক  সংশোধনাগারে - 
দীপেন সরকার। পিতা- মৃত  দীগেন্দ্র নারায়ণ সরকার।  বয়স – আটচল্লিশ । ঠিকানা - করিমপুর..... এই পর্যন্ত  দেখে  সংশোধনাগারের  জেলার   শ্যামাচরণ  বিশ্বাস  খাতাটা বন্ধ করে  দিয়ে বড়বাবুকে  ডেকে বললেন -  আগামী পরশু আসামী  দীপেন সরকারের  রিলিজ হবে ।    তার ফাইলটা নিয়ে আসুন।   আনছি স্যার, বলে  বড়বাবু ফাইল আনতে চলে গেলেন।
                     এই সংশোধনাগারে তিন বছর আগে শ্যামাচর বিশ্বাস জেলার হিসাবে ট্রান্সফার হয়ে  এসেছিলেন ।  প্রথম দিন রেজিস্টারে  দীপেন সরকারের  নামটা  দেখে তিনি চমকে উঠেছিলেন ।  পরে শ্যামাচরণবাবু  তার কেস-হিস্ট্রি  স্টাডি  করে জেনেছিলেন - এক হত্যাকাণ্ডের জন্য  দীপেন সরকারের   বারো বছরের  সাজা হয়েছে। এই দীপেন কে তিনি বিলক্ষণ চেনেন।  তিনি  লক্ষ করেন,  দীপেন  অন্যসব কয়েদীদের সাথে বিশেষ কথাবার্তা বলে না।  চুপচাপ  থাকে। তার জন্য  নির্দিষ্ট  করা  কাজগুলো সে সময়মত শেষ করে। আর  সংশোধনাগারের  লাইব্রেরীতে গিয়ে  খবরের কাগজ, বই পড়ে। কয়েকবার  শ্যামাচর বিশ্বাস দীপেনের  অতীত সন্মন্ধে  কিছু  জানতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সে খোলসা করে কিছুই বলেনি। শুধু হ্যাঁ-না করে উত্তর দিয়েছিল।   
            এই নিন স্যার দীপেন সরকারের  ফাইল। বড়বাবুর কথায়  শ্যামাচরণ  বিশ্বাসের ভাবনায়  যতি পড়লো। তিনি  বড়বাবুকে বললেন, ফাইলটা রেখে যান। দেখবেন আমাকে যেন কেউ  ডিস্টার্ব না করে।  গত তিন  বছরে তিনি অনেকবার এই ফাইলটা দেখেছেন। আজ শেষবারের মতো ফাইলটা খুলে তাতে মন নিবিষ্ট করলেন।  আগামীকালের মধ্যে সমস্ত কাগজপত্র রেডি করতে হবে।
                  পরেরদিন  সকালে  জেলার শ্যামাচর বিশ্বাস  এক সেন্ট্রিকে দিয়ে দীপেনকে  তার  আফিস ঘরে ডেকে পাঠালেন।  দীপেন  জেলারের ঘরের দরজার কাছে দাঁড়িয়ে বলল, আমি ভেতরে আসতে  পারি,  স্যার?
ভেতর থেকে কণ্ঠস্বর ভেসে এল - আসুন।  দীপেন দরজা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করল।  জেলার  তাঁকে দেখে সামনে রাখা চেয়ারগুলোর  একটাতে বসতে বললেন।  দীপেন চেয়ারে না বসে দাঁড়িয়ে রইল। 
-ক হল, চেয়ারে বসুন!
-না স্যার, কয়েদিদের  অফিসারের সামনে চেয়ারে বসা উচিত নয়।
জেলার শ্যামাচর বিশ্বাস   দীপেনের  দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললেন, ঠিক আছে। তারপর বললেন, আপনার জন্য একটা সুখবর আছে।  আগামীকাল  আপনি এখান থেকে ছাড়া পাচ্ছেন। আপনি নিশ্চয়ই  খবরটা জেনে খুশি হয়েছেন। দীপেন একটু হেসে বলল, -বারো বছর শেষ হয়ে গেল। 
-না, বারো বছর  শেষ হতে  এখনো এক বছর বাকি আছে। আপনার গুড বিহেভিয়ার ও পারফরমেন্স দেখে সরকারের কাছে আপনার নাম সুপারিশ করা হয়েছিল। সরকার তাতে মঞ্জুরি দিয়েছেন।

  -ও, ধন্যবাদ।  এই বলে  দীপেন ঘর থকে বেরোবার উদ্যোগী হতেই শ্যামাচর বিশ্বাস বললেন,  আমার প্রশ্নের সঠিক উত্তরটা এখনো পাইনি।
 -কোন প্রশ্ন? দীপেন বলল।
 -যে প্রশ্ন গত তিন বছরে একাধিকবার আমি আপনাকে করেছি। আজ আবারও করছি – আপনি কি সত্যি আপনার নেতা ভবেশ সেনকে খুন করেছিলেন?
-আপনার এই প্রশ্নের উত্তর আমি আগেই আপনাকে দিয়েছি। আমি ভবেশ সেনকে খুন করেছি এবং তার জন্য আমার  বারো বছর সশ্রম কারাদন্ড হয়েছে। 
-না, এটা সত্যি নয়।
-এটাই সত্যি। এই বলে  দীপেন  চলে যাবার জন্য দরজার দিকে  এগোল। 
-দাঁড়াও  দীপেন,  তোমার সাথে আমার  কিছু কথা আছে! কথাটা শোনামাত্রই দীপেন ঘুরে দাঁড়াল। দেখল  জেলার শ্যামাচরণ বিশ্বাস  তার চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়েছে।  

 -আমাকে চিনতে পারছোনা দীপেন?  আমি  মাস্টারমশাই  অন্নদাচরণ  বিশ্বাসের  ছেলে । তোমার শ্যামাদা! 
 কথাটা শুনে  দীপেন অবাক হলনা ।  সে শুধু বলল ,প্রথম দিন দেখেই  আমি তোমাকে চিনতে পেরেছিলাম শ্যামাদা । শ্যামাচরণবাবু  দীপেনকে একটা  চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে নিজে ওর   মুখোমুখি একটা চেয়ারে বসে  বলল -  দীপেন, ভবেশ সেনকে  সত্যিই তুমি খুন করেছিলে?
শ্যামাচরবাবুর প্রশ্নের  উত্তর   না দিয়ে  দীপেন বলল, সুজাতা কেমন আছে,  শ্যামাদা ? কোথায় আছে? 
-সুজাতা ভালো আছে এবং আমার  সাথে আমার কোয়াটারে থাকে ।
-আর মাস্টারমশাই কেমন আছেন?
-বাবা, তোমার জেলে যাবার  বছর দুই পরেই মারা গেছেন।  

-মাস্টারমশাই আর নেই! দীপেন তার মাস্টারমশাইয়ের উদ্দেশ্যে কপালে  দু’হাত ঠেকিয়ে প্রণাম করলো। শ্যামাচরবাবু বললেন - বাবা  প্রায়শই বলতেন, আমার সকল ছাত্রদের মধ্যে দীপেন সত্যিই মানুষ হয়েছে। মানুষের  প্রতি দরদ, ভালোবাসা ওকে অনেক দূর  পর্যন্ত নিয়ে যাবে। ওর জন্য আমার খুব গর্ব হয়। 
 আমিতো চাকুরী সূত্রে বাইরে থাকতাম । যখন ঘটনাটা শুনলাম, আমি বিশ্বাস করিনি।  সুজাতাকে বললাম– ‘তোর কি  মন হয়, দীপেন খুনি?’  সে কোন উত্তর না দিয়ে মাথা নিচু করে  পাশের  ঘরে চলে গিয়েছিল। কিন্তু এখনো আমার বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় যে, তুমি ভবেশ সেনকে খুন করেছো।
দীপেন  বলল- আমি এখন আসি শ্যমাদা।
শ্যামাচরবাবু একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন – ঠিক আছে। তুমি এসো দীপেন। তোমাকে শুধু শুধু আর আটকে রাখবো  না। একটা কথা  আগামীকাল সকাল দশটায় তোমার রিলিজ হবে। 

 এরপর দীপেন শ্যামার কাছথেকে বিদায় নিয়ে নিজের  সেলে চলে এলো।
             আজ আর দীপেনের কিছুই ভালো লাগছে না। এতোগুলো  বছর যাদের সাথে কাটল, এক লহমায় তাদের সাথে সমস্তরকম সম্পর্ক ছিন্ন করে আগামীকাল এখান থেকে চলে যেতে হবে।  প্রথম প্রথম অসুবিধে হলেও, ধীরে ধীরে এই  সংশোধনাগারের  নতুন নিয়মের সাথে সে নিজেকে মানিয়ে নিয়েছিল। জেলারকে বলে সে  এখানকার  নিরক্ষর  কয়েদীদের স্বাক্ষর করার দায়িত্বটা নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিল ।  দেখতে দেখতে ওইসব কয়েদীদের সাথে দীপেনের কোথাও যেন একটা প্রীতির সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। ‘মন যেতে নাহি চায়’,তবু  যেতে হবে। এটাই বাস্তব। আবার সুজাতার সাথে দেখা করবার জন্যও দীপেনের মনটা ভীষণরকম  ছটফট করছিল।  সুজাতা যে শ্যামাদাকে  তার ব্যাপারটা নিয়ে কিছুই বলে নি তা শ্যামাদার  কথাতে  স্পষ্ট বোঝা গেল। কারণ, সুজাতা যদি শ্যামাদাকে  সব বলে দিত, তাহলে  সে  ভবেশ সেনের প্রকৃত খুনি কে তা জানবার জন্য এতো পীড়াপীড়ি করতো না।  সুজাতা তার কথা রেখেছে, এটা ভেবে দীপেন মনেমনে তাকে ধন্যবাদ জানালো।
               এখন রাত সাড়ে ন’টা কি দশটা হবে । সমস্ত  সংশোধনাগারটা আজ বেশি  নিঝুম, নিঃস্তব্ধ মনে হচ্ছে দীপেনের কাছে। অথচ  প্রতিদিনইতো  রাতে একটা সময়ের পর   পুরো সংশোধনাগার  এরকম  নিঝুম ও নিঃস্তব্ধ  হয়ে যায় ।  শুধু থেকে থেকে পাহারাওয়ালাদের   বাঁশির শব্ধ  এই নিঝুম রাতের  নিস্তব্ধতাটাকে  খান খান করে ভেঙে  দিয়ে বলে – জাগতে রহো...।  আগামীকালের সূর্যোদয়ের  প্রতীক্ষায়  আজ দীপেনের  চোখে ঘুম নেই ।  ও জেগে রইল। দশ বছর আগের সেই ফেলে আসা  ঘটনার স্মৃতির পাতাগুলো দীপেনের চোখের সামনে একে একে খুলেতে লাগল - 
সেবার বিধানসভা নির্বাচনে আমাদের পার্টি সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে,  করিমপুর  থেকে  মাস্টারমশাই  পার্টির  হয়ে ভোটে   দাঁড়াবেন।  ভবেশ সেনকে যে পার্টি আর  নমিনেশান দেবে না, সেটা আগেই ঠিক হয়ে গিয়েছিল।  কারণ, ভবেশ সেনের  বিরুদ্ধে দুর্নীতি সহ  অনেক অপকর্মের আভিযোগ পার্টির কাছে জমা পড়েছিল।  অনুসন্ধানের পর সেই অভিযোগুলির  সত্যতাও প্রমাণিত হয়েছিল। তাই পার্টির এই সিদ্ধান্ত। মাস্টারমশাই সরাসরি আমাদের পার্টিটা না করলেও, উনি সমর্থক ছিলেন। একজন আদর্শ শিক্ষক  হিসাবে  এলাকায় ওঁর সুনামও যথেষ্ট ছিল।  পার্টির এই সিদ্ধান্তে সবচেয়ে বেশি খুশী হয়েছিলাম আমি।  সুখবরটা  তাঁকে জানাতেই তিনি  বললেন – দীপেন, তুমি আর তোমার বন্ধুরা যখন আছো তখন আমি এই গুরুদায়িত্বটা অবশ্যই বহন করতে পারবো।  এর কিছুদিন পড়ে মাস্টারমশাই একদিন আমাকে ডেকে পাঠালেন। গিয়ে দেখি, উনি তাঁর প্রিয় ইজিচেয়ারটায়  চোখ বুজে আধশোয়া  অবস্থায় আছেন আর  সুজাতা মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। আমি সুজাতার দিকে তাকিয়ে বললাম, মাস্টারমশাইয়ের শরীর খারাপ নাকি?  আমার স্বর শুনতে পেয়ে বললেন, দীপেন এসেছো। শোন দীপেন, আমি ঠিক করেছি ভোটে দাঁড়াবো না।  ওর মুখ থেকে কথাটা শুনে  মনে মনে  আশ্চর্য হলাম। সুজাতার দিকে তাকাতেই দেখি সে ও মুখ নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। আমি বললাম, কেন মাস্টারমশাই ক হয়েছে? 

- দীপেন, ছাত্রাবস্থা থেকে যে রাজনীতির স্বপ্ন আমি দেখে এসেছি, সেই রাজনীতির যে এমন  ঘৃণ্য, হিংস্র রূপ হয়েছে তা আমি ভাবতেই পারিনি। আজ বাজারে ভবেশ সেনের সাথে  আমার দেখা হয়েছিল। আমাকে বলল,মাস্টারমশাই আপনি একজন সৎ ও শ্রদ্ধেয় ব্যাক্তি।  এই করিমপুরের সবাই আপনাকে সন্মান করে। কেন এই শেষ বয়সে শুধু শুধু নিজের  মান-সন্মান নিয়ে টানাটানি করছেন। বুঝতে না পেরে  আমি  জিজ্ঞেস করলাম, তুমি ক বলছো ভবেশ? -দেখুন মাস্টারমশাই আপনাকে  সোজাসুজি একটা কথা বলি, আপনি ভোটে দাঁড়াবেন না। তাতে আপনার ক্ষতি হতে পারে। আপনি বিচক্ষণ মানুষ। বাকিটা বুঝে নেবেন।  এখন আমি আসি। আর একটা কথা, আপনি যে ভোটে দাঁড়াবেন না, সেটা কালকের মধ্যে পার্টি সেক্রেটারীকে জানিয়ে দেবেন। আমি আপনার  ক্ষতি বা সম্মানহানী কোনটাই চাই না- এই বলে ভবেশ সেন চলে গেলেন।  আমি মাস্টারমশাইকে বললাম, আপনি  পার্টি সেক্রেটারীকে আগেই কিছু বলবেন না। আমি সেক্রেটারীর সাথে কথা বলবো। মাস্টারমশাইয়ের বাড়ি থেকে বেড়িয়ে  আমি ভাবছিলাম, ভবেশ সেন যে  ধরনের  মানুষ, তার পক্ষে  যেকোন নীচ কাজ করা অসম্ভব নয়।  প্রয়োজনে সে এমন নীচে নামতে পারে, যেখানে  সাধারণত কোন মানুষ নামতে চাইবে না।  কিন্তু  ভবেশ সেন  যে আমার হৃদয়ে  আঘাত করবে তা আমিও স্বপ্নে ভাবতে পারিনি।  সেদনি  দুপুরবেলায় মাস্টারমশাই হন্তদন্ত হয়ে আমাদের পার্টি আফিসে  এলেন। আমাকে দেখতে পেয়েই উনি  আমার হাত ধরে টানতে  টানতে আফিসের বাইরে নিয়ে এসে বললেন – দিপেন, আমার  সর্বনাশ হয়ে গেছে। সুজাতা আজ কলেজ থেকে ফিরছিল। ভবেশ সেনের লোকেরা ওকে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে গেছে। একজন এসে এইমাত্র খবরটা আমাকে দিল। আমি খবরটা পয়েই তোমার কাছে ছুটে এসেছি। কথাটা শোনার সঙ্গে সঙ্গে আমার মাথায় রক্ত  উঠে গেল। আমি মাস্টারমশাইকে বললাম – আপনি বাড়ি যান। আমি জানি ভবেশ সেন সুজাতাকে কোথায় নিয়ে গেছে। ভাববেন না, যেভাবেই হোক ওকে আমি ফিরিয়ে আনবো।   
-দীপেন আমিও তোমার সাথে যাব। আমি ভবেশকে বুঝিয়ে বলবো,  আমি ভোটে দাঁড়াবো না।  সেটা পার্টিকে আমি  আজই জানিয়ে দেব। ও যেন সুজাতার কোন ক্ষতি না করে। আগত্যা আমি  মাস্টারমশাইকে আমার সাইকেলের  সামনে বসিয়ে  নিয়ে রওনা দিলাম। ভবেশ সেনের সমস্ত কুকর্মের জায়গাগুলোর কথা আমি জানতাম। তাই সে আমাকে ঘাটাতে সাহস পেতো না। কিন্তু আজ ভবেশ সেন আমার হৃদয় বিদীর্ণ করে দিয়েছে। এর যা প্রাপ্য তা আজই ওকে পেতে হবে ।
           করিমপুর থেকে প্রায় আড়াই কিলোমিটার দূরে  ভবেশ সেনের আর একটা বাড়ি আছে। এই  বাড়িটাকে সে ভোগ-বিলাসের  কাজে লাগায়।  ভবেশ সেন এখানে একাই আসে।  সাইকেলটা বাড়ির গেটের কাছে দাঁড় করিয়ে রেখে আমি আর মাস্টারমশাই  ভেতরে ঢুকলাম। দেখি ঘরের দজা ভেতর থেকে বন্ধ। আমি দরজার  কড়াদুটো ধরে সজোরে  টান দিতেই দরজা  খুলে গেল। বোধহয় তাড়াহুড়োয় দরজা ঠিকমত লাগাতে পারেনি ভবেশ সেন।  মাস্টারমশাইকে এই ঘরে অপেক্ষা করতে বলে আমি সোজা  ভেতরের  ঘরটায়  গিয়ে যা দেখলাম তাতে   আমি বাকরুদ্ধ  হয়ে  গেলাম। দেখি রক্তাক্ত  ভবেশ সেন বিছানায় পড়ে রয়েছে, আর  বিবস্ত্রা সুজাতা একটা রক্ত মাখা পিতলের ফুলদানি হাতে, দেওয়াল ঘেঁসে দাঁড়িয়ে রীতিমত  কাঁপছে। আমি  তাড়াতাড়ি  ফুলদানিটা ওর  হাত থেকে  নিয়ে বিছানার ওপর  ছুঁড়ে ফেললাম। পরনের শাড়িটা দিয়ে সুজাতাকে কোনমতে জড়িয়ে  মাস্টারমশাইয়ের কাছে নিয়ে এলাম। ওনাকে শুধু বললাম ভবেশ সেন মারা গেছে। এখান থেকে তাড়াতাড়ি চলুন।
          লোহার গারদে  একটা শব্দ হতে দীপেনের  ঘুম ভেঙে গেল । তাকিয়ে দেখে গারদের ওপাশে  জেলার  শ্যামাচর বিশ্বাস  দাঁড়িয়ে  আছে । হাতে একটা মুখ বন্ধকরা খাম । খামটা দীপেনের  দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললেন, এটা সুজাতা  পাঠিয়েছে । বাবা মারা যাবার কিছুদিন আগে এটা সুজাতার হাতে  দিয়ে বলেছিলেন, কোনদিন যদি দীপেনের সাথে   দেখা হয়,  তাকে এটা দিয়ে  দিবি। শ্যামাচর বিশ্বাসের  হাত থেকে খামটা নিয়ে দীপেন তার ভেতর থেকে একটুকরো ভাঁজ করা  কাগজ  বের করে ।  দেখে তাকেই উদ্দেশ্য করে লেখা  মাস্টারমশাইয়ের একটা চিঠি । সে চিঠিটা পড়তে লাগল –

সুপ্রিয় দীপেন,
              আমার বিশ্বাস একদিন  নিশ্চয়ই  এই চিঠি তোমার হাতে  পৌঁছাবে । সেই আশায়  আমার এই চিঠির অবতারণা। সেদিন   আমি  স্বার্থপর হয়ে গিয়েছিলাম । ‘গুরুদক্ষিণা’-র মোড়কে সুজাতার অপরাধটা আমি তোমার কাঁধে সপে দিয়ে তোমাকে বারো বছরের জন্য কারাবাসে যেতে বাধ্য করেছিলাম । জীবনে প্রথম  সেই দিন  এক আদর্শ শিক্ষকের  সত্তকে এক পিতার স্বার্থপরতা হারিয়ে দিয়েছিল । যা কখনই  কাম্য ছিল না ।  আজ আমার বিবেকের কাছে আমিও একজন অপরাধী হয়ে গেছি। আর এই অপরাধবোধ, বীভৎস একটা  মারণব্যাধিরূপে আমাকে  তিল তিল করে শেষ করে  দিচ্ছে । যে অপরাধ আমি করেছি, তাতে এটা আমার প্রাপ্য ।  যদি সম্ভব হয়, আমাকে ক্ষমা  করো ।
                                                                             তোমার হতভাগ্য শিক্ষক
                                                                                   অন্নদাচরণ বিশ্বাস  
                                  
       দীপেন  চিঠিটা  একবার নয়,  বার বার পড়লো। মাস্টারমশাইয়ের উদ্দেশ্যে মনে মনে বলল,  ‘না মাস্টারমশাই  সেদিন আমি আপনাকে যা  দিয়েছিলাম, তা শুধুমাত্র একজন  ছাত্রের  গুরুদক্ষিণা ছিল না ।  ছিল আমার  প্রতি সুজাতার ভালবাসার প্রতিদান।  আপনি কোন অপরাধ করেননি’।
        বারো বছর আগে দীপেন সুজাতার প্রতি যে  ভালবাসার আকর্ষণ অনুভব করত, আজও সেই একই  আকর্ষণে সে  সুজাতার কাছে যেতে চাইছে। ওকে কাছে পেতে চাইছে। এ  সবই তো দীপেন-সুজাতার একান্ত নিজস্ব ব্যাপার। এগুলো নিয়ে  ভবিষ্যতে  হয়তো তারা অনেক বিনিদ্র রজনী কাটিয়ে  দেবে । তাই দীপেন চিঠিটা  ছিঁড়ে  ফেলল।   সংশোধনাগারের  দেওয়াল ঘড়িটা  ঢং-ঢং করে জানিয়ে দিল সকাল ন’টা বাজে।  দীপেনের এই সংশোধনাগারকে বিদায় জানাবার সময় হয়েছে। সে অতীতের  জীবনগাঁথা  ভুলে নতুন জীবনের  প্রস্তুতি শুরুকরে দিল। আর এই জীবন যুদ্ধে সুজাতাই হবে দীপেনের রথের সারথি।
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
কবি ও লেখক পরিচিতিঃ-  
অমিতাভ দাশঃ
 জন্ম কলকাতায়; ১৩ই মার্চ, ১৯৬৩। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে বি-টেক শেষ করে ১৯৮৪ সালে চলে যান আমেরিকা, সেখানে কম্পিউটার ইন্জিনীয়ারিংএ MSPhD করেন। কর্মজীবন দেশ-বিদেশের নামী গবেষণাগারে, Human Computer Interrractions এ গবেষণা ছিল পেশা, নেশা আর আবিষ্কারের উৎস। পৃথিবীর নানান জায়গায় ভ্রমণ, বসবাস। মনের রসদের ঝুলি ভরতে থাকে আর ফটোগ্রাফি অন্যতম নেশা হয়ে যায়। ৯৯'সালে দেশে ফিরে আস্তানা গাড়া ব্যাঙ্গালোরে।
       ২০১০ সাল থেকে চাকরিবাকরি ছেড়ে শুরু Second Life -- নানান সব ইচ্ছেঘোড়ার তদারকি, পড়াশুনা, ছবি তোলা ও আঁকা, ইচ্ছেমতো ঘুরে বেড়ান, আর নিজস্ব গবেষণা Human Consciousness ও Spirituality এর ওপর। কবিতা পড়তেন প্রচুর যাদবপুরে থাকতে! কবিতা লেখা শুরু ২০১১ এর মাঝামাঝি Facebook এর নানা গ্রুপে।

                 অমিতাভ কবিতা লেখেন মূলত নিজেকে খোঁজা ও প্রকাশের তাগিদে, আর চেতনার কিছু আলোদ্বীপ নির্মাণ অভিলাষে....
              প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ: একমনা রোদ / পাঠক [Feb, 2012, Feb, 2013 2nd Ed.] আনমনা রঙ /গাংচিল [Feb, 2013] তিসতা / ধানসিড়িটির তীরে [May, 2013]

Facebook:
Amitav.das.63 Email: amitavd@yahoo.com

---------------------------------------------------------------------------------------------
 সুবীর সরকারঃজন্ম ৩রা জানুয়ারী,১৯৭০ । কবি,লোকসংস্কৃতি ও নিম্নবর্গের ইতিহাসে আগ্রহী।কবিতার পাপাশি গদ্যের বইও রয়েছে । ভালোবাসেন কবিতাগ্রাম...হাটগঞ্জে তুমুল ঘুরে বেড়াতে...

         তাঁর  কবিতার বই  বন্দুকনামা,টাইগার প্রজেক্ট ,শোক শ্লোকের দিনলিপি,বিকেলতাঁবু,নির্বাচিত কবিতা  এবং গদ্যের বই শোলকগাঁথা , লোকপুরাণ,এপিটা
-------------------------------------------------------------------------------------------------------
 
মাসুদার  রহমানঃ জন্ম: ১ সেপ্টেম্বর ১৯৭০। জন্মস্থান: জয়পুরহাট, বাংলাদেশ । প্রকাশিত গ্রন্থ সংখ্যা: সাত । প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ: হাটের কবিতা , উত্তরবঙ্গ সিরিজ, সমুদ্র, মাসুদার রহমানের কবিতা  । এবছর (২০১৩ সালে) বেরিয়েছে সমুদ্র নামক কবিতা গ্রন্থটি কলকাতার কবিতাপাক্ষিক থেকে ।
সন্মাননা ও পুরুষ্কার: বাংলা একাডেমী তরুণ লেখক প্রকল্প পুরুষ্কার-১৯৯৭ ।
-----------------------------------------------------------------------------------------------------

 পিন্টু রহমান : কুমার নদের পাড় ঘেষে ঘরবসতি । 
১৩ অক্টোবর কুষ্টিয়া জেলার বাজিতপুর গ্রামে জন্ম । বস্তুত গল্পের মৃৎশিল্পী । প্রকাশিত গল্পগ্রন্থ  পাললিক ঘ্রাণ । লিটলম্যাগ আন্দোলনের সক্রিয় কর্মি হিসেবে সম্পাদনা করেন সাহিত্য বিষয়ক ছোটকাগজ  জয়ত্রী  । মোবাইল নং : 01714-730 720    e-mail:pintupothik@yahoo.com
-------------------------------------------------------------------------------------------------------

শাহিন লতিফঃনজরুলের স্মৃতি বিজড়িত ত্রিশালের 
কাজীর শিমলা, দুলাল বাড়ি গ্রামে ২৬ নভেম্বর ১৯৭৬
 শাহিন লতিফ এর জন্ম । মা সাইয়েদা বেগম আর 
বাবা ছাইফুল ইসলাম ।
নিজ গ্রামের সুতিয়া ছাড়াও নরসুন্দা, ব্রহ্মপুত্রের মায়াবী সাহচর্যে বেড়ে ওঠা শাহিন লতিফ স্বভাবে অন্তর্মুখী । শৈশব থেকেই কবিতা চর্চার পাশাপাশি সাহিত্যের কাগজ প্রকাশের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন । শিল্প ও সাহিত্য বিষয়ক ছোট কাগজ ‘মেঘ’ তারই অব্যাহত অভিনিবেশের ফল । ব্যবস্থাপনা বিষয়ে স্নাতক(সম্মান) ও স্নাতকোত্তর কবি শিক্ষকতার মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করলেও বর্তমানে একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে কর্মরত । ‘মেঘ’ সম্পাদনার জন্য তিনি পেয়েছেন হাসান হাফিজুর রহমান সাহিত্য সাময়িকী পুরস্কার ২০১১। প্রকাশিত গ্রন্থ : কবিতা : কুয়াশামগ্ন যাত্রী ( ফেব্রুয়ারি ২০০৯ )। ভাষান্তর : খরগোশ ও অজগর , লেখক : ফাজিল ইসকান্দার ( ফেব্রুয়ারি ২০১০ ), উপন্যাস শিশুতোষ গল্প : রিয়া ( ২০১৩ ) ।
-----------------------------------------------------------------------------------------------


 অরবিন্দ দত্তঃপিতাঃ স্বরগীয় অনাদি কুমার দত্ত 
ঠিকানাঃ মৃণালিনী কুটীর

৩০৫, শ্রীমা সরণী বাই লেন, বাবুপাড়া, শিলিগুড়ি - ৪জন্মঃ ৬ই জানুয়ারী, ১৯৬৫, বামনডাঙ্গা চা-বাগান, জলপাইগুড়ি। পেশাঃ চাকুরী, শিলিগুড়ি মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন।
শিক্ষাঃ মাধ্যমিক, ১৯৮৩ ।

--------------------------------------------------------------------------------------------------
আরিফুল ইসলামঃজামালপুর জেলার ইসলামপুর
 উপজেলার কিংজাল্লা নামক এক অজপাড়াগাঁয়ে ১৯৮২
 সালে এই কবিব জন্ম ।  কবির শৈশব ছিল ভীষ আঁকাবাঁকা মেঠোপথের মত।  দুই বাংলা খ্যাত লিটলম্যারচয়িতা  সম্পাদনা করেন তিনি । 
তাঁর কাব্যগ্রন্থ: কালো মখোশ,একাকী জীবন,সমুদ্র পাড়ের মেয়ে,স্বরসতী,জীবনের আলাপন এবং উপন্যাস : জয়িতা,নিমাই বাবু,আমি ভিনদেশী,আমি হিন্দু ধর্মে বিশ্বাসী,বউ এর ডাক
---------------------------------------------------------------------------------------------------
অমিত কুমার বিশ্বাসঃ১৯৮০-র ৫-ই 
জানুয়ারী সীমান্ত শহর বনগাঁয় জন্ম ।ইংরেজি
সাহিত্যে স্নাতকোত্তর অমিত পেশায় শিক্ষক । 
২০১৪ -এর কলকাতা বইমেলায় 'ধানসিড়ি' [কলকাতা] থেকে প্রকাশিত হতে চলেছে তাঁর প্রথম গল্পগ্রন্থ 'রাত্রীর হৃদয়ে এখন নীল শুঁয়োপোকা' ।


মন্তব্যসমূহ

Unknown বলেছেন…
এই মন্তব্যটি লেখক দ্বারা সরানো হয়েছে।
Unknown বলেছেন…
Dhanyabad Shahin da......apnar mato manus pase thakle amar ei kshudro prochesta ekdin byapok rup dharon korbe asha rakhi...bhalo thakun......bhalo thakuk apnar "MEGH".